ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রামেও হতাশ তৃণমূল বিএনপি!

ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রামেও হতাশ তৃণমূল বিএনপি!

image_79250_0প্রচণ্ড হতাশায় ডুবে গেছেন বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা। ৫ জানুয়ারির ‘বিতর্কিত’ নির্বাচনের আগে নির্বাচন ঠেকানোর ‘ব্যর্থ’ আন্দোলনের পর পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও নির্বাচন বর্জনের কারণে বর্তমানে সংসদের বাইরে থাকা এই প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দলটি নিজেদের অবস্থান পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়েছে।

বিএনপি’র দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দল যে আদৌ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে সে বিষয়ে দিন দিন আশা হারাচ্ছেন দলটির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবি আদায়ের জন্য দলকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে এবং কঠোর আন্দোলনে নামতে হবে বলে প্রায় তিন মাস আগে দলপ্রধানের ঘোষণার পরেও বিষয়টি নিয়ে কোনো অগ্রগতি নেই বলেই দিন দিন হতাশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।

প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা ছাড়া বিএনপি’র ঢাকা মহানগর শাখার নতুন কমিটিও গঠন করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন এই নেতা-কর্মীরা। নির্বাচন পূর্ববর্তী আন্দোলনের গতি বজায় রাখতে ব্যর্থ হওয়ার কারণ হিসেবে দলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই শাখাটিকেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ার জন্য দায়ী করা হয়েছে।

স্পর্শকাতর বিষয় বলে দলের এক জ্যেষ্ঠ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “লুকানোর কিছুই নেই… আসলেই এখন নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করার চেষ্টা করছি আমরা।”

গত তিন মাসে দলটির অর্জনের মধ্যে রয়েছে বিএনপি’র ১২টি জেলা শাখার নতুন কমিটি গঠন এবং দলের শ্রমিক সংগঠন শ্রমিক দলের নতুন কমিটির অনুষ্ঠিত একটি কাউন্সিল।

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য হান্নান শাহ বলেন, “আমাদের প্রচেষ্টা দৃশ্যমান নয়, তবে দলকে আবারো জাগিয়ে তোলার জন্য দেশজুড়ে আমাদের দল বেশ গতিশীলভাবেই কাজ করে যাচ্ছে। দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া পুরোপুরি শেষ করতে আমাদের আরো কিছুটা সময় দরকার।”

বিএনপি’র মতো একটি বড় দলের পুনর্গঠন রাতারাতি সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বৈঠক এবং দলের রদবদল আনার মতো মৌলিক পর্যায়ের কাজগুলোই এখন গুছিয়ে আনছি আমরা। শুধু একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেই দলের বিভিন্ন কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে পরিবর্তন করা যায় না। যেকোনো কমিটিকেই ঢেলে সাজানোর আগে অনেকগুলো দিক বিবেচনা করতে হয় আমাদের।”

দলের ঢাকা মহানগর সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর বিষয়ে হান্নান শাহ জানান, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ইতিমধ্যেই নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছেন, এখন শুধু ঘোষণার অপেক্ষা।

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য অবসরপ্রাপ্ত লে: জেনারেল মাহবুবুর রহমান দাবি করেন, তারা দল এবং দলের সহযোগী সংগঠনগুলোর পুনর্গঠনের বিষয়ে তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি লাভ করেছেন।

তিনি বলেন, “তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমে এরই মধ্যে দলীয় কোন্দল, ভুল বোঝাবুঝি এবং দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ইত্যাদি দূর করেছি আমরা। কিছু নতুন কমিটিও গঠন করা হয়ে গেছে।”

তিনি জানান, দলের পুনর্জাগরণ এবং একটি সফল আন্দোলনের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে চেয়ারপারসনও দলের জেলা শাখা এবং বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছেন।

বিএনপি এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলোর অধিকাংশ শীর্ষ নেতারা মিথ্যা মামলায় আটক হয়ে কারাগারে আছেন উল্লেখ করে মাহবুব জানান- শীর্ষ নেতাদের কারাবরণ, প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং সদ্যসমাপ্ত উপজেলা নির্বাচনের কারণে দলকে গতিশীল করে তোলার প্রক্রিয়া কিছুটি ধীরে এগোচ্ছে।

দল এবং এর সহযোগী অঙ্গসংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতাদের অনেকেই জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসায় দলের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া আবারো গতি ফিরে পাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

দলকে পুনর্গঠনের কাজে সঠিক পথেই আছেন দাবি করে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, “এসব বিষয় এখন স্বয়ং খালেদা জিয়াই দেখাশোনা করছেন।”

তিনি জানান, যত দ্রুত সম্ভব আন্দোলনে যাওয়ার জন্য যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়াটি অবিলম্বে শেষ করার জন্য দলীয় নেতাদের নির্দেশ নিয়েছেন খালেদা জিয়া।

খালেদার ঘনিষ্ঠ একজন বিএনপি নেতা জানান, আবদুল আউয়াল মিন্টুকে আহ্বায়ক এবং হাবিবুন নবী খান সোহেলকে সদস্য সচিব করে ঢাকা মহানগর বিএনপি’র নতুন কমিটি খুব শিগগিরই ঘোষণা করা হবে।

পরে ধীরে ধীরে ধারাবাহিকভাবে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং ছাত্রদলের কমিটিও ঘোষণা করা হবে।

বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং দলের কয়েকজন নীতিনির্ধারক দলের জন্য এক বছরব্যাপী একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছেন বলে জানা গেছে।

কাদের নিয়ে এবং কিভাবে দলের বিভিন্ন শাখা এবং সহযোগী অঙ্গসংগঠনগুলো পুনর্গঠন করা হবে সে বিষয়ে সুপারিশ করে এরই মধ্যে তারা বিএনপি প্রধানের কাছে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।

তরুণ এবং আত্মত্যাগী নেতা-কর্মীদের হাতে দলের বিভিন্ন শাখা ও অঙ্গসংগঠনের দায়িত্ব প্রদান করতে হবে এবং জ্যেষ্ঠ নেতারা কমিটির উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন- তারা এমন সুপারিশ করেছেন বলেও জানা গেছে।

দলের পুনর্গঠনের ধীর গতির কারণে অনেক তৃণমূল নেতা-কর্মী দিন দিন হতাশ এবং নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন বলে স্বীকার করেছেন ঢাকা মহানগরের একটি থানা বিএনপির সভাপতি।

তিনি বলেন, গত ১০ ফেব্রুয়ারি দলপ্রধান খালেদা জিয়া মহানগর বিএনপি’র প্রতিটি শাখাকে অবিলম্বে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়ার পরেও ঢাকা মহানগর বিএনপি’র কমিটিই কেন এখনো ঘোষণা করা হচ্ছে না তা তারা বুঝতে পারছেন না।

গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর একটি হোটেলে এক জনবহুল সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, দল এবং এর বিভিন্ন শাখার বর্তমান কমিটিগুলোকে অকার্যকর ঘোষণা করে সেগুলো পুনর্গঠনের পর বিএনপি আবারো কঠোর আন্দোলনে নামবে। বিএনপি’র বর্জন করা ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাদখল করা সরকারকে উচ্ছেদ করতেই বিএনপি’র এই আন্দোলনের প্রস্তুতি বলেও জানান তিনি

রাজনীতি শীর্ষ খবর