চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী যে সংঘর্ষ ও নাশকতার ঘটনা ঘটেছে এর দায় বহন করতে হবে দেশটির সরকার এবং প্রতিদ্বন্দ্বী সবগুলো রাজনৈতিক দলকে।
বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে নিউ ইয়র্কভিত্তিক প্রভাবশালী মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচ একথা জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়- বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, বিতর্কিত ওই নির্বাচনকে ঘিরে সংঘটিত সংঘর্ষে দেশব্যাপী শতাধিক ব্যক্তি নিহত ও আহত হয়েছেন।
হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচের এশিয়া মহাদেশের আঞ্চলিক পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস্ বলেন, “দেশটির স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত এটাই ছিল সবচাইতে রক্তক্ষয়ী নির্বাচন এবং এখন পর্যন্ত দেশটিতে এরকম যত ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর বিষয়ে অবিলম্বে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।”
তিনি আরো বলেন, “রীতিমতো অবিবেচক এসব সংঘর্ষের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দেশটির প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদেরই যে শুধু জনগণের কাছে দায় স্বীকার করে বিবৃতি প্রদান করতে হবে তাই নয়, বরং এসব সংঘর্ষের সঙ্গে জড়িত দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।”
‘বন্দুকযুদ্ধের মুখে গণতন্ত্র: বাংলাদেশে বিরোধীপক্ষের সংঘর্ষ এবং ২০১৪ সালের নির্বাচন পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে সরকারের নির্যাতন’ শীর্ষক ৬৪ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটিতে নির্বাচন বর্জন করে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ডাকে দেশব্যাপী সংঘর্ষের ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়-বিভিন্ন উপলক্ষকে কেন্দ্র করে বিরোধী দলগুলোর সদস্য নেতা-কর্মীরা দেশব্যাপী সড়কগুলোতে যাত্রীবাহী বাস, মোটরচালিত অটোরিকশা এবং পণ্যবোঝাই ট্রাকে ক্রমাগত পেট্রোল বোমা ছুড়ে গেছে। বেশ কিছু ঘটনার ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে শিশুদের ওপরেও হামলা চালিয়েছে বিরোধীপক্ষের নেতা-কর্মীরা।
এছাড়াও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, অপহরণের পর গুম করে ফেলা, নির্বিচারে গ্রেফতার ও সর্বসাধারণের ব্যক্তিগত সম্পদ বিনষ্টকরণের সঙ্গে দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যেভাবে জড়িত ছিলেন, সে বিষয়েও গবেষণালব্ধ তথ্য বিস্তারিতভাবে নথিবদ্ধ করেছে হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচ।
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন ও অন্যান্য মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে অভিযুক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোকে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত বাংলাদেশ সরকারের। এছাড়াও নিজ নিজ দলের সমর্থকরা যেসব সংঘর্ষের ঘটনার ঘটিয়েছে, তার বিরুদ্ধে স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে নিজেদের অবস্থান ঘোষণা করে জনসম্মুখে বিবৃতি প্রদান করা উচিত প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের।
প্রতিবেদনটি তৈরির জন্য ১২০ জনেরও বেশি মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছে হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচ। তাদের মধ্যে ছিলেন ঘটনার শিকার ব্যক্তি ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা। বিরোধী দলের কর্মী ও সমর্থক এবং নিরাপত্তা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো জনগণের ওপর এসব নির্যাতনের সঙ্গে নির্বাচনপূর্ব, নির্বাচনকালীন এবং নির্বাচন পরবর্তী সময়ে জড়িত ছিল বলে তথ্য পেয়েছে মানবাধিকার সংস্থাটি।