অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ‘দেশের প্রধান সমস্যা হলো বিনিয়োগ। আর বিনিয়োগ না হওয়ার ফলে অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।’ দেশে বিনিয়োগ না হওয়ার বিভিন্ন কারণ বিশ্লেষণ করে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘অনেকেই ব্যাংক সুদের হার কমাতে বলেন, কিন্তু তারাই আবার ব্যাংকের বোর্ড সভায় গিয়ে তা ভুলে যান। সুদহার কমাতে ব্যাংক স্প্রেড (আমানত ও ঋণের সুদহারের ব্যাবধান) কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক চেষ্টা করলেও তা সফল হচ্ছে না।’ বিগত রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হলেও আস্থার অভাবে দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ হচ্ছে না—এটা মানতে নারাজ অর্থমন্ত্রী। আজ শনিবার সচিবালয়ে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী পাঁচ বছরে আয়করদাতার সংখ্যা দ্বিগুণ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হবে। প্রতিবছর করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর কোনো মানে হয় না। ২ লাখ ২৫ হাজার করে এবার পাঁচ বছরের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা নির্দিষ্ট করে দেয়া হতে পারে।’
আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে আমাদের দেশে অতীতে বিনিয়োগ হয়েছে এ ধরনের অনেক উদাহরণ রয়েছে। আর আস্থার অভাবের বিষয়টা আমি বুঝতে পারি না। কারণ, এ মুহূর্তে বাংলাদেশে একটি ভালো বাজার রয়েছে।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘১৬ কোটি মানুষের দেশে কমপক্ষে ৫ কোটি মানুষ বাজারের সাথে সংশ্লিষ্ট, ফলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা রয়েছে। এ কারণেই দেশে বিনিয়োগ বাড়বে।’
কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এ সুযোগ খামোখা দেয়া হয়। এ ধরনের সুবিধায় খুব বেশি অর্থ বিনিয়োগে আসেনি। গত ৭০ দশক থেকে কালো টাকা সাদা করার যে সব সুবিধা দেয়া হয়েছে সেগুলো সবই ইউজলেস।’
আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় আমাদের রেকর্ড খুব ভালো। এ খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, বিনিয়োগ না বাড়লে এ সুরক্ষা দিয়ে কোনো সুবিধা হয় না।’
বিদ্যুত্খাত প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে বিদ্যুত্ উত্পাদন ক্ষমতা ১১ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু সঞ্চালন ও সরবরাহ ক্ষমতা হচ্ছে ৭ হাজার মেগাওয়াটের মতো। এটা বাড়াতে হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জব্দকৃত ব্যাংক হিসাব খুলে দেয়া হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে দুর্নীতিরি অভিযোগ রয়েছে, তাই তখন ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছিল, এর দুটি একাউন্টে খুব বেশি অর্থ নেই, তবে ফাইল না দেখে কিছু বলা যাবে না।’
অর্থসচিব ফজলে কবীর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন, ইআরএফ সভাপতি সুলতান মাহমুদ বাদল, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমানসহ সংগঠনের অন্য সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।