৩৯ বছরেও জীবন বীমার অফিস নেই ২২ জেলায়

৩৯ বছরেও জীবন বীমার অফিস নেই ২২ জেলায়

প্রতিষ্ঠার ৩৯ বছর পেরুলেও দেশের ২২ জেলায় এখনও কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি জীবন বীমা করপোরেশন।

যদিও প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আগামী চার বছর তথা ২০১৫ সালের মধ্যে এসব জেলায় সেলস অফিস চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে এ সময়ের মধ্যে নতুন তিন লাখ গ্রাহক করার পাশাপাশি সংস্থার বার্ষিক প্রিমিয়াম আয়ের পরিমাণ ৯১০ কোটি টাকায় নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।

এ লক্ষ্যে বীমা স্কিম বাড়ানোর ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সম্প্রতি সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ৫৮তম বৈঠকে রাষ্ট্রায়ত্ত এ সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।

এদিকে ২২ জেলায় কার্যক্রম শুরু করতে না পারাকে সমস্যা হিসেবে দেখছেন না প্রতিষ্ঠানটি।

জীবন বীমার গণসংযোগ শাখার ম্যানেজার শেখ খায়রুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ‘গ্রাহক সংখ্যার সম্ভ্যবতা ওপর হিসাব করে নতুন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়। যেসব জেলায় এখনও কার্যক্রম শুরু হয়নি সেখানে সেলস অফিস দিয়ে কাজ চালানো হয়। আর কিছু জেলায় আমাদের গ্রাহকের সংখ্যাই নগন্য।’

১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির জারি করা ৯৫ নম্বর অধ্যাদেশবলে বীমা শিল্প রাষ্ট্রায়ত্তকরণের পর জীবন বীমা ব্যবসায় নিয়োজিত ৩৭টি কোম্পানির সম্পদ ও দায় দেনা নিয়ে প্রথমে সুরমা ও রূপসা নামে দু’টি করপোরেশন গঠন করা হয়।

পরে ১৯৭৩ সালে প্রণীত ছয় নম্বর আইনবলে ওই দু’টি করপোরেশন সমন্বয়ে জীবন বীমা করপোরেশন প্রতিষ্ঠিত হয়।

সংসদীয় কমিটিতে উপস্থাপিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বর্তমানে একটি প্রধান কার্যালয়, সাতটি রিজিওনাল অফিস, ১০টি জোনাল অফিস, ৬৬টি সেলস অফিস ও ৩৪৬টি শাখা অফিসের মাধ্যমে মোট ৩০টি স্কিম নিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছে জীবন বীমা।

তবে খোদ ঢাকা বিভাগের গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ী ও মাদারীপুর জেলায় এর কার্যক্রম নেই।

এছাড়া বান্দরবন, রাঙামাটি, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, লক্ষ্মীপুর, হবিগঞ্জ, বরগুনা, পঞ্চগড়, নড়াইল, মেহেরপুর, মাগুড়া, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, সুনামগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গা জেলায়ও সংস্থাটির কোনও কার্যালয় নেই।

তবে আগামী চার বছরের মধ্যে এসব জেলায় সেলস অফিস চালুর কথা জানিয়েছে জীবন বীমা করপোরেশন। বাকি ৪২ জেলায় তাদের সেলস অফিস রয়েছে।

জানা গেছে, সংস্থাটির পরিচালনা পরিষদ গত বছরের এপ্রিলে পাঁচ বছর মেয়াদি কর্মপরিকল্পনার অনুমোদন দেয়, যাতে আগামী বছরের মধ্যে নতুন দেড় লাখ গ্রাহককে জীবন বীমার আওতায় আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

এছাড়া আগামী বছরে ৫৪৩ কোটি টাকার প্রিমিয়াম আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

একই পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৩ সালের মধ্যে দুই লাখ, ২০১৪ সালের মধ্যে আড়াই লাখ ও ২০১৫ সালের মধ্যে তিন লাখ নতুন গ্রাহক করার লক্ষ্য রয়েছে।

ওই বছরগুলোতে বার্ষিক প্রিমিয়াম আয় যথাক্রমে ৬৪১ কোটি, ৭৬৩ কোটি ও ৯১০ কোটিতে পৌঁছানোর লক্ষ্য রয়েছে বলেও সংসদীয় কমিটিকে জানানো হয়েছে।

এ লক্ষ্যে চলতি বছরে নতুন তিনটি স্কিম চালু করা হয়েছে।

এছাড়া আগামী চার বছরের মধ্যে আরও নতুন চারটি স্কিম বাজারে ছাড়ারও পরিকল্পনা রয়েছে।

বর্তমানে জীবন বীমা করপোরেশনসহ মোট ১৭টি জীবন বীমা প্রতিষ্ঠান কাজ করছে জানিয়ে এ প্রতিবেদনে সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেছেন, ‘দেশের মোট জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগই বীমা সুবিধাবঞ্চিত। এক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে জীবন বীমা কর্পোরেশনকেই বীমা সেবার পরিধি বৃদ্ধির ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। এ কারণেই ওই কর্ম-পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।’

প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়েছে, গত দশকে (২০০১-২০১০) সরকারকে উৎসে আয়কর বাবদ ৭২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে জীবন বীমা করপোরেশন।

এছাড়া প্রতিবেদনের সঙ্গে ওই দশকের শেষ পাঁচ বছরের সংক্ষিপ্ত হিসাব তুলে দেওয়া হয়েছে।

হিসাব থেকে জানা গেছে, ২০০৬ সালে ২২৩ কোটি ৪০ লাখ, ২০০৭ সালে ২৬৪ কোটি ৯৮ লাখ, ২০০৮ সালে ৩০৪ কোটি ৩২ লাখ, ২০০৯ সালে ৩৩৪ কোটি ৬৮ লাখ এবং ২০১০ সালে ২৫১ কোটি ৫৯ লাখ টাকার প্রিমিয়াম আয় করেছে করপোরেশন।

এ পাঁচ বছরে সংস্থাটির প্রিমিয়াম আয়ের প্রবৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে ১০, ১৯, ১৫, ১০ ও পাঁচ শতাংশ।

এছাড়া এ বছরগুলোয় যথাক্রমে ৪৩ কোটি ২৩ লাখ, ৭৯ কোটি ১৮ লাখ, ৯৯ কোটি ৩৯ লাখ, ১৩১ কোটি ৪২ লাখ ও ১৩২ কোটি ৩১ লাখ টাকা লাভ করেছে সংস্থাটি।

প্রসঙ্গ: জনবল সংকট

জীবন বীমা করপোরেশন বিদ্যমান অর্গানোগ্রামটি ১৯৮৪ সালে তৈরি করা হয়েছে।

এতে মোট দু’ হাজার ৭০টি পদ থাকলেও বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে এক হাজার ২৫০ জন কর্মরত আছেন। অর্থাৎ সংস্থাটির ৮২০টি পদ শূন্য রয়েছে।

অর্থ বাণিজ্য