সোনিয়া গান্ধী রাজধানী নয়াদিল্লিতে কংগ্রেসের কোর কমিটির বৈঠকে বুথ-ফেরত জনমত সমীক্ষার ফল প্রত্যাখ্যান করা ও নরেন্দ্র মোদিকে ঠেকাতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
দিল্লির কংগ্রেস সূত্রে জানা গেছে, সোনিয়া গান্ধী তৃণমূলের সঙ্গে আগের সম্পর্ক ফিরিয়ে আনতে ইচ্ছুক। কংগ্রেসের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক ভালো না থাকলেও সোনিয়ার সঙ্গে মমতার এখনো সুসম্পর্ক রয়েছে। গত লোকসভা নির্বাচনে ভোটের শেষপবের্র দিন অনুষ্ঠিত বৈঠকে কংগ্রেসের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীসহ শীর্ষ নেতারা অংশ নেন। বৈঠকে দুটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, তৃণমূল কংগ্রেসসহ বিভিন্ন রাজ্যের ধর্মনিরপেক্ষ আঞ্চলিক দলগুলোর সঙ্গে কংগ্রেস সম্পর্ক গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। লোকসভা নির্বাচনে শেষপর্ব সম্পন্ন হওয়ার পর রাতে বিভিন্ন গণমাধ্যমের বুথ-ফেরত সমীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। এসব সমীক্ষায় বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ বা জাতীয় গণতান্ত্রিক মোর্চার ক্ষমতায় আসার আভাস দেয়া হয়। টাইমস অব ইন্ডিয়া, এনডিটিভি। সমীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, ভারতে প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন বিজেপির নেতা ও গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ওই আভাস পাওয়ার পরই দিল্লিতে কংগ্রেস আঞ্চলিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিশেষ করে যেসব আঞ্চলিক দল সংখ্যালঘু মুসলিম সমপ্রদায়ের ভোট বেশি পায়, সেগুলোর প্রতি কংগ্রেসের আগ্রহ বেশি। কারণ কংগ্রেস জানে মুসলিমরা বিজেপির দিকে ঝুঁকবে না। তাই ধর্মনিরপেক্ষ এসব দল নিয়ে ভবিষ্যতে কংগ্রেস এগোতে চায়।
দিল্লির কংগ্রেস সূত্রে জানা গেছে, সোনিয়া গান্ধী তৃণমূলের সঙ্গে আগের সম্পর্ক ফিরিয়ে আনতে ইচ্ছুক। যদিও কংগ্রেসের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক ভালো না থাকলেও সোনিয়ার সঙ্গে মমতার এখনো সম্পর্ক রয়েছে।
দ্বিতীয়ত, মমতা আগে যা ভেবেছিলেন, সে ফলাফল এখন আর না-ও হতে পারে। মমতার আগে ধারণা ছিল, বিজেপির পক্ষে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গড়া সম্ভব হবে না। তাকে নিভর্র করতে হবে আঞ্চলিক দলের ওপর। এ কারণে মমতা নির্বাচনের আগে হুংকার ছেড়ে বলেছিলেন, নির্বাচনের পর অনেক দলকেই তার কাছে আসতে হবে। কিন্তু বুথ-ফেরত সমীক্ষায় উল্টো আভাস দেওয়ায় মমতাও হতাশ হয়ে পড়েছেন। মমতার ধারণা ছিল, মোদি বা কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে সে ক্ষেত্রে তৃতীয় কোনো শক্তির সরকার গড়ার সম্ভাবনা থাকবে। এর নেতৃত্ব দিতে পারেন মমতা।
শুধু তাই নয়, এতে মমতার প্রধানমন্ত্রী হওয়ারও একটা সুযোগ এসে যেতে পারে। কিন্তু বুথ-ফেরত সমীক্ষায় এনডিএরই সরকার গড়ার সম্ভাবনার আভাস দেয়ায় মমতারও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেল। এখন মমতার মোদির বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে ভবিষ্যতে তাকে কংগ্রেসের হাত ধরতে হতেও পারে। কারণ কংগ্রেস ১২৮ বছর ধরে ভারতে ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ বহন করে আসছে।
এসব চিন্তা করে কংগ্রেসও এখন পাশে চাইছে ধর্মনিরপেক্ষ মমতাকে। তাই কংগ্রেস এখন ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে মায়াবতীর বহুজন সমাজপার্টি, মুলায়ম সিংয়ের সমাজবাদী পার্টি, চন্দ্রশেখর রাওয়ের তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতির মতো ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলো পাশে পাওয়ার জন্য শুরু করছে রাজনৈতিক তৎপরতা।