সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে বাঁচার অধিকার সবকিছুর আগে। দেশের জনগণের জানমাল রক্ষায় নিশ্চয়তা দিয়েছে সংবিধান। সংবিধান মোতাবেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার রক্ষার দায়িত্ব সরকারের।
নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সেভেন মার্ডারের ঘটনায় চাকরিহারা তিন সাবেক র্যােব কর্মকর্তাকে গ্রেফতারে হা্কোর্টের আদেশের পর ড. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, “শুধু নারায়ণগঞ্জে সাত অপহরণ, হত্যা নয়। সারাদেশেই বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ড চলছে। এসব ঘটনায় কারো লাশ পাওয়া যায়, কারো পাওয়া যায় না।”
মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষায় নির্দেশনা প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংবিধানের অভিবাবক হিসেবে হাইকোর্ট সে দায়িত্ব পালন করবে।
সকালে এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করে বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের বেঞ্চ তিন র্যা ব কর্মকর্তাকে গ্রেফতারে স্বরাষ্ট্র সচিবকে অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেন।
আদেশে বলা হয়, চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়া ওই তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি বা অন্য কোনো বিশেষ আইনে কোনো অভিযোগ পাওয়া না গেলে তাদেরকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করতে হবে।
গ্রেফতারের পর তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশনায় বলা হয়।
এই নির্দেশনার পাশাপাশি দুটি রুলও দেয়া হয়।
পুলিশ, র্যা বসহ অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পেশাগত কার্যা্বলী সম্পর্কিত বিদ্যমান আইন সংশোধন, আইনকে হালনাগাদ করার বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনা করতে কেন নির্দেশনা দেয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি নাগরিকদের অধিকার রক্ষায় আইনের ঘাটতি সংশোধনে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়।
দুই সপ্তাহের মধ্যে বিবাদী স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, জনপ্রশাসন সচিব ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদেশের পর ওই বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার বলেন, “ইতিপূর্বে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এ ব্যাপারে আদেশ দিয়েছিল। সে সময় ওই তিন কর্মকর্তাকে বরখাস্তের বিষয়টা থাকলে ওই বেঞ্চই তাদেরকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিতো।”
তিনি বলেন, “আমরা নতুন এ বিষয়ে আদেশ দিলাম। কারণ কিছু পাওয়া না গেলেতো তাদেরকে বরখাস্ত করা হতো না।”
আদালত বলেছে, এর আগের স্বতঃপ্রণোদিত আদেশের সঙ্গে এই রিটেরও শুনানি হবে। সেই বেঞ্চের বিবেচনার জন্য আমরা বিষয়টি পাঠিয়ে দিলাম।
নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় তদন্ত প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে বিচার বিভাগীয় কমিশন চেয়ে সকালে এই রিট হয়। রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে আদালত এ আদেশ দেন।
সকালে চন্দন সরকারের জামাতা ডা. বিজয় কুমার পাল, নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান ও আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীর নির্বাহী সভাপতি মাহবুবুর রহমান এই রিট দায়ের করেন। রিটের পক্ষে শুনানি করেন ড. কামাল হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এমকে রহমান।