সরকারকে উদ্দেশ্যে করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, আমরা সবাই একসাথে আছি। আর আপনার সাথে আছে খুনি এরশাদ। সে জিয়াউর রহমানের খুনি, জেলারেল মঞ্জুর খুনি। তার বিচার হবে। আপনারা সব সময় খুনিদের সাথে জোট করেন, খুনিদের সাথে আপনাদের বসবাস। খুনিকে উপদেষ্টা বানিয়ে পার পাবেন না।
এরশাদকে পাশে রাখার জন্যই তার বিচারের রায় পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
রবিবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢাকা মহানগর বিএনপি আয়োজিত গণঅনশন কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন।
নির্বাচন কারো কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আন্দোলনে যাবার আগেই নির্দলীয় সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিন। এ নির্বাচন দেশে ও বিদেশে গ্রহণযোগ্য নয়।
সারাদেশ মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামালীগ অবৈধ সরকার। তারা দেশে অবৈধ কর্মকান্ড শুরু করেছে। সারা দেশে আজ হাহাকার। একদিকে একদলীয় শাসন আরেকদিকে শোষণ চলছে। একদিকে মানুষ কাঁদছে, তাদের চোখে পানি। আরেক দিকে সরকারের গায়ে কেবল রক্ত আর রক্ত।
খালেদা জিয়া বলেন, আজকে সারাদেশব্যাপী চলছে গুম-খুন ও অত্যাচার নির্যাতন। সারাদেশ যেন আজ মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। এর বিরুদ্ধেই আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি। এই কর্মসূচিতে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ সংহতি জানিয়েছেন তাই আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই।
আওয়ামীলীগ অবৈধ সরকার মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, তারা জোর করে ক্ষমতায় এসে যতসব অবৈধ কাজ শুরু করেছে। ছাত্রলীগ যুবলীগ সারাদেশে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে। এই সরকারের তাদের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা নেই। কারণ তারা নিজেরাও এসবে জড়িত।
নারায়ণগঞ্জের গুম প্রসংঙ্গে তিনি বলেন, আজকে সারাদেশে অনশন চললেও নারায়নগঞ্জে চলছে হরতাল। সেখানে আপনারা দেখেছেন স্বজন হারানোদের কী আহাজারি। আজকে শুধু নারায়নগঞ্জ নয়, সারাদেশ যেন মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। শুধু নারায়নগঞ্জেই নয়, নীলফামারী, সাতক্ষীরা, লক্ষীপুর ও খুলনাতেও সরকারি বাহিনী তা-ব চালাচ্ছে জনগনের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে। অথচ তাদের বিচার হয়না, তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। কারণ তারা সরকারেরই লোক।
খালেদা জিয়া অভিযোগ করে বলেন, নুর হোসেন একজন প্রতিষ্ঠিত ক্রিমিনাল। জনগন তার বিচার দেখতে চায়। তাকে কারাগারে দেখতে চায়। ঘটনার ৭দিন পরে কেন তার বাড়িতে অভিযান চালানো হলো। ৭দিন তার বাড়িতে রক্তমাখা মাইক্রোবাস, জামা পরেছিল। এতদিন প্রশাসন সেখানে যান নাই কারণ প্রশাসনও তাদের কাছে অসহায়।
তিনি বলেন, আওয়ামীলীগ সরকারের কাছে গুম হওয়াদের ফিরিয়ে দিতে দাবি জানাচ্ছি। অবিলম্বে তাদের পরিবারের কাছে ফেরত দিতে হবে।
সরকারকে খুনি আখ্যা দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, এই সরকারের হাতে শুধু রক্ষ আর রক্ত। এরা যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন এই রক্ত ঝরতেই থাকবে। আজকে মানুষ কোন প্রতিবাদ করতে পারেনা। কর্মসূচি দিতে পারেনা। সুশীল সমাজের শান্তিপূর্ন কর্মসূচিতেও তারা বাধা দেয়। তাদের ভাগ্য ভাল যে তাদের উপর হাত তোলেনি। আমাদের একটাই দাবি, জনগনের নিরাপত্তা দিতে হবে। জনগনের কল্যানের জন্যই আমরা আন্দোলন করব।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আমরা সবসময় জনকল্যানমুখি কর্মসূচি দিয়ে থাকি। কারণ আমরা এই দেশের মানুষ। এই দেশের মানুষের উন্নতি আমরা চাই। আওয়ামীলীগ সরকার জনগণের কল্যান চায়না। তারা গোলামী করে সবকিছু বিকিয়ে দিতে চাইছে।
তিনি বলেন, মানুষ আজকে কর্মসূচির জন্য অপেক্ষায় আছে। এসব গুম হত্যা বন্ধ না হলে আমরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।
আওয়ামীলীগ আজীবন ক্ষমতায় থাকবেনা মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, সরকার প্রতিনিয়ত নতুন নতুন গল্প তৈরী করে। তারা যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখই গুম খুন হয়েছে। পুলিশকে দলীয় কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। যেসব এলাকার পুলিশ বেশি বেপরোয়া তাদের প্রতিও জনগনের দৃষ্টি রয়েছে। আওয়ামীলীগ আজীবন ক্ষমতায় থাকবেনা। একদিন আপনাদের হিসাব দিতে হবে। কত লোককে আপনার গুম করেছেন, নির্যাতন করেছেন।
তিনি আরও বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই। যে দেশে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই সে দেশে কখনোই আইনের শাষন প্রতিষ্ঠা হতে পারেনা।
কামান চালিয়ে ও গুলি করে জনগনের আন্দোলন বন্ধ করা যাবেনা উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, আমরা অনেক মার খেয়েছি। অনেক অত্যাচার সহ্য করেচি। আমরা আর কোন স্বজনের চোখের পানি দেখতে চাইনা। এর জন্য প্রয়োজন সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে আরো কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে এই অপশক্তিকে বিদায় করা হবে। তখন এইসব কামান টামান এখানে চলবেনা। এই কামান হয়তো একদিন অন্যদিকে চলবে। জনগনের সাথে চলবে। এপিসি, কামান, ও গুলি করে জনগনের আন্দোলন বন্ধ করা যাবেনা।
অবিলম্বে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেবার দাবি জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিন। তাদের এতো ভয় কেন। তারা জানে জনগণ ভোটের সুযোগ পেলে তাদের ভরাডুবি হবে। কিন্তু তাদের ভোটের ব্যবস্থা করতেই হবে। নতুন নির্বাচন না দিয়ে আওয়ামীলীগ পার পাবেনা। নতুন নির্বাচন দিতে তাদের বাধ্য করা হবে।
তথ্যমন্ত্রী ইনুকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, এই চামচারা অবৈধ নৌকায় উঠে বেশি লাফালাফি করছে। জনগণ জানে গণবাহিনী তৈরী করে তারা কতো মানুষ হত্যা করেছে। সে হিসেব আমাদের কাছে আছে। এরা এখন বিনা-ভোটে মন্ত্রী এমপি সেজেছে।
খালেদা জিয়া বলেন, আমদেরকে বুঝতে হবে, দেশ আজ কোন দিকে যাচ্ছে। দেশ আজ কঠিন সময় অতিক্রম করছে। আওয়ামীলী ছাড়া সবাই একসাথে আছি।
এর আগে গণঅনশন কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন, বিকল্প ধারার চেয়ারম্যান ডা.একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, জাতীয় পার্টির সভাপিত কাজী জাফর আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজ উদ্দিন আহমেদ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা মুক্তিযোদ্ধা ডা.জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য ড.রেদওয়ানুল্লাহ শাহেদী, জাগপা প্রধান শফিউল আলম প্রধান, জাপা চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, খেলাফত মজলিসের আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা ইসহাক, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, মেজর অব. হাফিজ উদ্দিন বীর বিক্রম, সাদেক হোসেন খোকা, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এ্যাড. জয়নাল আবেদীন, যুগ্ম মহাসচিব আমানুল্লাহ আমান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, নাজিম উদ্দিন আলম, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদিক শিরিন সুলতানা প্রমুখ।