বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন (বিএলএফসিএ) অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বন্ড বাজারে অংশগ্রহণ বৃদ্ধির জন্য কর-অব্যাহতি সুবিধার দাবি তুলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও এই প্রস্তাবের সঙ্গে একমত।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিকল্প উৎস থেকে আমানত বা বিনিয়োগযোগ্য তহবিল সংগ্রহের ক্ষেত্রে বন্ড বাজারকে উৎসাহিত করা যায়। এতে দেশের বন্ড বাজারও উন্নত হবে।
সরকার ২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য জিরো কুপন বন্ডে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কর-অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয়। বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে, এই সুবিধা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য আবার বহাল করা যেতে পারে। এ জন্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরামর্শও দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে গত রোববার দেশের ২৯টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীদের বৈঠকে এসব আলোচনা ও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
বৈঠকে দেওয়া তথ্যে জানা যায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২০০২ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের জিরো কুপন বন্ডে বিনিয়োগে কর-সুবিধা দেয়। সে সময় জিরো কুপন বন্ডে বিনিয়োগের ওপর ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয়কে কর-অব্যাহতি দেওয়া হয়। আর ২৫ হাজার টাকার বেশি আয়ের ওপর ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তনে বিধান রাখা হয়।
পরবর্তী সময়ে ২০০৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি নেওয়া নির্দিষ্ট সম্পদের বিপরীতে বা স্পেশাল পারপাস ভেইক্যাল (এসপিভি) জিরো কুপন বন্ড ইস্যুর ক্ষেত্রে সমুদয় মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট বা মূসক) প্রত্যাহার করা হয়। আবার ২০০৭ সালে জিরো কুপন বন্ড থেকে প্রাপ্ত আয়কে সম্পূর্ণ করমুক্ত করা হয়।
কিন্তু ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য জিরো কুপন বন্ডে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কর-অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়।
উল্লেখ্য, এর মধ্যেই ২০০৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ১৭০ কোটি ৫০ লাখ টাকার নির্দিষ্ট সম্পদের বিপরীতে বন্ড ইস্যু করে। আর ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত পাঁচটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ৮৫০ কোটি টাকার জিরো কুপন বন্ড ইস্যু করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিমা কোম্পানি এ ধরনের বন্ডে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে। তবে ব্যক্তি পর্যায়ে এখনো বন্ড ক্রয় আগ্রহের জায়গা তৈরি হয়নি। আবার ২০০৮-০৯ অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের কর-অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহারের ফলে ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মতো প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীও বিশেষ উৎসাহ পাচ্ছে না। এতে সামগ্রিক বন্ডের বাজার বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করে, দেশের পুঁজিবাজার সুসংহত করার ক্ষেত্রে একটি বিকাশমান বন্ড বাজারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এ জন্য বিভিন্ন প্রকার বন্ড ইস্যু করার মাধ্যমে বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সরকার ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের যথাযথ প্রণোদনা দেওয়া ও তদারকি জরুরি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) আনোয়ারুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তলবি (স্বল্প মেয়াদের) আমানত সংগ্রহ করতে পারে না। কিন্তু তাদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রগুলো ব্যাংকের মতোই। তিনি বলেন, ‘এ জন্যই তাদের তহবিল জোগান দিতে বন্ড ইস্যুর ক্ষেত্রে কর-অব্যাহতির সুবিধাটি পুনর্বহাল করা যেতে পারে। তাতে তারল্য চাপের বিষয়টি প্রশমিত হতে পারে।’
মূলত তিন ধরনের জিরো কুপন বন্ড এ ক্ষেত্রে হতে পারে। সাধারণ জিরো কুপন বন্ডের মধ্যে রয়েছে করপোরেট বন্ড। এই বন্ডে একটি নির্দিষ্ট অভিহিত মূল্যের ওপর ডিসকাউন্ট বা ছাড়ের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। বিনিয়োগকারী মেয়াদ শেষে অভিহিত মূল্য পেয়ে যাবেন। ডিসকাউন্ট বা ছাড়কৃত অর্থই তার আয়।
অ্যাসেট ব্যাকড সিকিউরিটিজ বা নির্দিষ্ট সম্পদের বিপরীতে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে পূর্বনির্ধারিত সুদ হারে ছাড়া বন্ডের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা মেয়াদ শেষে এককালীন সুদসহ আসল অংশ পেয়ে যাবেন।
মর্টগেজ ব্যাকড সিকিউরিটিজ বন্ডটি অ্যাসেট ব্যাকড সিকিউরিটিজের অনুরূপ। এ ক্ষেত্রেও প্রতিষ্ঠানটির নির্দিষ্ট সম্পদের বিপরীতে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে পূর্বনির্ধারিত হারে বন্ড ইস্যু করা হয়। তবে এ ক্ষেত্রে গৃহায়ণ খাতে অর্থায়নের জামানতের সম্পদের ভিত্তিতে বন্ডের সম্পদ হিসাব করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে, বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এই তিন ধরনের বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে তাদের তহবিল সংগ্রহ করতে পারে।