বনানী ও মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারসহ রাজধানীর একাধিক ফ্লাইওভার ও হাতিরঝিল প্রকল্প বাস্তবায়নে দেশিয় প্রকৌশলীদের অবদানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব প্রকল্পে বিদেশিদের সাহায্য লাগেনি। কিন্তু কাজ হয়েছে বিশ্বমানের।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতেই প্রকৌশলী এম এ জব্বার, এম এ রশীদ, এফ আর খান, জহুরুল ইসলামের অবদান স্মরণ করেন। দেশের উন্নয়ন এবং উত্পাদন কার্যক্রমে প্রকৌশলীদের ভূমিকার গুরুত্বের কথাও তুলে ধরে তিনি বলেন, আপনাদের কর্মদক্ষতা এবং আন্তরিকতার ওপর নির্ভর করে দেশ দ্রুত উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের সফলতা তুলে ধরে বলেন, বিদ্যুত্ চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে রাশিয়ান ফেডারেশনের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত্ কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। মংলা ও কক্সবাজারে আরো তিনটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত্ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে। বড় পুকুরিয়া বিদ্যুত্ কেন্দ্রের তৃতীয় ফেইজের কাজ শুরু হয়েছে। ২০০৯ সালে বিদ্যুতের উত্পাদন ছিল ৩২০০ মেগাওয়াট। আর এখন বিদ্যুত্ উত্পাদনের সক্ষমতা ১১ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়ে গেছে। গত ৩০ মার্চ রেকর্ড ৭ হাজার ৫৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার বঙ্গোপসাগরে নতুন কূপ খননের কাজ শুরু করেছে। সেখানে গ্যাস ও তেল পাওয়া যাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নের জন্য পটুয়াখালীতে ‘পায়রা’ নামক তৃতীয় সমুদ্র বন্দর চালু করেছে। সেখানে ১৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুত্ কেন্দ্রও স্থাপন করা হবে।
সোলার বিদ্যুতের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যেখানে বিদ্যুত্ নেই, সেখানে তার সরকার সোলার বিদ্যুত্ চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রকৌশলীদের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রকৌশলীদের দাবি-দাওয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে তার সরকার প্রকৌশলীদের এই ইনস্টিটিউিশনের জন্য ১০ বিঘা জমি দেয়। তিনি বলেন, আইইবি ভবন শুরুর প্রথম পর্যায়ে ৫ কোটি টাকা এবং গত মেয়াদে (২০০৯-২০১৩) ২য় পর্যায়ে ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের জন্য প্রায় ২৩ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকার মেঘনা-গোমতি সেতুর পশ্চিম পাশে ইঞ্জিনিয়ারিং স্টাফ কলেজের জন্য ৭২ বিঘা জমি নামমাত্র মূল্যে দিয়েছে। ২য় পর্যায়ের নির্মাণ কাজের জন্য গত মেয়াদে প্রায় ২৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আইইবি প্রাঙ্গণে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিফলক নির্মাণের জন্য এলজিইডির মাধ্যমে ৩ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। পূর্বাচলে আইইবি’র জন্য ২ বিঘা জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া আইইবি খুলনা ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রের জন্য জমি বরাদ্দ প্রদান দেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তত্কালীন বিআইটিগুলোর জন্য তার সরকার ৪৭০ কোটি টাকা প্রদান করে, যেগুলো পরবর্তীতে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়েছে। তার সরকার ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। গত মেয়াদে ৭টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে আমরা মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ-এর সভাপতি শামীমুজ্জামান বসুনিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মিয়া মোহাম্মদ কাইয়ুম, ঢাকা কেন্দ্রের সভাপতি মোহসীন আলী ও সাধারণ সম্পাদক এ কে এম শরীফুল ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বুয়েটের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর এমিরিটাস আবদুল মতিন পাটোয়ারীকে তার কর্মময় জীবনে অসামান্য অবদানের জন্য আইইবি স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে এ পদক পরিয়ে দেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ৫০ জন ইঞ্জিনিয়ারের হাতে এ্যাসোসিয়েশন মেম্বার ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স (এএমআইই) ডিগ্রী পদক ও ৪২ জনের হাতে পেশাদার প্রকৌশলীর প্রিঞ্জ পদক প্রদানের ঘোষণা দেন।