মেয়েদের দুই পা ফাঁক করে বসায় নিষেধাজ্ঞা!

মেয়েদের দুই পা ফাঁক করে বসায় নিষেধাজ্ঞা!

motorcy5মেয়েরা দুই পা ফাঁক করে বা আরো সহজ করে বললে দুই পাশে পা দিয়ে মোটর সাইকেলে চড়তে পারবেন না৷ তাদেরকে বসতে হবে এক পাশে পা দিয়ে, যা কিনা বিপজ্জনক৷ কিন্তু তারপরও কেন এই নিষেধাজ্ঞা? বলা হচ্ছে শরিয়া আইনের কথা৷

ইন্দোনেশিয়ার উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের প্রদেশ আচে৷ গত সপ্তাহে সেই প্রদেশে এক নতুন নিয়ম চালু হয়েছে৷ তাহচ্ছে মেয়েরা মোটর সাইকেলে দু’পা ফাঁক করে বসতে পারবেন না৷ তাদেরকে বসতে হবে একদিকে পা দিয়ে৷ এই নিয়ম চালুর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে অধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলো৷ কিন্তু প্রশাসন তাতে কান দিচ্ছে না৷

আচে প্রদেশের লুকসুমাও নগরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা দসনি ইউসার এই বিষয়ে বলেন, ‘‘আমরা এই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছি৷ এখানে এটার বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ নেই৷ আচেতে কোন সমালোচনা শোনা যাচ্ছে না৷”

বসতে হবে, তা সাধারণ মানুষকে জানাতে ইতিমধ্যে উদ্যোগও গ্রহণ করেছেন ইউসার৷ তিনি জানান, লুকসুমাও’য়ে পঞ্চাশটি ব্যানার টাঙানো হয়েছে৷ এছাড়া বিভিন্ন সরকারি অফিসে এবং গ্রামে এই আইনের বিষয়ে লিফলেট বিলানো হয়েছে৷

শহরের মেয়র সুয়াইদি ইয়াহিয়া, যিনি এই আইনের প্রস্তাব করেছিলেন, সাত জানুয়ারি জনসমক্ষে দেওয়া এক ভাষণে বলেছেন, ‘‘নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এই আইন চালু করা হয়নি৷ বরং আচেতে শরিয়া আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এটা করা হয়েছে৷”

মেয়েদের এক পাশে পা দিয়ে বসার পক্ষে আরেকটি যুক্তি দেখেয়েছেন ইয়াহিয়া৷ তাঁর কথা হচ্ছে, মেয়েরা দুই পা ফাঁক করে পেছনে বসলে নাকি মোটর সাইকেলের পুরুষ চালকরা উত্তেজিত হয়৷ তবে মেয়েরা যখন নিজেরা মোটর সাইকেল চালাবেন তখন তাঁরা দু’পা ফাঁক করে সেটিতে বসতে পারবেন৷ তবে এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ইসলামি পোশাক পরতে হবে তাদেরকে, একথাও বলেছেন ইয়াহিয়া৷

এখানে বলা প্রয়োজন, ২০০৯ সালে আচেতে শরিয়া আইনের একটি সংস্করণ চালু করা হয়৷ ইন্দোনেশিয়ার কোন প্রদেশে এই আইন চালুর ঘটনা এই প্রথম৷ সেই থেকে অবশ্য জনসাধারণের নৈতিক দায়িত্ব বিষয়ক বিভিন্ন উপবিধি প্রকাশ করছে প্রদেশটির কর্তৃপক্ষ৷ তবে সমালোচকরা বলছে, শরিয়া আইনের প্রয়োগ বৈষম্যমূলক৷ শুধুমাত্র নারী এবং যুব সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে বিভিন্ন রকম নিয়ম জারি করা হচ্ছে৷ এগুলোর মধ্যে জনসমক্ষে কি রকম আচরণ করতে হবে কিংবা কি ধরনের পোশাক পরতে হবে তাও আছে৷

অনেকে মনে করছেন, ইন্দোনেশিয়ার ভাবাদর্শের সঙ্গে এসব নিয়ম মানানসই নয়৷ বরং এটা এক উল্টো পথে যাত্রা করার মতো ব্যাপার৷ জাকার্তায় অবস্থানরত নারী অ্যাক্টিভিস্ট তুঙ্গাল প্রয়েস্ত্রি ইন্দোনেশিয়ার ইতিহাসের দুই নারী যোদ্ধার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ‘‘ন’কাক ধিয়েন এবং লাকসামানা কেউমালাহায়াতি ঘোড়ায় চড়ে যুদ্ধ করেছিলেন৷ তাঁরা কি তখন ঘোড়ার এক পাশে পা দিয়ে বসেছিলেন? এরকম ভাবাটাও অবান্তর৷”

প্রয়েস্ত্রি বলেন, ‘‘আচিতে শরীয়া আইনের ভিত্তিতে জারি করা প্রতিটি উপবিধিতে নারীর শরীরকে রাজনৈতিক লড়াইয়ে ক্ষেত্রে হিসেবে ধরা হচ্ছে৷ নারী হচ্ছে সহজ লক্ষ্যবস্তু৷ কেননা, যখন অ্যাক্টিভিস্টরা এসবের প্রতিবাদ করবে, তখনই তারা মুসলিম বা শরিয়া বিরোধী হিসেবে বিবেচিত হবে৷”

উল্লেখ্য, মালয়েশিয়াতে শরিয়া আইন চালু থাকলেও সেখানে মেয়েদের পা ফাঁক করে মোটর সাইকেলে বসার ক্ষেত্রে কোন বাধা নেই৷ বরং মেয়েরা একদিকে পা দিয়ে বসাটা সেখানে নিষিদ্ধ৷ একপাশে পা দিয়ে বসায় অনেককে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে সেখানে৷ কেননা, এভাবে বসলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে৷-ডিডব্লিউ

 

আন্তর্জাতিক