হালদায় ডিম ছেড়েছে মা মাছেরা

হালদায় ডিম ছেড়েছে মা মাছেরা

haldaদেশের একমাত্র কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজননস্থল চট্টগ্রামের হালদা নদীতে মা মাছেরা রবিবার গভীর রাতে ডিম ছেড়েছে। এর আগে তুমুল বৃষ্টি বজ পাত ও পাহাড়ী ঢলের মুখে রবিবার সন্ধ্যায় মা মাছেরা নমুনা ডিম ছেড়েছিল। অবশেষে গভীর রাতে ডিম ছাড়ার পর গত প্রায় ১৫ দিন ধরে হালদা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে অপেক্ষমান শতশত ডিম সংগ্রহকারীদের মধ্যে সাড়া পড়ে যায়। তারা রাতভর এবং সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত নৌকায় করে দীর্ঘ প্রতিক্ষিত রুই-কাতলা জাতীয় মাছের ডিম সংগ্রহ করে।

হালদা নদীর দুই পাড়ে এখন তাই উত্সবের আমেজ। হালদা পাড়ের সরকারি বেসরকারি হ্যাচারিগুলোতে ডিম থেকে রেণুপোনা উত্পাদনের কাজ চলছে। আশা করা হচ্ছে আগামী শুক্রবার থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মত্স্য খামারীদের কাছে রেণুপোনা বিক্রি শুরু হবে। ডিম সংগ্রহকারীরা ইত্তেফাককে জানান, চাহিদা বেশি থাকায় এ বছর প্রতি কেজি রেণুপোনা ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি হবে। কারণ এ বছর মাছ ডিম ছেড়েছে কম। অনেক ডিম সংগ্রহকারী আশানুরূপ ডিম সংগ্রহ করতে পারেননি।

গত এপ্রিলের শুরু থেকে হালদায় শতশত ডিম সংগ্রহকারী নৌকা নিয়ে প্রস্তুত ছিলেন। রবিবার সন্ধ্যায় ঝড়-বৃষ্টি, পাহাড়ী ঢল ও বজ বৃষ্টি হওয়ার পর মা মাছেরা নমুনা ডিম ছাড়ে। তবে রাত ১টা থেকে মা মাছেরা নিয়মমাফিক ডিম ছাড়তে শুরু করলে ডিম সংগ্রহকারীরা নদীতে নেমে পড়ে। হালদা নদী রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘ডিম সংগ্রহকারীরা গভীর রাত থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত একটানা ডিম সংগ্রহ করেছে। এইসব ডিম রাউজানে অবস্থিত ৩টি এবং হাটহাজারিতে অবস্থিত ৪টি সরকারি হ্যাচারিতে রেণুপোনা উত্পাদনের জন্য আনা হচ্ছে। এছাড়া সনাতনি পদ্ধতিতে কয়েকশ’ ডিম সংগ্রহকারী তাদের মাটির কূপে নিজেরাই ডিম থেকে রেণুপোনা উত্পাদন করে বিক্রি করে থাকেন। নিয়ম অনুসারে ডিম সংগ্রহের চারদিন পর অর্থাত্ আগামী শুক্রবার থেকে সরকারি বেসরকারি হ্যাচারিগুলো থেকে রেণুপোনা বিক্রি শুরু হবে।’ তিনি আরো জানান, হালদায় রবিবার রাতে মা মাছেরা ডিম ছাড়ার পর রাউজান উপজেলার পশ্চিম গহিরা, মোবারকখীল, সিপাহীঘাট, অংকুরীঘোনা, আজিজের ঘাট, কাগতিয়া, বিনাজুরী উরকিরচর, আবুরখীল। হাটহাজারী উপজেলার গড়দুয়ারা, নাপিতের ঘাট, পোড়াকপালী স্লুইস গেট অঞ্চল, আমতোয়া, রামদাশ মুন্সীরহাট, মাছুয়াঘোনা, উত্তর মাদার্শা, মধ্যম মাদার্শা, মদুনাঘাটসহ হালদা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে নৌকা-জাল নিয়ে ডিম সংগ্রহকারীরা গভীর রাত থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত একটানা ডিম সংগ্রহ করে। তিনি জানান, প্রথম প্রথম রেণুপোনার মূল্য বেশি থাকে। তাই এ বছরও রেণুপোনার দাম প্রতি কেজি ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকার মধ্যে থাকবে বলে আশা রাখছি। চট্টগ্রাম জেলা মত্স্য কর্মকর্তা প্রভাতি দেব বলেন, গত বছরের মতো এ বছরও হালদা নদীতে মা মাছেরা দেরিতে ডিম ছেড়েছে। সাধারণতঃ ডিম ছাড়ার মৌসুম এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত। সাধারণতঃ হালদায় মা মাছেরা এপ্রিলের প্রথম দশ দিনের মধ্যেই ডিম ছেড়ে থাকে। এ বছর ছাড়লো ১১ মে। তিনি জানান, হালদায় কার্প জাতীয় মাছেরা খুব দ্রুত বাড়ে। তিন বছরেই এগুলো দুই থেকে আড়াই কেজি ওজনের হয়ে উঠে এবং প্রজনন করতে শুরু করে। সরকার দেশের এই মূল্যবান মত্স্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর কালুরঘাট থেকে ছাত্তারহাট পর্যন্ত সারা বছর মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছেন। এছাড়া এখানে সরকারি বেসরকারি হ্যাচারিতে যেসব রেণুপোনা উত্পাদন হয় সরকার তার মূল্য নির্ধারণ করে না।

 

অন্যান্য অর্থ বাণিজ্য জেলা সংবাদ বাংলাদেশ শীর্ষ খবর