ফ্রিজ ও এসি’র কম্প্রেসার তৈরির কারখানা করছে ওয়ালটন। বছরে ২০ লাখ কম্প্রেসার তৈরি হবে ওয়ালটন কারখানায়। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাকি ১০ লাখ রপ্তানি হবে ইউরোপ আমেরিকার বাজারে। এর ফলে ফ্রিজ ও এসির মতো প্রযুক্তিপণ্যে স্বয়ংসম্পূর্ন হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সেইসঙ্গে কমবে দেশে তৈরি ফ্রিজ ও এসি বা এয়ারকন্ডিশনারের দাম।
আর.বি. গ্রুপ তথা ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ গাজীপুরের চন্দ্রায় শুরু করেছে কম্প্রেসার তৈরির কারখানা স্থাপনের কাজ। এরইমধ্যে নিয়োগ দেয়া হয়েছে উচ্চ পর্যায়ের প্রকৌশলীদের। পূর্ণ গতিতে চলছে গবেষণা ও উন্নয়নের কাজ।
ওয়ালটনের কম্প্রেসার প্রকল্প প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আম্বিয়া জানান, কম্প্রেসার ফ্যাক্টরির নির্মাণ কাজ চলছে। ২০১৬ সালে উৎপাদনে যাওয়ার টার্গেট রয়েছে। এই কারখানার উৎপাদন ক্ষমতা হবে বার্ষিক ২০ লাখ। এর মধ্যে ১০ লাখ ব্যবহার করা হবে দেশে ফ্রিজ ও এসি তৈরিতে। বাকি ১০ লাখ রফতানি হবে ইউরোপ-আমেরিকার মতো উন্নত বিশ্বের বাজারে।
তিনি জানান, ওয়ালটনের এই কম্প্রেসার হবে অতি উচ্চ মানের। ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে যার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
জানা গেছে, ওয়ালটন ব্র্যান্ডের কম্প্রেসারের নকশা তৈরি হয়ে গেছে অনেক আগেই। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর এই কম্প্রেসার হবে বাংলাদেশের আবহাওয়া ও সার্বিক পরিস্থিতিতে খুবই উপযোগী। কারখানায় সংযোজিত হবে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি। থাকবে বিশাল স্টিল, জিংক, এ্যালুমিনিয়াম ও কপার কাস্টিং এবং ফাউন্ড্রি। থাকবে বিশাল টেস্টিং ও মেটাল প্রসেসিং সিস্টেম। এর ফলে কম্প্রেসার তৈরির কারখানাটি হবে একটি কম্পোজিট বা সমন্বিত কারখানা।
কম্প্রেসার প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন প্রকৌশলী সারোয়ার হোসেন বলেন, কম্প্রেসার একটি জটিল টেকনোলজিক্যাল প্রোডাক্ট হলেও ওয়ালটন এর জন্য সকল প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই সম্পন্ন করেছে। কর্তৃপক্ষ প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে বিশ্বের যেকোনো দেশের কম্পেসারের তুলনায় ওয়ালটন কম্প্রেসার হবে বেশি টেকসই এবং কার্যকরি। হবে বিদ্যুত সাশ্রয়ী।
তিনি আরো জানান, বর্তমানে কম্প্রেসার আমদানি হলেও তা ওয়ালটনের নিজস্ব ডিজাইনে তৈরি। ফলে এটি অনায়াসে ১৫ বছরের বেশি নির্বিঘ্ন সার্ভিস দেয়। বিদ্যুতের ভোল্টেজ উঠানামাতেও সমস্যা হয় না। তিনি যোগ করেন, শুধু ফ্রিজ নয়-বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশী কম্প্রেসারেরও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
জানা গেল, কম্প্রেসার ফ্যাক্টরি হলে দেশে তৈরি ফ্রিজ এবং এয়ারকন্ডিশনারের দাম ব্যাপক কমে যাবে। ক্রেতারা সাশ্রয়ী মূলে আরো উচ্চমানের পণ্য পাবেন। নিজেদের কারখানায় ব্যবহারের পাশাপাশি অন্য দেশীয় উদ্যোক্তারাও ওয়ালটনের কম্প্রেসার ব্যবহার করতে পারবেন।
শিল্প বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ওয়ালটনের কম্প্রেসার তৈরির কারখানা শিল্পায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। এরফলে শুধু রেফিজারেটর শিল্পে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণই হবে না, বিশ্ব বাজারেও প্রতিনিধিত্ব করবে বাংলাদেশ। উচ্চ প্রযুক্তিনির্ভর পণ্য তৈরিতে বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলে খুব শিগগিরই বাংলাদেশ উন্নত দেশের কাতারে শামিল হতে পারবে।
এ প্রসঙ্গে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি (সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ) এর নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের শিল্পউদ্যোক্তাদের রফতানি করার সক্ষমতা অবশ্যই ভালো খবর। স্থানীয় ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে রফতানি করতে পারলে দেশের অর্থনীতির জন্য এটি একটি ইতিবাচক অগ্রগতি।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. মির্জা এবি আজিজুল ইসলাম বলেন, এটা একটি অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ। নানা প্রতিবন্ধকতার মাঝেও দেশীয় শিল্প এগিয়ে যাচ্ছে। সরকার গ্যাস বিদ্যুত অবকাঠামো সুবিধা দিলে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা আরো এগিয়ে যাবে।