যশোরের কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের ৭টি সমস্যা সমাধানের দাবিতে ১৫ কিশোর নিজেদের শরীর কেটে অভিনব প্রতিবাদের মাধ্যমে নানা সমস্যার সমাধান দাবি জানিয়েছে। রোববার এ ঘটনা ঘটেছে।
ওই কিশোরদের কারও বুক, কারও হাত আবার কারও পা দিয়ে অঝোরে রক্ত ঝরছে। তাদের শরীরের ক্ষতবিক্ষত অংশে প্রাথমিক চিকিত্সা দেওয়া হয়েছে।
চিকিত্সা দেওয়া স্কুল হেলথ ক্লিনিক যশোরের উপসহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সাহাবুর রহমান বলেন, অন্তত ১৫ কিশোর কাচের টুকরা দিয়ে ফালি ফালি করে বুক, হাত, পাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটেছে। তাদেরকে এখানে প্রাথমিক চিকিত্সা দেওয়া হয়েছে।
সমস্যাগুলো খতিয়ে দেখার জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল হাসানকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
ওই দিন তুহিন খান ও আলমগীর হোসেন নামের দুই পুলিশ সদস্য কিশোরদের হামলায় আহত হয়েছেন। তাদের যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের কিশোর, কর্মকর্তা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রবিবার সকাল নয়টায় অ্যাসিম্বিলির পর কিশোরদের কয়েকজন কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক মো. সাহাবুদ্দিনকে তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা জানায়। সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলেও কিশোরেরা তাতে সন্তুষ্ট হয়নি। এ সময় অন্তত ১০০ কিশোর জোটবদ্ধ হয়ে তাত্ক্ষণিক তাদের আবাসিক ও প্রশাসনিক ভবনের জানালার কাচ ভাঙচুর শুরু করে।
১৫ কিশোরদের কয়েকজনের অভিযোগ, তাদের যে পরিমাণ ভাত ও তরকারি দেওয়া হয়, তা খেয়ে পেট ভরে না। ট্রেডভিত্তিক শিক্ষার কোনো উপকরণ নেই, সেখানে তেমন কিছু শেখানো হয় না। কর্মকর্তা ও পুলিশেরা গালি দিয়ে কথা বলে। ওষুধ দেওয়া হয় না। অভিভাবকেরা দেখা করতে এলে তাদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করা হয়। দেখা করতে গেলে পুলিশকে টাকা দিতে হয়।
রান্নার জন্য রাখা কাঠের চালা নিয়ে ও ইট ছুড়ে তারা কেন্দ্রের পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা করে। পুলিশের একটি গাড়ির কাচ ভেঙে ফেলে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এ সময় কিশোরদের মধ্যে অন্তত ১৫ জন জানালার ভাঙা কাচ দিয়ে নিজেদের শরীর কেটে ক্ষতবিক্ষত করে ক্ষোভ প্রকাশ করে।
সংঘর্ষের খবর পেয়ে যশোরের জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজুর রহমান, পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান, সিভিল সার্জন আতিকুর রহমানসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। তারা বিক্ষুব্ধ কিশোরদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, কিশোরেরা সাতটি সমস্যা চিহ্নিত করেছে। এসব সমস্যা খতিয়ে দেখার জন্য তিন সদস্যের তদন্ত কমটি গঠন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি গাজীপুরের টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের কিশোরেরাও একই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছিল।