আজ মহান মে দিবস, শ্রমিকের অধিকার আদায়ের দিন

আজ মহান মে দিবস, শ্রমিকের অধিকার আদায়ের দিন

worker_1mayআজ পহেলা মে, মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের আন্তর্জাতিক সংহতি প্রকাশের এক ঐতিহাসিক গৌরবময় দিন। আজ থেকে ১২৮ বছর আগে ১৮৮৬ সালের পহেলা মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের ‘হে’ মার্কেটে শ্রমের উপযুক্ত মূল্য এবং দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে ধর্মঘট আহ্বান করে শ্রমিকরা। এতে প্রায় ৩ লাখ মেহনতি মানুষ অংশ নেয়। এক পর্যায়ে আন্দোলনরত ক্ষুব্ধ শ্রমিকদের রুখতে মিছিলে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে। দাবি আদায়ের জন্য সেদিন শ্রমিকদের বুকের তাজা রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল শিকাগোর রাজপথ। আন্দোলনে অংশ নেয়ার অপরাধে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয় গ্রেফতারকৃত ৬ শ্রমিককে। কারাগারে বন্দিদশায় এক শ্রমিক নেতা আত্মহননও করেন।

শ্রমিকদের এই আত্মত্যাগ ও রক্তস্নাত ঘটনার মধ্যদিয়ে দৈনিক কাজের সময় ৮ ঘণ্টা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের ঐতিহাসিক বিজয় হয়। শ্রমিকদের আত্মত্যাগের বিনিময়েই সেদিন মালিকরা স্বীকার করে নিয়েছিল শ্রমিকরাও মানুষ। তারা যন্ত্র নয়, তাদেরও বিশ্রাম ও বিনোদনের প্রয়োজন রয়েছে। ১৯৮৯ সালে প্যারিসে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে দিবসটিকে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়। সেই থেকে বিশ্বব্যাপী দিনটি মহান মে দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

বিশ্বের সকল দেশেই আজ পালিত হচ্ছে মহান মে দিবস। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশেও ব্যাপক কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। আজ সরকারি ছুটির দিন। সংবাদপত্র অফিসও বন্ধ থাকবে। মে দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র, নিবন্ধ ও সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে। বেতারসহ বিভিন্ন টিভি চ্যানেলগুলোতে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার হচ্ছে।

মে দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এডভোকেট, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ তার বাণীতে বলেন, মহান মে দিবস উপলক্ষে আমি বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল মেহনতি মানুষকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই।

তিনি বলেন, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়, কর্মঘণ্টা নির্ধারণ, কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৮৮৬ সালে আমেরিকার হে মার্কেটে যে আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটেছিল তা আজ সারাবিশ্বে  ছড়িয়ে পড়েছে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, মহান মে দিবস আজ কেবল অধিকার আদায়ের দিন নয়, বরং সম্মিলিত মেহনতি মানুষের দেশগড়ার অঙ্গীকারও বটে। বর্তমান সরকার শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে সুস্থ কর্মপরিবেশ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ শিল্প সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা, জাতীয় উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, মহান মে দিবসে শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা, শ্রমিকদের ন্যায্যমজুরি, সুন্দর ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাক, এ প্রত্যাশা করি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, মহান মে দিবস শ্রমজীবী-মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার গৌরবোজ্জ্বল দিন। এ উপলক্ষে আমি বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল মেহনতি মানুষকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।

তিনি বলেন, ১৮৮৬ সালের এ দিনে আমেরিকার শিকাগো শহরে শ্রমিকরা আত্মাহুতি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন শ্রমজীবী মানুষের মৌলিক অধিকার। আমি তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
 
শেখ হাসিনা বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন বঞ্চিত, মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছেন। তিনি বলেছিলেন, ‘বিশ্ব আজ দু’ভাগে বিভক্ত, একদিকে শোষক, আরেকদিকে শোষিত-আমি শোষিতের পক্ষে’। তিনি পরিত্যক্ত কলকারখানা জাতীয়করণ করে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী এবং শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন।

তিনি বলেন, আমরা দেশের শ্রমজীবী মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ও কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি আশা করি, মহান মে দিবসের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে শ্রমিক এবং মালিক পরস্পর সুসম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে কল-কারখানার উৎপাদন বৃদ্ধিতে আরও নিবেদিত হবেন।

মহান মে দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল শ্রমজীবী মানুষকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তার বাণীতে বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিজেকে সবসময় একজন শ্রমিক হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ব ও স্বাচ্ছন্দবোধ করতেন। শ্রমিকদের দুটো হাতকে তিনি উন্নয়নের চাবিকাঠি ভাবতেন। এদেশের শ্রমজীবী ও পরিশ্রমী মানুষের কল্যাণে তিনি যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন।

খালেদা জিয়া বলেন, মহান মে দিবস ঐতিহাসিকভাবে একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন। শ্রমজীবী মানুষের রক্তঝরা ঘামেই বিশ্ব সভ্যতার বিকাশ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নতুন দিগন্ত উম্মোচিত হয়। শ্রমিকের ঐতিহাসিক অবদানের ফলেই বিশ্ব অর্থনীতি চাঙ্গা হয়। অথচ গভীর পরিতাপের বিষয় আজও বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে নিপীড়িত শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল শ্রমিকদের ন্যায্য দাবির প্রতি সম্মান ও শ্রমের মর্যাদা সমপর্কে সব সময় আপোষহীন সংগ্রাম করে গেছে। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায় এবং তা রক্ষায় আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি পালনে কখনোই পিছপা হইনি।

শ্রমিকদের প্রতি জাতীয়তাবাদী দলের এ ভূমিকার ধারাবাহিকতায় সরকারে থাকতে বিএনপি এদেশের শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করেছে জানিয়ে বেগম জিয়া বলেন, শ্রম আইন সংস্কার ও আধুনিকীকরণ, বেতন কমিশন, গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যুনতম মজুরি নির্ধারণ, বাস্তবায়ন ও তাদের বোনাস প্রাপ্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং শ্রমিক কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন, গার্মেন্টস শ্রমিকদের সন্তানদের চিকিৎসা ও তাদের লেখা পড়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থাগ্রহণের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের শ্রমিক সমাজের ভাগ্যোন্নয়নে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ ও প্রয়োগ করেছি। খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের সার্বিক কল্যাণের লক্ষ্যে আমাদের এ প্রচেষ্টা আগামীতেও অব্যাহত রাখার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।

বাণীতে ১৮৮৬ ইং সালের এদিনে শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার আদায় করতে গিয়ে আমেরিকার শিকাগো শহরে ‘হে মার্কেটে’ জীবনদানকারী প্রতিবাদী শ্রমিকদের স্মৃতির প্রতি খালেদা জিয়া গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।

বাংলাদেশ শীর্ষ খবর