পার্বত্যাঞ্চলের রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি জেলায় কাঁঠালের বাম্পার ফলন হলেও কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না।
রাঙ্গামাটি কৃষি তথ্য অফিসার তরুন ভট্টাচার্য জানান, রাঙ্গামাটিতে গত বছর ২৭৯০ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের চাষ করা হয়েছিল। কিন্তু এ বছর এক ধাপ এগিয়ে ২৮৫৭ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের চাষ করা হয়।
তিনি আরো বলেন, এ বছর বৃষ্টি না হওয়ার কারণে কাঁঠালের অনেক মচি ঝড়ে যায়। এ কারণে কাঁঠালের উৎপাদন গত বছরের চেয়ে এবছর সন্তোষজনক। এদিকে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে বোট বোঝাই করে কাঁঠাল বাজারে আসছে।
লংগদু উপজেলার কাঠাল চাষিরা জানান, বিভিন্ন এলাকায় চলতি বছর কাঁঠালের ভালো ফলন হলেও অনেক কৃষক কাঙ্খিত মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
উপজেলার ভাসান্যাদাম,বাইট্টাপাড়া, শিলকাটছড়া, বৈরাগী বাজার এবং মাইনী বাজারে এখন থেকে প্রতি সপ্তাহে ১০ থেকে ২০টি ইঞ্জিন বোট কাঁঠাল বোঝাই করে উপজেলা থেকে রাঙ্গামাটিতে আনা হয়।
পরে গাড়িতে করে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ঢাকা, চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি হয়ে থাকে। কিন্তু এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কাঁঠালের নায্যমূল্য পাচ্ছেন না বলে কাঁঠাল বিক্রি করতে আসা কয়েক জন কৃষক অভিযোগ করেন।
ভাসান্যাদম ইউনিয়নের চাল্লাতলী গ্রামের বাসিন্দা ও কৃষক মো. লেয়াকত হোসেন বলেন, প্রতি বছরের মত এ বছরও আমার কাঁঠাল বাগানে এক থেকে দু’হাজার কাঁঠাল ধরলেও প্রতিটি কাঁঠালের মূল্য বিশ টাকা থেকে ত্রিশ টাকা করে পাইকারি বিক্রি করতে হচ্ছে। তাতে এ পর্যন্ত ষাট হাজার টাকার মতো কাঁঠাল বিক্রি করা সম্ভব হয়েছে।
কিন্তু গত বছরে আমার বাগান থেকে প্রায় নব্বই হাজার টাকার কাঁঠাল বিক্রি করেছিলাম। সে হিসেবে আমি মনে করি অন্যান্য বারের তুলনায় এ মৌসুমে কাঁঠাল পানির দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে যদি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেত তাহলে আমরা আমাদের উৎপাদিত ফসলের মূল্য আরো অধিক পেতাম।
ভাসান্যদম ইউনিয়নের শিলকাটা চড়া গ্রামের কৃষক মো. মনির হোসেনসহ বাজারে কাঁঠাল বিক্রি করতে আসা অনেক কৃষকরা মনে করছেন কাঁঠাল চাষে সরকারি-বেসরকারি অনুদান বা পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পার্বত্য এলাকার কৃষকরা কাঁঠাল চাষে আরো আগ্রহী হবে।
এদিকে বাজারে আসা ক্রেতা মো. নুরনবী বলেন, আমরা পাইকারি ক্রেতারা বাইরে থেকে বাজারগুলোতে কাঁচামাল ক্রয় করতে আসি। এরপর বাজারে বিক্রেতাদের দর দেখি। তারপর আমরা আমাদের আসল দামের কথা বলে কাঁঠালের দর নির্ধারণ করে মালামাল ক্রয় করি।
উপজেলা চেয়ারম্যান মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন অন্যবারের তুলনায় এবছর কাঁঠালের ফলন ভালো হয়েছে। বিশেষ করে লংগদু উপজেলার মাইনীসহ কয়েকটি গ্রামে কাঁঠালের কদর অনেক বেশি। এখানকার পাহাড় ও টিলার ওপর চাষীরা কাঁঠালের বাগান করে কাঁঠাল বিক্রি করে অনেক পরিবার বর্তমানে সাবলম্বী। প্রতি বছরের মতো এবারেও গ্রীষ্মে কাঠাঁল বিক্রি শুরু হয়েছে এবং চলতি বর্ষা মৌসুমের শেষ পর্যন্ত কাঁঠালের এই রমরমা কেনাবেচা চলবে।