যেভাবে পানি সরিয়ে নিচ্ছে ভারত, তাতে ৩০ বছরের মধ্যে দেশের ৬০ ভাগ এলাকা মরুভূমিতে পরিণত হবে বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক পানি বিশেষজ্ঞ এসআই খান।
রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে শনিবার সকালে এক গোলটেবিল বৈঠকে এসআই খান এ মন্তব্য করেন। গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে প্রগতিশীল প্রকৌশলী ও স্থপতি ফোরাম নামের একটি সংগঠন।
আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এসআই খান বলেন, ‘ভারত অভিন্ন নদীর উজানে যেসব বাঁধ দিয়েছে এবং দিচ্ছে, এর সবই রাজনৈতিক বাঁধ। এর মাধ্যমে ভাটির দেশ বাংলাদেশকে তারা নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, ধ্বংস করতে চায়।
ভারত তিস্তা এলাকা থেকে ৫০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়েছে। আমাদের পানিতে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে, সেখানেও আমাদের সমান অধিকার রয়েছে। অথচ এ বিষয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করা হচ্ছে না।’
তিনি মনে করেন, ফারাক্কা বাঁধ ভেঙে ফেলা উচিত। কারণ, ওই বাঁধ বাংলাদেশ কেন, ভারতের এক টাকারও কাজে আসেনি। ভারতের পরিবেশেরও সীমাহীন ক্ষতি সাধিত হয়েছে। তাই সবার স্লোগান হওয়া উচিত ‘নদী বাঁচাও দেশ বাঁচাও, বাঁচাও বাংলাদেশ’।
অভিন্ন নদীতে বাঁধ ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মৎস্য, কৃষি, মাছ, পশু, পাখি, গাছপালা যেভাবে মরে যাচ্ছে, এতে প্রতি বছর ১৩৫ বিলিয়ন টাকা ক্ষতি হচ্ছে। এর জন্য আমরা আন্তর্জাতিক আদালতেও যেতে পারি।’
পানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক বলেন, তিস্তা বাঁধের পানি পেতে হলে সঠিক তথ্য তুলে ধরে আন্দোলন করতে হবে। ২০১৪ সালের পর থেকে ভারত ন্যক্কারজনক কাজ করছে। তারা আমাদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে।
তিস্তা বাঁধ দেওয়ায় বছরে ১৫ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। এ ক্ষতির জন্য ভারতকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘তুমি তো বাঙালি, তাহলে কেন তিস্তা চুক্তিতে বাধা দিয়েছ? বাংলাকে মরুভূমি করতে চাও?’
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফোরামের আহ্বায়ক সুব্রত সরকার। তিনি পানি-সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য চীন, ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানকে নিয়ে যৌথ অববাহিকা কর্তৃপক্ষ গঠন করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পানিসম্পদ কৌশলের অধ্যাপক সাব্বির মোস্তফা খান, প্রগতিশীল আইনজীবী ফ্রন্টের কেএম হাফিজুর রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।