রসালো ও সুস্বাদু লিচু মানেই দিনাজপুরের লিচু। তাই দিনাজপুর লিচুর জেলা হিসেবে দেশব্যাপী পরিচিত। আর এই জেলার ১৩টি উপজেলাতেই লিচু চাষ বেড়ে চলছে। প্রতি বছর বাড়ছে লিচু চাষের জমির পরিমাণ। উৎপাদনের জন্য অনুকূল পরিবেশ থাকায় এবার মধুমাসের ফল লিচুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। প্রতিটি লিচু গাছে থোকা থোকা লিচু শোভা পাচ্ছে। আর ক’দিন পরই লিচু পাকতে শুরু করবে।
দিনাজপুর হর্টিকালচার বিভাগের উপ-পরিচালক মোকলেসুর রহমান জানান, প্রতিবছর এই জেলার উৎপাদিত লিচু দেশের বিভিন্ন জেলা ও তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সরবরাহ হয়ে থাকে। অনুকূল আবহাওয়া ও কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় এবার জেলায় লিচুর বাম্পার ফলন হবে। এখন পর্যন্ত জেলার লিচু বাগানে ও বসত বাড়ীতে লাগানো গাছে লিচুর ফলন ভালো দেখা যাচ্ছে। ভালো ফলনের আশায় লিচু চাষীরা পুরোদমে পরিচর্যা চালায়। চাষীদের সহযোগিতা করতে কৃষি অধিদপ্তর এবং হর্টিকালচার বিভাগ থেকে পরামর্শ ও সহযোগিতা করে আসছে।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আনোয়ারুল আলম জানান, গত ২০০৯ সালে জেলায় লিচু চাষের জমির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৫শ’ হেক্টর। ২০১০ সালে তা এসে দাঁড়ায় ১ হাজার ৭৮০ হেক্টরে। ২০১১ সালে ১ হাজার ৯৫৬ হেক্টর এবং ২০১২ সালে ২ হাজার ৫শ’ হেক্টর এবং ২০১৩ সালে ২ হাজার ৭শ’ হেক্টর লিচু চাষ হয়। চলতি বছর ২০১৪ সালে লিচু চাষের জন্য জমির পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার ২শ’ হেক্টরে বেড়ে গেছে। চলতি বছরে দিনাজপুর জেলায় ৩ হাজার ২শ’ হেক্টর জমিতে লিচু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। দিনাজপুরের লিচু সুস্বাদু ও মিষ্টি হওয়ায় দেশব্যাপী এর চাহিদা বেশী।
দিনাজপুরের লিচুর মধ্যে চায়না থ্রী, চায়না ফোর, বেদেনা, বোম্বাই ও মাদ্রাজি উল্লেখযোগ্য। আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে এবার বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। জেলার সদর উপজেলার আউলিয়াপুর, মাসিমপুর, পুলহাট, সিকদারগঞ্জ, মহব্বতপুর, উলিপুর, খানপুর এলাকায় ঐতিহ্যবাহী বেদেনা লিচু চাষ উল্লেখযোগ্য। এই এলাকার মাটির কারণেই উৎপাদিত বেদেনা লিচু সুস্বাদু এবং উন্নত মানের হয়ে থাকে। অন্য এলাকার বেদেনা লিচুর চেয়ে এই এলাকার বেদেনা লিচু গ্রাহকদের কাছে জনপ্রিয়। হাইব্রিড জাতের লিচু চায়না টু, চায়না থ্রি, চায়না ফোর সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম, বিরল, বোচাগঞ্জ, বীরগঞ্জ, চিরিরবন্দর, পার্বতীপুর, ফুলবাড়ীসহ জেলার ১৩টি উপজেলাতেই ব্যাপকহারে বাগান গড়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীরা অনেক লিচুর বাগান আগাম ক্রয় করে নিয়েছে।
দিনাজপুর সদর উপজেলার উলিপুর গ্রামের আদর্শ লিচু চাষী রমজান আলী (৫০) জানান, লিচুর ফুল আসার সাথে সাথে পরিচর্যা শুরু করতে হয়। নিয়মিত স্প্রে ও সেচ দিতে হয়। রমজান আলীর ৩ একর জমি দুটি লিচু বাগান রয়েছে। ২৯৫টি লিচু গাছের মধ্যে ৮২টি রয়েছে বেদেনা লিচুর গাছ এবং দেশি ও হাইব্রিড জাতের চায়না থ্রির গাছ রয়েছে ২১৩টি।
এ দুটি বাগান তিনি ১ বছরের জন্য ব্যবসায়ীর কাছে সাড়ে ৫ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। বাগানের বয়স প্রায় ১২ থেকে ১৬ বছর হবে। যত দিন যাবে লিচুর গাছে ফল বেশি ধরবে এবং দামও বাড়তে শুরু করবে। এ ছাড়াও তার বাড়ীতে ৪টি লিচুর গাছ রয়েছে এর মধ্যে একটি বেদেনা ও দুটি মাদ্রাজি ও একটি বোম্বে লিচু। এ ৪টি গাছের লিচু তার পরিবারের খাওয়া আত্মীয়-স্বজনকে দেয়া ছাড়াও বিক্রি করা হয়।
বিরল উপজেলার মাধববাটী গ্রামের লিচু বাগানের মালিক রামকৃষ্ণ রায় জানান, এবার আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় বাম্পার লিচুর ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তার দেড় একর জমিতে চায়না থ্রি লিচু বাগান রয়েছে। তার বাগানে ১৫২টি গাছ রয়েছে। চলতি বছর কিশোরগঞ্জ জেলার ব্যবসায়ী ফজল হক এক বছরের জন্য ২ লাখ টাকায় বাগানটি ক্রয় করেছে। বাগানের লিচুর গাছের বয়স ১৫ বছর চলছে।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা সাফায়েত হোসেন জানান, লিচু চাষে ব্যঘাত না হওয়ার লক্ষ্যে কৃষি কর্মকর্তারা চাষীদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়েছে। এর ফলে উৎপাদন বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।