ভারতের নির্বাচনে বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং নরেন্দ্র মোদির প্রধানমন্ত্রী হওয়াকে সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা৷ তবে ভারতীয় জনগণের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে মোদিকে পাঠানো হয়েছে অভিনন্দন বার্তাও৷
ভারতের নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশে আগ্রহ আর উত্তেজনার কমতি নেই৷ বিশেষ করে বাংলাদেশের ভূখণ্ড, হিন্দু সম্প্রদায় এবং কথিত বহিরাগতদের নিয়ে নরেন্দ্র মোদির বক্তব্য বাংলাদেশে আলোচনা এবং সমালোচনার ঝড় তুলেছে৷
এরপরও ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিজেপি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পথে এবং মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে চলেছেন – এ খবর পাওয়ার পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজেপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) এবং দলের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন৷
নির্বাচনে বিজেপির বিজয়ে দেশটির ভাবি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া৷ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকেই খালেদা জিয়ার এই অভিনন্দন বার্তা ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমে পাঠানো হয়৷
দলীয় একটি সূত্র জানায়, বিজেপির জয় নিশ্চিত বুঝতে পেরে পুরো ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার আগেই বিএনপির চেয়ারপারসনের পক্ষ থেকে মোদিকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে৷
অন্যদিকে, বাংলাদেশের সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি বিজেপি, দলীয় প্রধান রাজনাথ সিং ও ভারতের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানিয়েছে৷ অভিনন্দন বার্তায় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ ও মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ বাবলু বলেন, বিশ্বের অন্যতম প্রধান গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের জনগণ বারে বারে প্রমাণ করে এসেছে যে, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে তারা নিবেদিত এবং অদ্বিতীয়৷ সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনগণ গণতান্ত্রিক পন্থায় শান্তিপূর্ণভাবে সরকার পরিবর্তনে তাদের অনন্য ভূমিকার ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছে৷ নতুন সরকারের অধীনে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুপ্রতিম সম্পর্ক আরো জোরদার হবে এবং দুই দেশের মধ্যে। অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধান হবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তারা৷
সাবেক মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, “বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের জনগণ যে রায় দিয়েছে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই হবে৷”
তিনি মনে করেন, নরেন্দ্র মোদি নির্বাচনের সময়ে বাংলাদেশ নিয়ে যে সব কথা বলেছেন তা ভোটের রাজনীতি ছাড়া আর কিছুই নয়৷ বাংলাদেশেও এ ধরনের রাজনীতি হয়৷ তাই রাষ্ট্রীয় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং নীতি নির্ধারণে এ সব কথার কোনো প্রতিফলন থাকবে না বলেই তিনি আশা করেন৷
তিনি বলেন, ‘‘ভারতের পররাষ্ট্রনীতি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে একটি ছকে বাধা৷ যে সরকারই আসুক না কেন এর বাইরে যাওয়ার তেমন সুযোগ নেই৷ মোদি সরকারের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হবে বলে আমি মনে করি না৷”
তবুও সরকার গঠন এবং তার পরবর্তী কর্যক্রমের দিকে নজর রাখার কথা বলে তিনি জানান, ‘‘আমরা চাইব নতুন সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান করবে৷”
এছাড়া চূড়ান্ত ফল প্রকাশের অনেক আগে মোদিকে বিএনপির অভিনন্দন প্রসঙ্গে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘বিজেপি এবং বিএনপির আদর্শিক মিল রয়েছে৷ দু’টোই সাম্প্রদায়িক দল৷”
অন্যদিকে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিএনপি বিজেপি এবং মোদিকে অভিনন্দন জানিয়ে ভারতীয় জনগণের গণতান্ত্রিক রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে৷ একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈকি দল এই শিষ্টাচার দেখাবে এটাই স্বাভাবিক৷”
তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি আশা করছে নির্বাচনের সময় নরেন্দ্র মোদি যাই বলুন না কেন সরকার গঠনের পর তিস্তার পানি, সীমান্ত সমস্যাসহ দুই দেশের অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান করবেন৷”
দুদুর কথায়, “বিজেডি সরকার গঠনের পর দুই দেশের সম্পর্কের ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেন তা অবশ্যই আমরা পর্যবেক্ষণে রাখব৷ আমরা চাইব ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে৷”
‘বিজেপি এবং বিএনপির আদর্শিক মিল রয়েছে’ – সুরঞ্জিত সেনগুপ্তর এই কথার জবাবে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী একটু দেরিতে হলেও অভিনন্দন জানিয়েছেন৷ তাহলে আওয়ামী লীগ ও বিজেপির মধ্যেও কি আদর্শিক মিল আছে?” সূত্র: ডিডব্লিউ