বব্স ২০১৪-র সেরা ব্লগ মিশরের একটি ফটোব্লগ

বব্স ২০১৪-র সেরা ব্লগ মিশরের একটি ফটোব্লগ

blogmishorডয়চে ভেলের বেস্ট অফ অনলাইন অ্যাকটিভিজম অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন মাত্র ২৩ বছর বয়সি এক মিশরীয় আলোকচিত্রশিল্পী, যার নাম মুসা’আব এলসামি৷ ছিলেন ভেষজবিজ্ঞানের ছাত্র৷ নেশা ছিল ফটোগ্রাফি: আরব বসন্ত অবধি৷

যে বিপ্লব হোসনি মুবারকের পতন ঘটায়, সেই বিপ্লবই যেন এলসামি-র চোখ খুলে দেয়, এ যুগে ক্যামেরা দিয়ে তোলা ছবি যে মানুষের কাছে কি বার্তা পৌঁছে দিতে পারে, কি ধরনের আবেগ-অনুভূতির দুয়ার খুলে দিতে পারে, সে ব্যাপারে৷ ‘‘আমার পথে না বেরিয়ে উপায় ছিল না,” স্কাইপে নেওয়া সাক্ষাৎকারে ডয়চে ভেলেকে বললেন এলসামি৷ ‘‘আমার কর্তব্য হলো এই সব ছবি তোলা৷ সেই সঙ্গে আমি খেয়াল করি যে, ক্রমেই আরো বেশি মানুষ এই সব ছবি দেখতে চান৷”

পড়া ছেড়ে এলসামি ফটো-সাংবাদিকতার দিকে ঝোঁকেন৷ সাফল্যও আসতে থাকে৷ শীঘ্রই তার ছবি ছাপা হতে শুরু করে টাইম ম্যাগাজিন, প্যারিস ম্যাচ, নিউ ইয়র্ক টাইম্স, এমনকি রোলিং স্টোন মিউজিক ম্যাগাজিনেও৷ আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলির জন্য কাজ করতে শুরু করেন মুসা’আব৷ একাধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন৷ আজ বিশ্বের সেরা প্রেস ফটোগ্রাফারদের মধ্যে গণ্য করা হয় তাকে৷ এক তরুণ আলোকচিত্রশিল্পীর পক্ষে এক আশ্চর্য ক্যারিয়ার৷

শাটার আছে, কিন্তু ফিল্টার নেই
টুইটার, ফেসবুক, ফ্লিকার-এ ছবি পোস্ট করে থাকেন এলসামি, আর নিজের ওয়েবসাইটে তো বটেই৷ ওয়েবসাইটটিকে সংকীর্ণ অর্থে ঠিক ওয়েবব্লগ বলা চলে না৷ বরং এখানে মুসা’আব এলসামি তার নিজের কাহিনিগুলি শোনান৷ এগুলি হলো ছবিতে কাহিনি: যুদ্ধ, নিপীড়ন, অন্যায় কিংবা শোকের কাহিনি৷ আবার দৈনন্দিন জীবনের ছোট্ট, সুন্দর মুহূর্তগুলোও আছে: বাচ্চারা আইসক্রিম খাচ্ছে, কিংবা বাড়ির ছাদে কাপড় শুকোতে দেওয়া হয়েছে৷ উত্তাল সময়ে ছোট ছোট শান্তির দ্বীপ৷ এলসামির নিজের অত্যন্ত কাছের ছবি৷

এলসামি মানুষের আবেগ-অনুভূতি দেখান ঠিকই, কিন্তু সাংবাদিকতার ফিল্টার ছাড়া৷ তার ছবির মানুষজনের মুখচোখ সত্যিই সেই মুহূর্তটির প্রতিচ্ছবি; পোজ করা, সাজানো ছবি নয়৷ ‘‘এ ধরনের মুহূর্তে মানুষজন ক্যামেরার মুখোমুখি হতে চান না৷ কাজেই আমি যে মানুষদের ছবি তুলতে চাই, আমাকে তাদের দিকটা ভাবতে, তাদের অনুভূতি উপলব্ধি করতে হয়েছে৷” রাজপথের দাঙ্গার মধ্যেও এলসামিকে অদৃশ্য থাকতে হয়েছে – যতটা সম্ভব ৷ এলসামি জানেন, বিপদ ঘটতে পারে; তবুও বারংবার তার ক্যামেরা নিয়ে প্রস্তুত থেকেছেন সেই অপ্রত্যাশিত, হয়ত ট্র্যাজিক মুহূর্তটির জন্য৷ এক আন্দোলনকারীর ছবি তুলছেন, একটি নয়, একাধিক ফ্রেম জুড়ে৷ হঠাৎ সেই মানুষটির মাথায় গুলি লাগল৷ বাবার কোলে সন্তানের মৃতদেহ৷ পতিহারা নারীর শোক৷ ইতিহাসের বিরাট প্রেক্ষাপটে যেন এই সব ছোট ছোট ট্র্যাজেডি ঘটে চলেছে, আর সেগুলিকে ক্যামেরায় ধরে রাখছেন এলসামি৷

ফটোগ্রাফিও তো একটা ভাষা
মুসা’আব এলসামিকে মনোনয়ন করেন বব্স্-এর জুরি-সদস্য তারেক আমর৷ তিনি বলেন: ‘‘বব্স্-এ ১৪টি ভাষার মধ্যে প্রতিযোগিতা চলে৷ কিন্তু মুসা’আব-এর কোনো ভাষার প্রয়োজন নেই৷ তিনি ফটো দিয়ে ব্লগ করেন, কাজেই তিনি কি বলছেন, তা বোঝার জন্য কারো তার মাতৃভাষা জানার প্রয়োজন নেই৷” দশম বব্স্ প্রতিযোগিতায় সেরা ব্লগের শিরোপা জিতে এলসামি বলেছেন: এটা তার কাছে তার কাজ চালিয়ে যাবার, আরো কাহিনি শোনানোর একটা প্রেরণা – এবং সেই পন্থায় হয়ত নিজের দেশের পরিস্থিতিতেও কিছুটা পরিবর্তন আনা সম্ভব৷– ডিডব্লিউ।

বিজ্ঞান প্রযুক্তি শীর্ষ খবর