নারায়ণগঞ্জ: আধিপত্য বিস্তার থেকে অপরাধ

নারায়ণগঞ্জ: আধিপত্য বিস্তার থেকে অপরাধ

naray_fবন্দর নগরী নারায়ণগঞ্জের সর্বসম্প্রতিকালের সবচেয়ে সাড়া জাগানো ঘটনা — সাত ব্যক্তিকে অপহরণ ও তাদের হত্যার তদন্তে কিংবা জড়িতদের গ্রেফতারে সেখানকার পুলিশ বাহিনী এখনও বিশেষ কোনো সাফল্য দেখাতে পারেনি।

কিন্তু সেখানকার মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ও ক্ষোভের পাশাপাশি একটি প্রশ্ন সবাইকে তাড়িয়ে ফিরছে। আর তা হালো, কেন নারায়ণগঞ্জেই একের পর এক এ সব অপহরণ ঘটছে?

এ নিয়ে আমি যেসব বিশ্লেষকের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা আমাকে বলেছেন গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসাকেন্দ্র হিসেবে এই শহরে অবৈধ আয়ের সুযোগ বেশি থাকায় জেলায় নিয়ন্ত্রণ কায়েমের চেষ্টা থেকেই এখানে অপহরণের মতো অপরাধ বেশি ঘটছে।

দিনেদুপুরে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের একজন কাউন্সিলর এবং স্থানীয় একজন আইনজীবীসহ সাতজনকে অপহরণের পর হত্যা করে তাদের মৃতদেহ ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে শীতলক্ষ্যা নদীতে। এই ঘটনায় জড়িতদের পুলিশ এখনও ধরতে পারেনি। যার বিরুদ্ধে অভিযোগর তীর, তিনি এখনো পলাতক।

এই ঘটনার তদন্তভার থানার পুলিশের হাত থেকে সরিয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের হাতে দয়ো হয়েছে। কিন্তু এরপরও সেখানে অপহরণের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

বিশ্লেষকদের অনেকেই বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি এখন সাত খুনের তদন্তের দিকে। ফলে অপরাধ দমনে তাদের নজর সেভাবে থাকছে না।

সিনিয়র সাংবাদিক কাশেম হুমায়ুনের জন্ম নারায়ণগঞ্জে। তিনি বলছেন, নারায়ণগঞ্জের মানুষ আতংকিত হয়ে রয়েছেন, এবং অপরাধীরাও সেই সুযোগ নিচ্ছে।

তিনি বলছিলেন, “সবই ক্ষমতাসীনদের ব্যর্থতার কারণে ঘটছে, তা কিন্তু নয়। এখন বহুরকমের ঘটনা ঘটছে। ব্যক্তিগত শত্রুতাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অনেক চেষ্টা চলছে।”

আসলে ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক থেকে চট্টগ্রামের পরই এখন নারায়ণগঞ্জ গুরুত্ব পেয়ে থাকে, সেখানে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা থেকে কিছু গোষ্ঠী গড়ে উঠেছে।

মি. হুমায়ুন মনে করেন, এক শ্রেণীর রাজনীতিক ও প্রশাসনের একটি অংশসহ একটি মহল বিভিন্ন ধরনের অশুভ তৎপরতা চালাচ্ছে।

তিনি বলেন, “নারায়ণগঞ্জে গার্মেন্টস, নিটওয়্যারসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা বাড়ছে। এর ফলে বলা যায় এখানে কাঁচা পয়সাও উড়ছে। সেটাকে ধরতে হলে আধিপত্য বিস্তার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সেজন্যই রাজনীতিকদের নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন চক্র গড়ে উঠছে। যাদের কারণেই অপহরণ, খুনের মতো অপরাধগুলো বাড়ছে।”

নারায়ণগঞ্জের গার্মেন্ট ব্যবসায়ী এবং বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হকও মনে করেন যারা নিয়ন্ত্রণ বা আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে এ ধরণের অপরাধ বন্ধ করা সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, “অপরাধী চক্রগুলো সবসময়ই প্রশাসন ও ক্ষমতাসীনদের খুব কাছাকাছি থাকতে চায়। সেই তকমা তাদের গায়ে লাগলে কাজে সুবিধা হয়। যেমন সাত জনের হত্যার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত নূর হোসেন এখন ক্ষমতাসীনদের সাথে থাকলেও এর আগে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি যখন যে ক্ষমতায় থেকেছে, তাদের সাথেই সে ছিল।”

আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বিষয়ক মন্ত্রীসভা কমিটির একজন সদস্য জানিয়েছেন, তাদের সর্বশেষ বৈঠকেও নারায়ণগঞ্জের সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা হয়েছে।

সেখানকার পরিস্থিতি সামাল দিতে আলোচনায় উঠে আসা সব বিষয়কে বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান। সূত্র: বিবিসি।

বাংলাদেশ শীর্ষ খবর