পঞ্চগড়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কমিউনিটি ধান ব্যাংক

পঞ্চগড়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কমিউনিটি ধান ব্যাংক

2014-05-11_2_959541জমি থেকে বোরো ধান উঠতে আরো কয়েকদিন বাকি। কিন্তু ঘরে খাবারের মত কোন চাল নেই। তাই বলে কি নতুন ধান না ওঠা পর্যন্ত পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কি না খেয়ে থাকতে হবে? না, সে দুশ্চিন্তা নেই। আপনার হাতের কাছে রয়েছে ধান ব্যাংক। আপনার প্রয়োজনীয় ধান ঋণ হিসেবে নিতে পারেন এই ব্যাংক থেকে। ঘরে ধান উঠলে সেই ঋণ ধান দিয়ে আবার শোধ করে দিতে পারবেন। তবে সুদ হিসেবে কয়েক কেজি বেশী ধান ব্যাংকে জমা দিতে হবে। আপনার অভাবে ও দুর্যোগকালীন সময়ে পরিবারের খাদ্যের চাহিদা মেটাতে কমিউনিটি ধান ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছে উত্তরের বৃহত্তম বেসরকারি সংস্থা আরডিআরএস বাংলাদেশ।

জানা গেছে, পঞ্চগড় জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ইউনিয়ন সমাজ কল্যান ফেডারেশনের নির্দিষ্ট এলাকার যে সব সদস্য বছরের বেশিরভাগ সময় খাদ্যাভাবে থাকে তাদের মধ্য থেকে ২৫ থেকে ৩০ জন উপকারভোগী ধান ব্যাংকের জন্য নির্বাচন করা হয়। উপকারভোগী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ফেডারেশন দরিদ্র ও অতি দরিদ্র, নারী প্রধান, বিধবা, তালাকপ্রাপ্তা, স্বামী পরিত্যাক্তা এবং প্রতিবন্ধী সদস্যদের প্রাধান্য দেয়া হয়। ধান ব্যাংক পরিচালনা জন্য ২টি কমিটি থাকে। একটি ধান ব্যাংক পরিচালনা কমিটি এবং অপরটি উপদেষ্টা কমিটি। উপদেষ্টা কমিটিতে সদস্য সংখ্যা ৩ থেকে ৫ জন। সংশ্লিষ্ট ফেডারেশন চেয়ারম্যান হবেন উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি। আর ধান ব্যাংকের উপকারভোগীদের সমন্বয়ে ধান ব্যাংক পরিচালনা কমিটি গঠিত হয়। যার সদস্য সংখ্যা ৫ থেকে ৭ জন। ধান ব্যাংকের অভাবে অথবা দূর্যোগকালীন সময়ে ধার হিসাবে একজন সদস্যকে সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৮০ কেজি ধান প্রদান করা হয়। পরবর্তী ফসল উঠার এক মাসের মধ্যে একটি সুনির্দিষ্ট অতিরিক্ত ৫ কেজি ধানসহ প্রদানকৃত ধান ব্যাংক পরিচালনা কমিটি ফেরত আনার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। আদায়কৃত ধানের গুণগতমান (পোকামুক্ত, চিটামুক্ত ও পর্যাপ্ত শুকনো- ১২% আদ্রতায়) ঠিক আছে কি না তা নিশ্চিত করবে ধান ব্যাংক পরিচালনা কমিটি।

পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী সমাজকল্যাণ ফেডারেশন পরিচালিত কমিউনিটি ধান ব্যাংকের সভাপতি পারুল রানী জানান, অভাবের সময় আমাদের গ্রামের পাড়ইদের (বড়লোক) কাছে ধান নিতে হতো। কিন্তু ধান ওঠার পর তার দ্বিগুণ ধান পরিশোধ করতে হতো। এখন আমরা আর পাড়ইদের কাছে যাই না। আমাদের ধান ব্যাংক থেকে প্রয়োজনের সময় আমরা ধান ধার নিতে পারি। ধান উঠলে মাত্র ৫ থেকে ৭ কেজি ধান বেশি দিয়ে সেই ঋণ পরিশোধ করতে পারি। তিনি জানান, ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে ৩০ মণ ধান নিয়ে যাত্রা শুরু করে এখন আমাদের মজুদ ৪২ মণ ধান। এই মৌসূমে আমরা এই ৪২ মণ ধান ৪২ জন সদস্যকে দিয়েছি। সদস্যরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা এবার ১০ কেজি করে বেশী ধান দেবে। এতে করে আমরা আগামী আমন মৌসুমের আগে আরো ২০ জন সদস্য নিতে পারব। এভাবে আগামী দুই বছরের মধ্যে আমাদের সদস্য ১শ’ জন ছাড়িয়ে যাবে।

ফেডারেশনের কৃষক ফোরামের সভাপতি ইউসুফ আলী জানান, ধান ব্যাংকের চাহিদা এত দ্রুত বাড়ছে যে, আমাদের ইউনিয়নে আরো ধান ব্যাংক স্থাপন করতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি ফেডারেশনের নিজস্ব উদ্যোগে নতুন করে ধান ব্যাংক স্থাপন করব।

আরডিআরএস বাংলাদেশ পঞ্চগড় এর সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান জানান, পঞ্চগড় জেলায় ইতিমধ্যে এ ধরণের ৫টি কমিউনিটি ধান ব্যাংক স্থাপন করা হয়েছে। এ বছর প্রতিষ্ঠিত হবে আরো দু’টি। ধান ব্যাংক প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে আমরা প্রতিটি ধান ব্যাংকের জন্য ৩০ মণ ধাণ, ধান মাপার জন্য দাড়ি-পাল্লা ও ধান রাখার জন্য ডুলি বিনামূল্যে দিয়ে থাকি। নিয়ম মেনে এই ব্যাংকে সদস্য হয়েই ঋণ হিসেবে ধান নেয়া যাবে। তিনি জানান, কমিউনিটিতে ধান ব্যাংকের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

অর্থ বাণিজ্য