স্বপ্ন এখন দেখাই যায়। তবু স্বপ্নের নৌকায় না ভেসে দুই দলই পা রাখতে চাচ্ছে বাস্তবতার মাটিতে। সেমিফাইনাল নিশ্চিত করতে আর একটি মাত্র জয় চাই খুলনা রয়েল বেঙ্গলস ও দুরন্ত রাজশাহীর। তবে সেটি পাওয়ার আগে ‘সেমিফাইনালে উঠে গেছি’ ভাবটাকে সযত্নে দূরে সরিয়ে রাখছে তারা।
বিপিএলের ছয় দলের মধ্যে লিগ পর্বের সেরা চার দল খেলবে ২৮ ফেব্রুয়ারির দুই সেমিফাইনালে। পরদিন সন্ধ্যায় ফাইনালের মঞ্চ রাঙাবে কারা, সেটা ঠিক হয়ে যাবে ওই দিনই। এখন পর্যন্ত সাত ম্যাচে খুলনা রয়েল বেঙ্গলস ও দুরন্ত রাজশাহীর পাঁচটি করে জয়। তবে রান রেটে এগিয়ে থাকায় শীর্ষে খুলনা। সাত ম্যাচে চার জয় নিয়ে এই দুই দলের পরই চিটাগং কিংস। বরিশাল বার্নার্স ও ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস দুই দলেরই পয়েন্ট ৬। তবে বরিশাল ম্যাচ খেলেছে সাতটি, ঢাকা ছয়টি। ছয় ম্যাচের ছয়টিতেই হেরে একেবারে তলানির দল সিলেট রয়্যালস। সেমিফাইনালের দৌড় থেকে বাদই দিয়ে দেওয়া যায় তাদের।
তুলনামূলক ভালো অবস্থানে থাকলেও খুলনা বা রাজশাহী কোনো দলই এখনো সেমিফাইনাল নিশ্চিত ধরে নিতে রাজি নয়। খুলনা রয়েল বেঙ্গলসের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান যেমন গুরুত্ব দিতে চাচ্ছেন কাগজ-কলমের হিসাবটাকেই, ‘অঙ্কের হিসাবে সেমিফাইনাল খেলতে হলে এখনো আমাদের একটা ম্যাচ জিততে হবে। ছয় ম্যাচ জিতলে তবেই নিশ্চিন্ত। তার আগে বলা যাচ্ছে না আমরা সেমিফাইনাল খেলবই।’
দুরন্ত রাজশাহী যতই কাল হাওয়া বদল করতে কক্সবাজারে ঘুরতে যাক, আত্মতৃপ্তির ঝুঁকি সম্পর্কে তারাও খুব সচেতন। দলের ম্যানেজার ফারুক আহমেদ তাই বললেন, ‘আমাদের সেমিফাইনাল হয়তো অনেকটাই নিশ্চিত। তবে কাগজে-কলমে তো আমরা এখনো সেমিফাইনালের দল নই। আর একটা ম্যাচ জিততে হবে।’
সম্ভাবনার দৌড়ে থাকা বাকি তিন দলের মধ্যে চিটাগং কিংস চট্টগ্রামে টানা দুই ম্যাচ হেরে একটু ম্রিয়মাণ হয়ে পড়েছে। তবে তার পরও ঢাকায় পাওয়া চারটি জয় সম্ভাবনা উজ্জ্বল করেই রেখেছে তাদের। পরশু খুলনার কাছে হারার পর কোচ খালেদ মাহমুদ সেই আশার কথাই শোনালেন, ‘বাকি তিন ম্যাচের একটি জিতলেও আমাদের ভালো সম্ভাবনা থাকবে। এদিক দিয়ে পরের ম্যাচটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমাদের আশা সেমিফাইনাল খেলব।’ আশা পূরণে একটা শর্তও দিয়ে রেখেছেন কোচ, ‘চট্টগ্রামে দুটি ম্যাচ হেরে যাওয়ায় একটু সমস্যায় পড়েছি। আমাদের ব্যাটিংটা ভালো হচ্ছে না। পরের ম্যাচগুলোতে ভালো কিছু করতে হলে ব্যাটিংয়ে উন্নতি জরুরি।’
৬ পয়েন্ট করে নিয়ে চিটাগং কিংসের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস ও বরিশাল বার্নার্স। শুরুর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে অবশ্য এখন চিটাগংয়ের চেয়ে ভালো অবস্থানেই থাকার কথা ছিল ঢাকার। সেমিফাইনাল খেলার আশা নিয়েও দলের প্রধান উপদেষ্টা হাবিবুল বাশারের কণ্ঠে সেই আফসোস, ‘প্রথম চার ম্যাচের তিনটিতেই জিতে আমরা খুব ভালো অবস্থানে ছিলাম। কিন্তু পর পর দুই ম্যাচে হেরে আমরা একটু পিছিয়ে গেছি। টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ধারাবাহিকতা ধরে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সেটা রাখতে পারিনি।’ তার পরও বাকি চার ম্যাচ হাবিবুলের আশার পালে হাওয়া দিচ্ছে, ‘দলের স্পিরিট খুবই ভালো। আশা করছি, এখান থেকে আমরা ফিরে আসব এবং সেমিফাইনালে খেলব।’
বরিশাল বার্নার্সের উপদেষ্টা আকরাম খানেরও একই আশা—বাকি তিন ম্যাচে অন্তত দুটি জয় নিয়ে শেষ চারে যাবে তাঁদের দল। তবে খেলোয়াড়দের অধারাবাহিক পারফরম্যান্স তাঁর কপালে ফেলছে চিন্তার ভাঁজ, ‘টি-টোয়েন্টি ম্যাচে কিছুই বলা যায় না। যেকোনো কিছুই হতে পারে এখানে। তবে আমাদের সমস্যা হলো একসঙ্গে সব হচ্ছে না। ভালো রান হলে বোলিং খারাপ হয়। বোলিং ভালো হলে ব্যাটিং খারাপ হয়। পরের ম্যাচগুলোতে সব একসঙ্গে হওয়াটা খুব জরুরি।’ এ ক্ষেত্রে ক্রিস গেইলের অভাবটাই কি অনুভূত হচ্ছে? আকরাম মানলেন না সেটা, ‘গেইল অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ছিল দলের জন্য। তবে এটাও ঠিক, গেইলই সব নয়। ওকে ছাড়াও ভালো খেলার সামর্থ্য রাখে ছেলেরা।’
মাঠের বাইরে ভালো-মন্দের যত আলোচনাই থাকুক, মাঠের বিপিএল এখন পর্যন্ত জমজমাট লড়াইয়ের মঞ্চ। শেষ চারের শেষ লড়াই সেই আগুন তাতিয়ে দিচ্ছে আরও।