প্রতিটা দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে সেই দেশের শিল্প-সংস্কৃতি। শিল্পী মাত্রই মনের গভীরে অনুভব করেন দেশের প্রতি অঙ্গীকার পূরণের হাহাকার। সেই তাড়না থেকেই সু-অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী নির্মাণ করেছেন ভাষা আন্দোলন নিয়ে প্রামাণ্য চিত্র ‘বায়ান্নর মিছিলে’। সম্প্রতি এই প্রামাণ্য চিত্র নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে।
শুরুতেই রোকেয়া প্রাচী জানান, মাতৃভাষার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা আর মমতাববোধ থেকেই তিনি নির্মাণ করেছেন ‘বায়ান্নর মিছিলে’ নামের প্রামাণ্য চিত্রটি। তিনি বলেন বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতার মূল স্তম্ভ হল ভাষা আন্দোলন। ভাষা আন্দেলনের মাধ্যমেই আমরা স্বাধীনতা আন্দোলনের পথ প্রশস্ত করতে পেরেছি। অথচ খুব খারাপ লাগে যে ভাষা সৈনিকদের নিয়ে কোন বিস্তারিত তথ্য আমাদের হাতে নেই। এমনকি ভাষা শহীদদের নিয়েও ব্যাপকভাবে কোন কাজ করেনি কেউ। আমাদের অবশ্যই ইতিহাস জানতে হবে। আমাদের ইতিহাসের উজ্জ্বল স্মৃতি অক্ষুন্ন অবস্থায় রেখে যেতে হবে আগামী প্রজন্মের জন্য। এই তাগিদ থেকে আমি সম্পূর্ণ নিজ অর্থায়নে নির্মান করি ‘বায়ান্নর মিছিলে’ নামের তথ্যচিত্রটি। এটি একটি অলাভজনক কাজ। সবকিছুর ঊর্দ্ধে আমাদের দায়িত্ববোধকে নিশ্চিত করার জন্যই আমাদের এধরণের কাজ করতে হবে। ’
প্রামাণ্য চিত্রটিতেরোকেয়া প্রাচী ভাষা শহীদ আবুল বারকাতকে মূখ্য প্রেক্ষাপট হিসাবে তুলে ধরেছেন। তথ্যচিত্রটির জন্য তিনি পশ্চিমবাংলার মুর্শিদাবাদের বাবলা গ্রামে গিয়ে শ্যুটিং করেছেন। সেখানে আবুল বারকাতের স্মৃতি বিজরিত সব জায়গায় ঘুরে বেরিয়েছেন। তথ্যচিত্রটি করতে যেয়ে বিষয়ের গভীরে ঢুকে রোকেয়া প্রাচী রীতিমত শিহরিত হয়েছেন। মুর্শিদাবাদের বাবলা গ্রামে প্রতিবছর মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ৭ দিন ব্যাপি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন তারা। সেখানে আবুল বারকাতের বাড়ি আছে,তার নামে জাদুঘর আছে। ভাষা আন্দোলনের শহীদদের মধ্যে একমাত্র আবুল বারকাতই ছিলেন ছাত্র।তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। প্রাচী ‘বায়ান্ন’র মিছিলে’ তথ্যচিত্রটির রুপায়ন করতে যেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় দেড়মাস ঘুরে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। পুরো তথ্যচিত্রটি শেষ হতে সময় লেগেছে ১ বছর। বায়ান্ন’র মিছিলে তথ্যচিত্রটি প্রচার করে চ্যালেন আই। এছাড়াও লেজার ভিশনের ব্যানারে তথ্যচিত্রটি ডিভিডি আকারে বাজারে পাওয়া যায়। খুব শিগগিরি এটি চ্যানেল নাইন দেখাবে বলে জানালেন প্রাচী।
ভাষা আন্দোলনের ওপর এরকম আর কোন কাজ করার ইচ্ছে আছে কি না জানতে চাইলে প্রাচী বলেন, ‘অবশ্যই আছে। আমি আবুল বারকাতকে নিয়ে কাজ করতে যেয়ে এর সাথে যুক্ত অনেক সৈনিককে খুঁজে পেয়েছি। তাদের নিয়েও আমার নতুন পরিকল্পনা আছে। আমি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ওপর একটা তথ্যচিত্র অর্ধেক শেষ করেছি,ঢাকা বিভক্তির ওপর আর একটা তথ্যচিত্রের কাজ করছি। ভাষা সৈনিকদের নিয়ে আরো কাজ করতে চাই। যেহেতু নিজস্ব অর্থায়নে কাজ করি তাই ধীরে এগোতে হচ্ছে। তবে আমি বাংলাদেশের সংগ্রামময় অর্জনকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরতে কাজ করে যেতে চাই।’