পদ্মা সেতু নিয়ে দেশে বিদেশে রাজনীতি হয়েছে :প্রধানমন্ত্রী

পদ্মা সেতু নিয়ে দেশে বিদেশে রাজনীতি হয়েছে :প্রধানমন্ত্রী

pm.setuপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বড় কোন প্রকল্প গ্রহণ, প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে বিদেশি পরামর্শকের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্ব ব্যাংকের সরে যাওয়াটি ছিল একটি ‘রাজনৈতিক খেলা’। এ প্রকল্প নিয়ে দেশি-বিদেশি অনেক রাজনীতি হয়েছে। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এটি আমরা নিজেরাই করবো এবং ইনশাল্লাহ তা পারবো। তিনি বলেন, কথায় কথায় আর পরমুখাপেক্ষিতা নয়। আমরা নিজেরাই নিজেদের কাজ করতে চাই।গতকাল শনিবার রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন (আইইবি) মিলনায়তনে আইইবি’র ৫৫তম কনভেনশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। শেখ হাসিনা সরকারের নেয়া পাবলিক প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)-কে নিজস্ব সদস্য দ্বারা কয়েকটি পরামর্শক টিম গঠনের পরামর্শ দিয়ে বলেন, আমাদের অনেক মেধাবী ও যোগ্য জনশক্তি থাকা সত্ত্বেও বিদেশি পরামর্শকরা উন্নয়ন প্রকল্পগুলো থেকে বড় অঙ্কের অর্থ নিয়ে যাচ্ছে। এখন থেকে পাবলিক প্রকল্পগুলোতে যেন স্থানীয় পরার্মশকরা অগ্রাধিকার পায় সে ব্যাপারে তিনি সকলের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করে বলেন, বিদেশি পরার্মশক নিয়োগ দিয়ে আমাদের সরকার আর জনগণের অর্থের অপব্যবহার করতে চায় না। আর এ জন্য কেবল প্রয়োজন দেশিয় প্রকৌশলীদের আত্মবিশ্বাস ও নৈতিকতা। কারণ এ দেশের মাটি ও পানির সঙ্গে আপনাদের সম্পর্ক রয়েছে, বিদেশিদের নেই। কোন প্রকল্প বাস্তবায়নে আপনার চেয়ে বিদেশিরা ভাল পরামর্শ দিতে পারবে না। সর্বশেষ একনেক বৈঠকে বিদেশি পরামর্শকের পাশাপাশি দেশিয় পরামর্শক নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও উপস্থিত প্রকৌশলীদের জানান তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, বিদেশি কনসালটেন্টরা এসে কাগজপত্র ঘেঁটে চলে যাবেন। এর চেয়ে দেশি পরামর্শক নিয়োগ করলে অর্থের সাশ্রয় হয়।

বনানী ও মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারসহ রাজধানীর একাধিক ফ্লাইওভার ও হাতিরঝিল প্রকল্প বাস্তবায়নে দেশিয় প্রকৌশলীদের অবদানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব প্রকল্পে বিদেশিদের সাহায্য লাগেনি। কিন্তু কাজ হয়েছে বিশ্বমানের।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতেই প্রকৌশলী এম এ জব্বার, এম এ রশীদ, এফ আর খান, জহুরুল ইসলামের অবদান স্মরণ করেন। দেশের উন্নয়ন এবং উত্পাদন কার্যক্রমে প্রকৌশলীদের ভূমিকার গুরুত্বের কথাও তুলে ধরে তিনি বলেন, আপনাদের কর্মদক্ষতা এবং আন্তরিকতার ওপর নির্ভর করে দেশ দ্রুত উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবে।

প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের সফলতা তুলে ধরে বলেন, বিদ্যুত্ চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে রাশিয়ান ফেডারেশনের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত্ কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। মংলা ও কক্সবাজারে আরো তিনটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত্ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে। বড় পুকুরিয়া বিদ্যুত্ কেন্দ্রের তৃতীয় ফেইজের কাজ শুরু হয়েছে। ২০০৯ সালে বিদ্যুতের উত্পাদন ছিল ৩২০০ মেগাওয়াট। আর এখন বিদ্যুত্ উত্পাদনের সক্ষমতা ১১ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়ে গেছে। গত ৩০ মার্চ রেকর্ড ৭ হাজার ৫৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার বঙ্গোপসাগরে নতুন কূপ খননের কাজ শুরু করেছে। সেখানে গ্যাস ও তেল পাওয়া যাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নের জন্য পটুয়াখালীতে ‘পায়রা’ নামক তৃতীয় সমুদ্র বন্দর চালু করেছে। সেখানে ১৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুত্ কেন্দ্রও স্থাপন করা হবে।

সোলার বিদ্যুতের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যেখানে বিদ্যুত্ নেই, সেখানে তার সরকার সোলার বিদ্যুত্ চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রকৌশলীদের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

প্রকৌশলীদের দাবি-দাওয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে তার সরকার প্রকৌশলীদের এই ইনস্টিটিউিশনের জন্য ১০ বিঘা জমি দেয়। তিনি বলেন, আইইবি ভবন শুরুর প্রথম পর্যায়ে ৫ কোটি টাকা এবং গত মেয়াদে (২০০৯-২০১৩) ২য় পর্যায়ে ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের জন্য প্রায় ২৩ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকার মেঘনা-গোমতি সেতুর পশ্চিম পাশে ইঞ্জিনিয়ারিং স্টাফ কলেজের জন্য ৭২ বিঘা জমি নামমাত্র মূল্যে দিয়েছে। ২য় পর্যায়ের নির্মাণ কাজের জন্য গত মেয়াদে প্রায় ২৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আইইবি প্রাঙ্গণে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিফলক নির্মাণের জন্য এলজিইডির মাধ্যমে ৩ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। পূর্বাচলে আইইবি’র জন্য ২ বিঘা জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া আইইবি খুলনা ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রের জন্য জমি বরাদ্দ প্রদান দেয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তত্কালীন বিআইটিগুলোর জন্য তার সরকার ৪৭০ কোটি টাকা প্রদান করে, যেগুলো পরবর্তীতে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়েছে। তার সরকার ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। গত মেয়াদে ৭টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে আমরা মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ-এর সভাপতি শামীমুজ্জামান বসুনিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মিয়া মোহাম্মদ কাইয়ুম, ঢাকা কেন্দ্রের সভাপতি মোহসীন আলী ও সাধারণ সম্পাদক এ কে এম শরীফুল ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বুয়েটের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর এমিরিটাস আবদুল মতিন পাটোয়ারীকে তার কর্মময় জীবনে অসামান্য অবদানের জন্য আইইবি স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে এ পদক পরিয়ে দেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ৫০ জন ইঞ্জিনিয়ারের হাতে এ্যাসোসিয়েশন মেম্বার ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স (এএমআইই) ডিগ্রী পদক ও ৪২ জনের হাতে পেশাদার প্রকৌশলীর প্রিঞ্জ পদক প্রদানের ঘোষণা দেন।

 

অন্যান্য অর্থ বাণিজ্য আন্তর্জাতিক ইসলামী জগত জেলা সংবাদ বাংলাদেশ বিজ্ঞান প্রযুক্তি রাজনীতি শীর্ষ খবর