বিক্ষোভ, সমাবেশ, গণঅনশনসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি৷ তবে এখনই সরকার পতনের আন্দোলনে যাচ্ছে না দলটি৷ শনিবার দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সাংবাদিক সম্মেলন করে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন৷
তিনি বলেন, দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, হত্যা, গুম, অপহরণ ও হামলার প্রতিবাদে এই কর্মসূচি দিচ্ছে বিএনপি৷
এদিকে বিরোধী জোটকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার জন্য আবারও মাঠে নামছে ক্ষমতাসীন জোট৷ ১৪ দলীয় এই জোটের নেতারা বলছেন, বিএনপি রাজপথে নামলে তারাও ঘরে বসে থাকবেন না৷ রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমেই তাদের মোকাবেলা করা হবে৷ ইতিমধ্যে তারা তিন বিভাগীয় শহরে সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে৷
শনিবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলটির নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন৷
প্রাথমিকভাবে যে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে তার মধ্যে আছে, আগামী ২৮ এপ্রিল জেলা-উপজেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ, মিছিল এবং ৪ মে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সারাদেশে গণঅনশন৷
কর্মসূচি ঘোষণা করে মির্জা ফখরুল বলেন, বিরোধী দলের রাজনীতি স্তব্ধ করতেই দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হচ্ছে৷ অবিলম্বে এগুলো বন্ধ করতে হবে৷ না হলে রাজনীতি করা দূরে থাক, এদেশে মানুষও বসবাস করতে পারবে না৷ সরকারের দমননীতির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তিনি৷ ফখরুল আরও বলেন, তারা অনৈতিকভাবে নির্বাচন করে অবৈধভাবে ক্ষমতায় থেকে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছে৷ বিরোধী দলের ওপর রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করছে৷ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে খুব শিগগিরই একটি নির্বাচনে দেবে বলে আশা করেছিল বিএনপি৷ যার মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে৷ কিন্তু তারা তা করেনি৷ উল্টো আওয়ামী লীগ অলিখিতভাবে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করছে৷
সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত দলটির যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনু ডয়চে ভেলেকে বলেন, নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথসভায় নতুন কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷
সেই সিদ্ধান্তই জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷ তিনি বলেন, সরকার বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যেভাবে নির্যাতন চালাচ্ছে তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও ছাড়িয়ে গেছে৷ এখন এই অগণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে রুখে দাঁড়াতে হবে৷ মিনু বলেন, এই অবস্থা বন্ধ না হলে দেশে কেউ নিরাপদ থাকবে না৷ হেয় প্রতিপন্ন ও রাজনীতি থেকে সরিয়ে রাখার চেষ্টার ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবেই সরকার দুদকের মাধ্যমে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি৷
এদিকে বিরোধী জোটের কর্মসূচি মোকাবিলায় মাঠে নামছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট৷ জাতীয় নির্বাচন, সরকার গঠন ও উপজেলা নির্বাচনের কারণে গত তিন মাস এই জোটের কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি দেখা যায়নি৷ এখন বিরোধী জোটকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার জন্য আবারও মাঠে নামছে তারা৷ বিশেষ করে তিস্তার পানির জন্য বিএনপি লং মার্চ করার পরই আওয়ামী লীগ নড়েচড়ে বসেছে৷
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, বিএনপির লংমার্চ কর্মসূচি নিছক ভারত বিরোধিতার জন্য৷
নির্বাচনকালীন সময়ে বন্ধু রাষ্ট্র ভারতকে উস্কে দিতে এই কর্মসূচি পালন করছে তারা৷ তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে ১০ বছরেও এ নিয়ে কথা বলেনি৷ আমরা গঙ্গার পানি প্রবাহ নিশ্চিত করেছি৷ এটারও (তিস্তা) সমাধান হবে৷ এজন্য বিএনপিসহ সবাইকে সহযোগিতা করা ও সমঝোতায় আসতে হবে৷ ভারতের নির্বাচনের পর যে সরকারই ক্ষমতায় আসবে তাদের সঙ্গে কূটনৈতিকভাবে সমঝোতার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের এই উপদেষ্টা৷
১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বিএনপির নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে তিনটি বিভাগীয় জেলায় তিনদিনে তিনটি টিমে ভাগ হয়ে সফর করবেন তারা৷ এরমধ্যে ২৬ এপ্রিল খুলনায়, ২৭ এপ্রিল ঢাকার সাভারে ও ২৮ এপ্রিল ময়মনসিংহ শহরে সমাবেশ করবে ১৪ দলীয় জোট৷ তিনি বলেন, জনসমর্থনহীন বিএনপি ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বানচাল ও রাজপথে সরকার বিরোধী শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারায় হতাশ হয়ে পড়েছে৷ ভেঙে গেছে সাংগঠনিক শক্তি৷ যার জন্য নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করতে এখন বিক্ষোভ ও গণঅনশনের মতো কর্মসূচি দিচ্ছে৷-ডিডব্লিউ।