এই গরমে মারাত্মক এক রোগ হিট স্ট্রোক। এতে কেবল সাময়িক ভাবে অজ্ঞান হয়ে যাওয়াই নয়, একটু অসাবধানতায় এটি মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে। তীব্র তাপপ্রবাহের সাথ সাথে বেড়েই চলেছে হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা। প্রচন্ড গরমে আপনার শরীর থেকে ঘাম বেরিয়ে গিয়ে পানিশূন্য হয়ে গেলে মস্তিষ্কের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা লোপ পায়। এর ফলে দেহের তাপমাত্রা বেড়ে ১০৪-১০৬ ডিগ্রীতে চলে যেতে পারে। খুব দ্রুত এই তাপমাত্রা কমিয়ে আনতে না পারলে রোগীর মৃত্যুবরণ করতে পারে।
কিন্তু হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার জন্যে আছে কিছু সহজ উপায়, জেনে নিনঃ
১। সাদা রঙের পোষাকঃ
এই গরমে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে বেছে নিন সাদা রঙের পোষাক। হালকা রঙের পোষাক গাড় রঙের পোষাকের মত তাপ শোষণ করে না। তাই আপনার দেহের তাপমাত্রা থাকবে নিয়ন্ত্রণে।
২। ব্যাগে রাখুন স্যালাইন পানিঃ
ব্যাগে রাখুন স্যালাইন পানি। চেষ্টা করুন একটু পর পর তাতে চুমুক দিতে। ফ্রুটি বা টেস্টি স্যালাইন খাবেন না। ওরস্যালাইন বা ঘরে তৈরি স্যালাইন খেতে পারেন।
৩। ছাতা ও সানগ্লাসঃ
গরম থেকে বাঁচতে ব্যবহার করুন ছাতা ও সানগ্লাস। এতে সূর্যের সরাসরি স্পর্শ থেকে বেঁচে যাবে আপনার শরীর। ছাতা থাকুক বা না থাকুন চেষ্টা করুন ছায়াময় রাস্তা ধরে হাঁটার। কেননা ছাতা আপনাকে উপরিভাগের তাপ থেকে রেহাই দিলেও রাস্তার পিচ থেকে প্রতিফলিত তাপে আপনার ক্ষতি হবে অনেকটাই।
৪। ঢিলেঢালা পোষাক পরুনঃ
এই সময়টায় আঁটসাঁট পোষাকের বদলে ঢিলেঢালা পোষাক পরুন। যাতে সহজেই পোষাকের ভেতর দিয়ে বাতাস চলাচল করতে পারে। এতে শরীরে ঘাম কম হবে এবং দেহের তাপমাত্রা কম বাড়বে।
৫। প্রচুর পানি পান করাঃ
বাইরে বেরুলে প্রচুর পানি পান করুন। সাধারণ আবহাওয়ার চেয়ে বেশী পরিমাণ পানি পান করুন গরমের সময়ে। কেননা প্রচুর ঘামের মাধ্যমে দেহ সহজেই পানিশুন্য হয়ে পড়ে। প্রচুর পানি পানে দেহে পানিশুন্যতার সম্ভাবনা কমে আসবে।
৬। সানস্ক্রীনঃ
রোদে বেরুবার আগে সানস্ক্রীন অবশ্যই ব্যবহার করুন। কারণ, সানস্ক্রীন আপনার ত্বককে কেবল সূর্যের বেগুনী রশ্নি থেকেই রক্ষা করে না বরং এটি আপনার ত্বককেও রাখে ঠান্ডা। রোদে পোড়া থেকে সানস্ক্রিন
চামড়াকে রক্ষা করে বলেই শরীর যথেষ্ট ঠাণ্ডা থাকে। সানস্ক্রিন ব্যবহারের আগে এসপিএফ-এর পরিমাণটা দেখে নিন।সাধারনত ১৫ এসপিএফ ব্যবহার করাই ভাল। তবে রোদ বেশি থাকলে এসপিএফ-এর মাত্রা যেন ৩০ হয়।
৭।এড়িয়ে চলুন চা-কফি ও কোল্ড ড্রিঙ্কসঃ
চা, কফি, কোল্ড ড্রিঙ্কস বা এলকোহল জাতীয় পানীয় এড়িয়ে চলুন। এগুলো আপাতত আপনাকে তৃপ্তি দিলেও শরীরে দীর্ঘমেয়াদী পানিশূন্যতা তৈরী করে। এর চেয়ে লেবুর শরবত, তরমুজ, বাঙ্গি খেতে পারেন।
৮। বেলা ১১ টা থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত ভারী শ্রম নয়ঃ
এ সময়টুকুতে সূর্যের তাপ অত্যন্ত প্রখর থাকে। তাই এ সময়টুকুতে ভারী কাজ, ব্যায়াম, রোদে বেরুনো যতটা সম্ভব কম করুন। প্রয়োজনীয় কাজগুলো এর আগে বা পরে সেরে ফেলুন।
৯। ঘামরোধক কিছু ব্যবহার করবেন নাঃ
গরমের চিটচিটে ঘাম রোধ করতে অনেকেই ঘামরোধক লোশন ব্যবহার করেন। কিন্তু এতে শরীরের তাপমাত্রা বেরুতে না পেতে হিটস্ট্রোকের সম্ভাবনা চরম মাত্রায় পৌঁছায়।
১০। বেরুবার আগে গোসল করে নিনঃ
রোদে বেরুবার আগে ঠান্ডা পানিতে গোসল করে নিন। তপ্ত আবহাওয়ায়ও শরীর বেশ কিছুক্ষণ ঠান্ডা থাকবে।
হিট স্ট্রোক প্রতিরোধ করা খুব কঠিন কিছু নয়। প্রয়োজন স্রেফ একটুখানি সচেতনতা। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।