বহুলালোচিত সমালোচিত এবং ত্রিধারায় বিভক্ত গণজাগরণ মঞ্চ শাহবাগে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী পালন করেছে। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা অবধি শাহবাগের দুটি স্থানে সমাবেশ এবং বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করেন মঞ্চের নেতাকর্মীরা। উভয় অংশের দাবি ছিল একই। তবে সর্বশেষ ঘোষিত মঞ্চের তৃতীয় অংশটিকে বৃহস্পতিবারও কোনো কর্মসূচী পালন করতে দেখা যায়নি।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচী পালন করতে বৃহস্পতিবার বিকেলে মঞ্চের শুরু থেকে মুখপাত্রের দায়িত্ব পালনকারী ইমরান এইচ সরকার পক্ষ এবং কামাল পাশা চৌধুরী পক্ষ জাতীয় জাদুঘরের সামনের দুই অংশে অবস্থান নিতে শুরু করে। জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিল নিষ্পত্তি ও মতিউর রহমান নিজামীর মামলার রায় দ্রুত দেয়ার দাবিতে এ কর্মসূচী পালন করে মঞ্চের উভয় অংশ।
জাতীয় জাদুঘরের উত্তর পাশে বিকেলে আগেভাগে এসে অবস্থান নিতে থাকেন কামাল পাশা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন অংশ। এতে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কবি আসলাম সানী, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সভাপতি মেহেদী হাসান, এফ এম শাহীন, আতিক মাহমুদ, হাবিবুল্লাহ মিসবাহ প্রমুখ
অপরদিকে জাদুঘরের দক্ষিণ পাশে ইমরান এইচ সরকারের নেতৃত্বাধীন মঞ্চের নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে সমাবেশ শুরু করেন। উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকার কর্মী খুশি কবির, ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লাকি আক্তার, গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক মাহমুদুল হক মুন্সী বাধঁন প্রমুখ।
উভয় অংশই আলাদা আলাদা মাইক ব্যবহার করে তাদের কর্মসূচী পালন করতে থাকে। আগের কর্মসূচী পালন করতে গিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুরো সময় জুড়েই সতর্ক ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই উভয় অংশের কর্মসূচী শেষ হয়। সমাবেশ শেষে ইমরানের প বিােভ মিছিল করেন।
সমাবেশে ইমরান সরকার বলেন, ৬ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত গণজাগরণ মঞ্চ ঘরে ফিরে যাবে না। মামলা-হামলা দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। অনেকেই গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন আর প্রয়োজন নেই মনে করে। পরে হাড়ে-হাড়ে টের পাবেন। জনগণ জানে কারা যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে, আর কারা মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে।
কামাল পাশা চৌধুরী বলেন, একটি মহল গণজাগরণ মঞ্চকে ব্যবহার করে নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা করছেন। তারা নানাভাবে সরকাররের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছেন। যা কখনো কাম্য নয়।
সমাবেশ থেকে ইমরান অংশ নতুন কর্মসূচী ঘোষণা করে। সে অনুযায়ী আজ সকালে মঞ্চের যৌথসভা ডেকেছেন তিনি। এখানে গণজাগরণ মঞ্চের ১৫ মাসের আন্দোলনে সম্পৃক্ত সব সংগঠনের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. মিলন হলে এ যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি গণজাগরণ মঞ্চের সূচনা থেকে ইমরানের নেতৃত্বেই আন্দোলন চলে আসছিল। কিন্তু গত ২৬ মার্চের পর থেকে মঞ্চের ঐক্যে ফাটল ধরেছে। নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছে তিনটি অংশে। ইমরানকে মঞ্চ থেকে একাধিকবার বহিষ্কারও করেছেন অন্য অংশের নেতাকর্মীরা। তারা আলাদা আলাদা কর্মসূচী পালন করতে গিয়ে শাহবাগে একাধিকবার সংঘর্ষেও জড়িয়ে পড়েন। হামলা, মামলা, গ্রেফতারের মতো ঘটনাও ঘটেছে। মঞ্চের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে উঠেছে পতাকা অবমাননা, অর্থ আত্মসাৎ, স্বেচ্ছাচারিতার মতো গুরুতর সব অভিযোগ। এর মধ্যেই বিবাদমান তিন অংশের মধ্যে দুটি অংশ শাহবাগে নিয়মিত বিরতিতে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী পালন করে যাচ্ছে।