বেড়েই চলছে অপহরণ ও গুম-হত্যার ঘটনা। সাধারণ পেশাজীবী থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী এমনকি খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষজন রয়েছেন অপহরণ ও গুমের তালিকায়। তাছাড়া বাদ যাচ্ছেন না রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরাও। এক্ষেত্রে বিএনপি নেতাদের দিয়ে শুরু হলেও এখন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও গুমের শিকার হচ্ছেন। আর তাই এই ঘটনায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে ক্ষমতাসীন দলটির নেতা-কর্মীদের মধ্যেও।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নয়, নিজ দলের নেতাকর্মীদের অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নারায়ণগঞ্জের অপহরণের পর হত্যার শিকার হওয়া জেলার সিনিয়র আইনজীবী চন্দন সরকার, প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ অন্য সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। দল ক্ষমতায় থাকার পরও এভাবে ছয়জনের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদেরও আতঙ্কিত করে তুলেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, “দেশকে অশান্ত এবং সরকারকে অস্থিতিশীল করতেই একটি বিশেষ মহল এসব করছে। তারা এখন দলে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের গুম করছে।”
আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা এ ঘটনায় বিএনপিকে দায়ি করে বক্তব্য দিলেও চরম সমালোচনার মুখে এবং নিজ দলের নেতা-কর্মী অপহরণ ও হত্যার শিকার হওয়ায় আওয়ামী লীগের একটি অংশও এবার মুখ খুলছে। এ ধরনের ঘটনার নিন্দার পাশাপাশি সরকারেরও কঠোর সমালোচনা করছেন তারা।
রাজধানীতে একটি অনু্ষ্ঠানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সরকারের সমালোচনা করে বলেছেন, “সম্প্রতি গুম-অপহরণ সীমা অতিক্রম করেছে।”
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, দলের ভেতরে এ নিয়ে উদ্বেগের কথা শীর্ষস্থানীয় নেতাদের জানানো হয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে সামনের পথচলা দুরুহ হয়ে পড়বে এমন আশঙ্কাও পেয়ে বসেছে তাদের। শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এ সম্পর্কে তাদের দুর্ভাবনার কথা জানা গেছে।
এদিকে সৃষ্ট আতঙ্ক-উৎকণ্ঠা দূর করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মাঠে নামার নির্দেশ দেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। নারায়ণগঞ্জে অপহরণের পর শীতলক্ষ্যা নদীতে ছয়জনের লাশ উদ্ধারের ঘটনার পর বুধবার রাতে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে গণভবনে ডেকে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জানা গেছে, গণভবনে সার্বিক বিষয়ে আলোচনাকালে প্রধানমন্ত্রী তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি এসব খুন, গুম বা অপহরণের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করার জন্য স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন।
এছাড়া গত দুই দিনে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন গোয়েন্দা প্রধানসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্তাদেরও এমন নির্দেশ দিয়েছেন বলে সরকারের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।