জামায়াত-শিবিরের প্রতি আরো কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। দেশের সর্বোচ্চ আদালত এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের তিনটি মামলা ঝুলে থাকায় তাদের বিচারের রায়ের আগে ও পরে সম্ভাব্য সব ধরনের সংঘর্ষ ও নাশকতার ঠেকাতেই এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সরকার।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এরই মধ্যে সরকার বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে শুরু করে দিয়েছে। এসব পদক্ষেপেরই অংশ হিসেবে ইসলামিক এই রাজনৈতিক দলটির সমস্যা সৃষ্টিকারী নেতাদের গ্রেফতার করা শুরু হয়েছে। এই নেতারা প্রতিটি রায়ের পরেই বিভিন্ন সংঘর্ষে ঘটনার সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে জড়িত ছিলেন। এছাড়াও জামায়াতের সক্রিয় কর্মী এবং দলটির ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের ওপরেও কড়া নজরদারি করতে শুরু করেছে সরকার।
বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, জামায়াত অধ্যুষিত ১৫/১৬টি জেলা বাছাই করে ওই জেলাগুলোর জামায়াত নেতাদের গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই জেলাগুলোতে গত বছর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সোমবার চট্টগ্রামের ২১ জন জামায়াত নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমির এবং সাবেক সংসদ সদস্য এএনএম শামসুল ইসলামও আছেন।
চিহ্নিত জেলাগুলোর জামায়াত-শিবির কর্মীদের ওপর অনেক আগে থেকেই চোখ রাখতে শুরু করেছিল সরকার এবং প্রয়োজনে সামনের দিনগুলোতে এই নজরদারি আরো বাড়িয়ে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।
সরকারের নজরদারির জন্য তালিকাভুক্ত জেলাগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম, সাতক্ষীরা, রাজশাহী, কক্সবাজার, কুমিল্লা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, যশোর এবং গাইবান্ধা উল্লেখযোগ্য। এই জেলাগুলোকে জামায়াতের সহিংতার জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এছাড়াও, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নিজেও ওই দলগুলোতে তাদের নেতাকর্মীদের প্রতি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে এবং নাশকতার ঘটনা প্রতিহত করার জন্য মাঠে থাকতে বলে দিয়েছে বলে দলের নেতারা জানিয়েছেন।
এই ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি কেমন তা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, যেকোনো ধরনের আন্দোলনের মুখোমুখি হতে প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে।
তিনি বলেন, “সাঈদীর রায়ের পর যেমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, তেমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না- এমনটা আমরা বলছি না। কিন্তু এই ধরনের পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য যে ধরনের প্রস্তুতি দরকার, সেগুলো আমরা গ্রহণ করছি।”
গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর আদালতের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় দেশজুড়ে জামায়াত যে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল, সেখান থেকে শিক্ষা নিয়েই এবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
ওই রায় প্রকাশের পরবর্তী সাত দিনে দেশজুড়ে ৬৫ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন কয়েকশ। এছাড়াও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ, বিশেষ করে হিন্দুদের বাড়িঘর, উপাসনালয়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল।
সাঈদীর বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সাজার রায়ের আপিল শুনানি এরই মধ্যে সম্পন্ন করেছেন সুপ্রিম কোর্ট। এবং বর্তমানে মামলাটি রায়ের অপেক্ষায় আছে।
এছাড়াও, জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী এবং দলের আরেক কেন্দ্রীয় নেতা মীর কাসেম আলীসহ মোট তিনজনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত যুদ্ধাপরাধের মামলা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রায়ের অপেক্ষায় আছে।-ডেইলি স্টার।