৭১-এর যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত করে জামায়াত ইসলামীর বিরুদ্ধে এ মাসের মধ্যেই আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে। এ লক্ষ্যে যাবতীয় প্রস্তুতির কাজ চলছে প্রসিকিউশনে।
আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের জন্য তদন্ত সংস্থার দেয়া তদন্ত প্রতিবেদন বিচার-বিশ্লেষণ, সংশোধন-সংযোজনসহ নথিপত্র যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। এসব কাজ শেষ হলেই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পত্র ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হবে বলে জানিয়েছেন এই মামলা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ।
তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি এ মাসের মধ্যেই অভিযোগ দাখিল করার। সে লক্ষ্যে পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছি। তবে কোনো কারণে দেরিও হতে পারে।
জামায়াতের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর আগে কোনো মামলায় এ অভিযোগ আনা হয়নি।
প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ বলেন, মওদুদী, গোলাম আযম, নিজামীসহ জামায়াতের বিভিন্ন লেখকের লেখা বইসহ প্রয়োজনীয় শত শত বই পড়তে হচ্ছে।
জামায়াতের অভিযোগ প্রমাণে দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তারপরও কোনো তথ্যে ঘাটতি দেখা দিলে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের চরমপত্রগুলো কাজে লাগবে।
তিনি বলেন, সবগুলো বই পাঠ করার পর তা আন্ডার লাইন করা এবং নোট গ্রহণ চলছে। এ কাজে প্রসিকিউশন টিমের সদস্যসহ আগ্রহী অনেকেই সহযোগিতা করছেন বলে জানান ড. তুরিন আফরোজ।
তুরিন আফরোজ আরো বলেন, এতদিন আমরা মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলায় লড়েছি। এখন সংগঠনের বিরুদ্ধে মামলায় লড়তে হচ্ছে। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল। ইতিমধ্যে তদন্ত সংস্থা থেকে চূড়ান্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর আমরা ওই রিপোর্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য প্রসিকিউশন টিমের সাত প্রসিকিউটরকে দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েছি। এই মামলার টিম লিডার সমন্বয়ক করা হয়েছে আমাকে।
টিমের অন্য প্রসিকিউটররা হলেন রানা দাশগুপ্ত, জেয়াদ-আল মালুম, একেএম সাইফুল ইসলাম, সুলতান মাহমুদ সিমন, ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল ও রেজিয়া সুলতানা চমন।
জামায়াতের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে তুরিন আফরোজ বলেন, তদন্ত শেষ হয়েছে। এ অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে সংগঠনটি নিষিদ্ধ হতে পারে। তবে তাদের সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে কিনা সে বিষয়টি নিশ্চিত করেননি তিনি।
তিনি বলেন, তদন্তে প্রায় ১০৮টি প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে এসেছে ,কিন্তু তা নিষিদ্ধ করা হবে কিনা বা তার কার্যক্রম বন্ধ করা হবে কিনা সেটাও ভেবে দেখার বিষয়। কারণ সংগঠনের কোনো ব্যক্তি জড়িতে থাকলেও গোটা প্রতিষ্ঠানই জামায়াতের একার প্রতিষ্ঠান নয়। তাই এক ব্যক্তির জন্য তো আর গোটা প্রতিষ্ঠান বাজেয়াপ্ত বা বন্ধ করা সম্ভব না। এটা সম্পূর্ণ আলাদা একটি বিষয়।
তুরিন আফরোজ বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে না।
তবে হাইকোর্ট জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করায় ইতিমধ্যে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যদিও নিবার্চন কমিশন সর্বোচ্চ আদালতে জামায়াতের বিষয়ে করা আপিলের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। তবে দলটি উপজেলায় প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে বলে জানা গেছে।
তুরিন আফরোজ বলেন, আমরা এখন জামায়াত ইসলামীর বিরুদ্ধে করা তদন্তগুলো পর্যবেক্ষণ বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। ট্রাইব্যুনালে কী আবেদন করব এই মুহূর্তে তা বলতে চাই না।
অন্য প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত বলেন, তদন্ত সংস্থা জামায়াতের বিরুদ্ধে যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে, আমরা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পর্যবেক্ষণ করে দেখছি। ১০ হাজার পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট। যা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে সময়েরও প্রয়োজন। জামায়াতের মতো এত বড় একটি দলের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ মামলার বিষয়ে তারাহুড়ো করলে সঠিক হবে না।
তিনি বলেন, নির্দিষ্ট করে সময় দিয়ে বলা যাবে না কবে নাগাদ আমরা ফরমাল চার্জ দাখিল করতে পারবো।
গত ২৫ মার্চ তদন্ত সংস্থা জামায়াতের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। পরে প্রতিবেদনটি ২৭ মার্চ প্রসিকিউটর বরাবর হস্তান্তর করে। প্রসিকিউশন বিষয়গুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পর্যালোচনা করছে। তদন্ত সংস্থা চূড়ান্ত রিপোর্টে জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধের সুপারিশের পাশাপাশি তাদের আর্থিক ১০৮টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও সুপারিশ করেছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৪১ সালের এপ্রিল থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে মাওলানা মওদুদীর নেতৃত্বে জামায়াত ইসলামীর যাত্রা শুরু ভারত উপমহাদেশে। পরে নানা ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে জামায়াতের রাজনীতি অগ্রসর হয়েছে। এরই মধ্যে জামায়াতকে তিনবার নিষিদ্ধ করা হয়। সম্প্রতি হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন।