তৃণমূল বিএনপির নেতা-কর্মীদের হতাশ না হয়ে বরং উচ্চাশা ধরে রাখার জন্য দলের শীর্ষ নেতা যতোই আশার বাণী শোনান না কেন, কোনোভাবেই দলে অবস্থা ফিরছে না। কারণ যে তৃণমূলই পারে দলকে ঘুরিয়ে দাঁড় করিয়ে দিতে, সেই তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাই কোনো আস্থার জায়গা পাচ্ছেন না। অন্তত এই মুহূর্তে উদ্যমী হওয়ার কোনোকিছুই দেখছেন না তারা।
সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন উপলক্ষকে কেন্দ্র করে দলটির মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা জ্যেষ্ঠ নেতাদের কাছে নিজেদের অতৃপ্তির কথা জানিয়েছেন। তাদের এই হতাশা এখন দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যেও অনেকটাই ছড়িয়ে পড়েছে।
শনিবার রাজধানীতে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, সরকারের ‘অন্যায়’ কর্মকাণ্ড নিয়ে কথা বলতে তার আর ভালো লাগে না কারণ তারা বধির হওয়ার ভান করে আছেন।
ফখরুল বলেন, “হলমার্ক, ডেস্টিনি আর শেয়ারবাজার কেলেংকারির কথা ভুলে গেছে জনগণ। যে জনগণ ১৯৫২ সালে ভাষার দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছিলেন, আর ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়েও স্বাধীনতা অর্জনের জন্য লড়াই করেছিলেন- সেই জনগণ কিভাবে এতটা সহনশীল হতে পারে তা আমার কাছে রীতিমতো অবিশ্বাস্য। সবকিছু মুখ বুজে মানুষ কেন সহ্য করছেন তা আমার মাথায় ঢুকছে না।”
তিনি বলেন, “আমার আর ভাষণ দিতে ইচ্ছা করে না। একই কথার বারংবার পুনরাবৃত্তি করতেও আমার ভালো লাগে না। কাদের বলবো আমি এসব কথা? বলে কী পাবো আমরা?”
দৃশ্যত দলটির কোনোকিছুই এখন সঠিক পথে চলছে না- বিএনপির প্রত্যাখ্যান করা জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেও ভালো কিছু হয়নি, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পরেও ভালো কিছু হচ্ছে না।
মাসব্যাপী সংঘর্ষ ও রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের পরেও নিজেদের প্রত্যাখ্যাত সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা থেকে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দল আওয়ামী লীগকে রুখতে পারেনি বিএনপি।
এমনকি যখন জনগণের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো সামনে আসে, তখনও জনসমর্থন আদায় করতে অনেকটাই ব্যর্থ হয়েছে দলটি। জানুয়ারির নির্বাচনের পরে প্রথমবার বিএনপির সাড়াজাগানো কোনো কর্মসূচি ছিল তিস্তা লংমার্চ, আর কল্পনাতীতভাবেই কোনো দিক থেকে এই কর্মসূচিটিকেও সফল বলে দাবি করতে পারবে না বিএনপি।
গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনগুলোর সময় কখনোই দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের পথে দেখা যায়নি বলে বারবার কথা শুনিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কিন্তু তারপরেও লংমার্চের সময়েও এই একই ধারা বজায় রেখেছিলেন নেতারা। হাতেগোণা মাত্র কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা লংমার্চে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এমনকি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের শরিক বাকি দলগুলোর জ্যেষ্ঠ নেতারাও লংমার্চে উপস্থিত ছিলেন না।
যেভাবে লংমার্চকে গ্রহণ করেছিলেন তৃণমূল বিএনপির নেতা-কর্মীরা, তাতে তাদের হতাশাই স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। দলের অধিকাংশ জেলা শাখাই কোনোরকমে কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়েছিলেন। সেখানে এমন কোনোকিছুই ছিল না বা ঘটেনি যা থেকে প্রমাণিত হয় যে লংমার্চটি দীর্ঘদিন পরে দলের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি ছিল।
অনেকদিন ধরেই দলপ্রধানসহ দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা দাবি করে আসছিলেন, দলকে আবারো সুসংগঠিত করা হচ্ছে এবং দলকে সুসংগঠিত করার এই কাজ যে মুহূর্তে সম্পন্ন হবে ঠিক তারপরেই ‘অবৈধ’ সরকারকে ‘উৎখাত’ করতে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হবে।
কিন্তু এক্ষেত্রেও দৃশ্যত খুব কমই অগ্রগতি দেখা গেছে। দলপ্রধান খালেদা জিয়া স্বয়ং বিভিন্ন উপলক্ষকে কেন্দ্র করে বার বার ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি পুনর্গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করলেও এখনো পর্যন্ত কমিটি গঠন নিয়ে কোনো ঘোষণাই দিতে পারেননি দলের শীর্ষ নেতারা।
এমনকি দলের সহযোগী অঙ্গসংগঠনগুলোর মধ্যে শুধু শ্রমিক সংগঠন শ্রমিক দলই এখন পর্যন্ত এর কাউন্সিল অনুষ্ঠিত করেছে। কিন্তু না কেন্দ্রীয় শ্রমিক দল আর না শ্রমিক দলের ঢাকা মহানগর শাখা- দলীয় কোন্দলের কারণে কেউই কোনো কমিটি গঠন করতে পারেনি এখনো পর্যন্ত।
সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির দলীয় অনেকগুলো পেশাজীবী সংগঠনকে বেশ খোলাখুলিই বলতে শোনা গেছে যে অস্তিত্ব বজায় রাখতে হলে দলটিকে এর আন্দোলনের কৌশল পরিবর্তন করতে হবে।
কিন্তু এখনো জনস্বার্থ বাদ দিয়ে বিএনপি যেভাবে আগের মতোই রাজনৈতিক স্বার্থ নিয়েই এগোচ্ছে, তাতে দলটি স্রেফ তার আগের কৌশলেই ফেরত যাচ্ছে। আর এ থেকে সহজেই বোঝা যায় যে তৃণমূল বিএনপির জন্য পরিস্থিতি এখনো অপরিবর্তিতই আছে। সূত্র: ঢাকা ট্রিবিউন।