গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, ভূমিকম্প থেকে রক্ষা পাবার জন্য আমাদেরকে বিল্ডিং কোড মেনে চলতে হবে। অনেকে তা মানেন না। এমনকি যেসব বিভাগ এসব অনিয়ম দেখার কথা তারা দেখেও তা দেখে না। তিনি বলেন, ঢাকা শহরে যে হারে ভবন নির্মাণ হচ্ছে তাতে ভূমিকম্প প্রতিরোধ করা কঠিন হবে। কিন্তু এটি মোকাবেলার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
গণপূর্ত মন্ত্রী বলেন, ভূমিকম্প মোকাবেলার জন্য আমাদেরকে নতুন নতুন যন্ত্রপাতি আনতে হবে। বড় আকারের ভূমিকম্প মোকাবেলার জন্য ভারী যন্ত্রপাতির বিকল্প নেই। মানুষের সচেতনতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, মানুষ এখন অনেক সচেতন। একসময় ঘূর্ণিঝড়ে প্রচুর প্রাণহানি হলেও এখন তা কমে এসেছে। বিগত সময়ে আইলায় সম্পদের ক্ষতি হলেও প্রাণহানি কম হয়েছে। এছাড়া তিনি ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার লক্ষ্যে ভূমিকম্পবান্ধব নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেন।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, সবকিছুর মূলে রয়েছে অর্থ। আমাদের লক্ষ্য অর্জন করতে হলে সম্পদ বাড়ানোর বিকল্প নেই। আমাদের অনেকে জ্ঞান অর্জনের জন্য দেশের বাইরে যান। কিন্তু জ্ঞান অর্জনের পর তা বাস্তবে রূপ দেয়ার সময় দেখা যায় আমাদের পয়সা নেই। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সোনার দেশ। এখানে একজন উদ্যোক্তা অনেক কিছু একসাথে করতে চান। যিনি ডেভেলপার তিনিই আবার সিমেন্ট উত্পাদন করেন, ইট বানান। একদিন দেখা যাবে রাস্তার ঠিকাদাররা বিটুমিন উত্পাদনে নেমে পড়েছেন। তিনি আরো বলেন, একসময় বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নের প্রকল্প কম বাস্তবায়ন করতো। আমরা শুধু ইকুইটির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতাম। এখন আমরা নিজস্ব অর্থায়নের প্রকল্প বেশি বাস্তবায়ন করছি।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু আরো বলেন, অর্থনীতির দিক থেকে বিচার করলে বাংলাদেশ অনেক সম্ভাবনার দেশ। ৪৩ বছরে আমাদের অর্জন অনেক। তিনি বলেন, পৃথিবীতে দুর্যোগ সবসময় ছিলো। এর মাঝেই মানুষ টিকে আছে। এখন মানুষের মধ্যে এ নিয়ে সচেতনতা এসেছে। এই সচেতনতা গ্রাম পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছে। আগে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে মানুষ সয়েল টেস্ট না করালেও এখন তা সবাই করাচ্ছে। এখন সয়েল টেস্ট না করালে আর্কিটেক্টরা কাজ করতে চান না। তিনি ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলা করার জন্য জনসচেতনতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেন।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব মো: গোলাম রব্বানী বলেন, ভূমিকম্প আমরা ঠেকাতে পারবো না। কিন্তু সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারলে ক্ষয়ক্ষতি আমরা কাটিয়ে উঠতে পারি।
হাউজিং এন্ড বিল্ডিং রিচার্স ইন্সটিটিউটের পরিচালক মোহাম্মদ আবু সাদেক পিইঞ্জ বলেন, ভূমিকম্পের বিষয়ে আমাদের সচেতনতা ও পূর্ব প্রস্তুতি পর্যাপ্ত নয়। ফলে ভূমিকম্পের ঝুঁকির মাত্রাও বেশি। এ ঝুঁকি কমিয়ে আনতে জনসচেতনতার বিকল্প নেই।
বাংলাদেশ আর্থকোয়েক সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ড. এ.এ. এম শামসুর রহমান বলেন, ১৯৯৩ সালে জাতীয় বিল্ডিং কোড প্রণীত হলেও এটি প্রয়োগে প্রাতিষ্ঠানিক কোন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়নি। এর ফলে কোডের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্মাণ কাজ সুনিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু প্রথম বাংলাদেশ ভূমিকম্প প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। ভূমিকম্প ও ভূমিকম্প সহনীয় নির্মাণ ও নির্মাণ সামগ্রী বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এতে ভূমিকম্প সহনীয় নানা নির্মাণ সামগ্রী স্থান পেয়েছে। পাঁচ দিনব্যাপী এ মেলা প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।