তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু বাংলাদেশ থেকে ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি বলে উল্লেখ করেন এবং তাদের শতকরা ৩০ শতাংশই মুসলমান বলেও জানান। নিঃসন্দেহে এই সংখ্যা বর্তমানে আরো বেড়েছে।
ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা ইন্ডিয়া টাইমসের সহযোগী দৈনিক ইকোনমিক টাইমসে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে।
আগামী ১২ মে ভারতের যে রাজ্যগুলোতে লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেগুলোর মধ্যে অন্তত সাতটি রাজ্য-রানাঘাট, বনগাঁও, ব্যারাকপুর, বশিরহাট, বারাসাত, কৃষ্ণনগর এবং জয়নগর বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত।
এই কারণেই ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর থেকে বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ভারতে গিয়ে বসবাসকারী নিম্নবর্ণের হিন্দু এবং মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষের দিকে শকুনের মতো দৃষ্টি দিয়ে ক্রমাগত এই একটি বিষয়েই বীণা বাজিয়েই যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি। জাতিসংঘের চুক্তিতে বাংলাদেশ ও ভারত স্বাক্ষর করেনি বলে ওই তারিখের পর থেকে যারা অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে প্রবেশ করেছেন তারা দেশটির নাগরিকত্বও পাবেন না এবং শরণার্থী হিসেবেও তাদের মূল্যায়ন করা হবে না।
তবে ক্ষমতায় এলে তারা শরণার্থী হিসেবে মূল্যায়িত হবেন বলে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে উল্লেখ করেছেন মোদি। কিন্তু একই সঙ্গে তিনি এটাও বলেছেন যে, শরণার্থী এবং অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের পৃথকভাবে চিহ্নিত করা হবে।
পশ্চিমবঙ্গে এক নির্বাচনী জনসভায় মোদি বলেন, “যারা মা দুর্গার পূজারি কেবল তারাই এদেশে থাকতে পারবেন। কিন্তু যারা অসৎ উদ্দেশ্যে নিয়ে লুকিয়ে এদেশে ঢুকেছেন তাদের অবশ্যই ফিরে যেতে হবে।”
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিজেপি নেতা তথাগত রায় বলেন, “মুসলমানদের দিকে আঙুল তোলেননি মোদি। তার বার্তা অত্যন্ত স্পষ্ট। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিসেবে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বাস করেন- হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ এবং আহমাদি (মুসলমানদের একটি অংশ) ইত্যাদি। এদের অনেকেই ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের আমরা শরণার্থীর অধিকার দেব।”
তবে এই প্রতিশ্রুতি পূরণের পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়াবে ২০০৪ সালে এনডিএ’র শাসনামলে সংসদে পাস হওয়া সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন। আইনটিতে বলা আছে- ভারতে জন্ম নিয়েছেন যারা, তাদের সন্তানরা ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে মনমোহন সিং এবং একজন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য জেনারেল শংকর রায় চৌধুরী রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে এই সংশোধনীর বিরোধিতা করেছিলেন।
শংকর রায় বলেছিলেন, “এই আইনের কারণে অনাবাসিক ভারতীয়রাও নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন। আর বিজেপি সরকার গঠন করলেই এই আইনে সংশোধনী আনবে।”
বাংলাদেশী অভিবাসীদের সমর্থনের বিষয়ে নিশ্চয়তা দিতে যে কৌশল পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি গ্রহণ করেছেন, সেই কৌশলের মাধ্যমেই তাকে শিক্ষা দেয়াই এখন বিজেপি’র অন্যতম পরিকল্পনা।