চলতি মৌসুমে চাষের অনুকূল পরিবেশ, সার, কীটনাশক, উন্নতজাতের বীজ, ডিজেল ও বিদ্যুৎ সরবরাহ চাহিদা মত থাকায় লালমনিরহাটে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকের ঘরে ঘরে আনন্দের হাসি ও ফসল কাটার ধুম পড়েছে, যেন দম ফেলার ফুসরত নেই। সরকার কৃষকের ফসল উৎপাদনের চিন্তা মাথায় রেখে সার, কীটনাশক, বীজ বাজারে পর্যাপ্ত পরিমানে সরবরাহ নিশ্চিত করেছে। প্রকৃতিও সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। এই বাম্পার ধান উৎপাদনে উত্তরাঞ্চলের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে বলে আশা করছে গ্রামের সাধারণ মানুষ। চালের বাজারেও এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। চালের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় কেজি প্রতি ৫-৭ টাকা কমেছে।
লালমনিরহাট সারাদেশে মঙ্গার জেলা হিসেবে পরিচিত ছিল। এই জেলায় কৃষিভিত্তিক শ্রমবাজার ছিল না। ফলে মৌসুমী কৃষি ভিত্তিক দিনমজুরদের বেকার সমস্যায় পড়তে হতো। গ্রামীণ অর্থনৈতিক অবস্থাও ছিল নাজুক। কিন্তু বর্তমানে সেই অবস্থা নেই। ৫-৭ বছরেই উত্তরাঞ্চলের কৃষক ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এজন্য অবশ্য সরকার কৃষকের কৃষি উপকরণ, সার, বীজ, ডিজেল ও অর্থ যোগান নিশ্চিত করেছে।
লালমনিরহাট জেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সাফায়াত হোসেন জানান, প্রাকৃতি পরিবেশ, ধান চাষের অনুকূত অবস্থা থাকায় এ বছর জেলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার ৫টি উপজেলা আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম ও লালমনিরহাট সদর মিলে ৫২ হাজার ৩৪৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। এতে এই জেলায় প্রায় ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৬২৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হবে। এই জেলা চাষ যোগ্য ধানের জাত হচ্ছে, হাইব্রীড হীরা ১, হীরা ২, হীরা ৩ ও হীরা ৫, এসিআই ১ ও এসিআই ২। উফশী জাতের বিরি ধান ২৮, বিরি ধান ২৯ চাষ হয়েছে। মাত্র ৩০ হেক্টর জমিতে দেশী স্থানীয় জাত আশা বোরো ও কালী বোরো জাতের ধান চাষ হয়েছে।
মাঠ পর্যায়ে ঘুরে দেখা গেছে, পাঁকা ধানের মৌ মৌ গন্ধে মন ভরে উঠে। যেদিকে চোখ যায় শুধু সোনালী ধানের ক্ষেত বাতাসে দুলছে।
জেলা সদরের মোগলহাট কর্ণপুর গ্রামের কৃষানী মোছাঃ মমি বেগম (৪২) জানান, ধরলা নদীতে তার বাপ দাদার পৈত্তিক ভিটা, ফসলের জমি ভেঙ্গে গেছে। এবারেই প্রথম চরের প্রায় ১০ একর জমিতে ধান লাগিয়েছেন। আশংকা ছিল ধান কাঁটার আগে আগে যদি বন্যায় ভেসে যায়। আল্লাহর রহমতে বন্যা হয়নি। ধান কাঁটা শুরু হয়েছে। ধানের বাম্পার ফলন আশা করছেন। একই ধরনের দাবি মহিষখোঁচা বারোঘরিয়া গ্রামের চাষী আব্দুল হামিদ (৫৫)। তিনি জানান, ১৫-২০ বছরের মধ্যে এবারেই প্রথম ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এবারেই প্রথম ধান চাষের মৌসুমে সার, ডিজেল, কীটনাশক সরবরাহ সঠিক ছিল।
বৈশাখের শুরুতে দমকা হাওয়া ফসলের মাঠে ক্ষতির আশস্কা করেছিল। কিন্তু ধানের শীষের ভিতরে দুধ ধান হয়ে গিয়েছিল। তাই বাতাস ফসলের তেমন কোন ক্ষতি করতে পারেনি। ধান পেকেছে। এখন গ্রামে গ্রামে ধান কাটার ধূম পড়ে গেছে। কৃষক কৃষানী, কৃষিভিত্তিক শ্রমিকের এখন হাতে কাজ আর কাজ। তাদের যেন, দম ফেলার ফুসরত নেই। গ্রামের ঘরে ঘরে আনন্দ।