তারপরও বেড়েছে পোশাক রপ্তানি

তারপরও বেড়েছে পোশাক রপ্তানি

রানা প্লাজার মত বড় দুর্ঘটনা ও নানা অপপ্রচার ; যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি বা রপ্তানিতে বিশেষ সুবিধা স্থগিত ; বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি না করতে ভোক্তাদের চাপ

 

তৈরি পোশাক শিল্প-কারখানায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা এবং নানা অপপ্রচারের পরও এ খাতে রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। বিশেষ করে গতবছর সাভারে রানা প্লাজা ধসে এক হাজারেরও বেশি শ্রমিক নিহত হবার পর মনে করা হয়েছিলো এ খাতে বড় ধরনের ধাক্কা আসছে। দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের এ খাত নিয়ে নানা ধরনের অপপ্রচার চলতে থাকে। আবার পোশাক শিল্পের কর্মপরিবেশের উন্নতি না হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সরকার জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্স-জিএসপি বা রপ্তানিতে বিশেষ সুবিধা তুলে দেয়ার পর তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বড় ধরনের ধাক্কা আসবে বলে মনে করা হয়েছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তৈরি পোশাক রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের (২০১৩-১৪) প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) পোশাক রপ্তানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৩ শতাংশ বেড়েছে।

তৈরি পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ খাতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধির পেছনে দেশীয় উদ্যোক্তারা যেমন রয়েছেন, তেমনি বিদেশি উদ্যোক্তাদের অবদানও কম নয়। বিশেষ করে শিল্পোন্নত দেশ চীন এবং ভিয়েতনামে শ্রমিকদের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় সেখানকার অনেক উদ্যোক্তা বাংলাদেশে তাদের কারখানা স্থাপন করেছেন। এর মধ্যে কেউ কেউ একক মালিকানায় কারখানা স্থাপন করলেও অনেকে বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের সাথে যৌথ উদ্যোগে এসব কারখানা চালাচ্ছেন। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের অনেক উদ্যোক্তা তাদের কারখানায় উচ্চমূল্য সংযোজিত পণ্য উত্পাদন করছেন। যার ফলে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে একজন গার্মেন্টস শ্রমিকের মাসিক সর্বনিম্ন বেতন ৫ হাজার তিনশ’ টাকা। চীনে সর্বনিম্ন বেতন ১৭ হাজার টাকার মতো। ভিয়েতনামে তা সাড়ে আট হাজার টাকা। ফিলিপাইনে ১৩ হাজার টাকা। এসব দেশের উদ্যোক্তারা সস্তা শ্রমের সুযোগ নিতে বাংলাদেশে তাদের কারখানা সরিয়ে আনছেন।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে বাংলাদেশ মোট এক হাজার ৮০৫ কোটি মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে ওভেন পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৯২২ কোটি ১৭ লাখ ডলার। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি। অপরদিকে প্রথম নয় মাসে বাংলাদেশ নীটওয়্যার রপ্তানি করেছে ৮৮৩ কোটি ডলার। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ দশমিক ৪০ শতাংশ বেশি। উল্লেখ্য, গত অর্থবছরের (২০১২-১৩) প্রথম নয় মাসে তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি আয় এসেছিল এক হাজার ৫৬৭ কোটি টাকার বেশি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সামপ্রতিককালে রানা প্লাজা ধস এবং তাজরীন ফ্যাশন্সে অগ্নিকাণ্ডের মতো বড় দুর্ঘটনায় সহস্রাধিক শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন। এর ফলে সারাবিশ্বে বাংলাদেশের পোশাক খাত নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা শুরু হয়। বিশেষ করে পশ্চিমা দেশের ভোক্তারা বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি না করতে ক্রেতাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। কিন্তু এতকিছুর পরও পোশাক খাতের রপ্তানিতে ইতিবাচক ধারা আশাপ্রদ বলে মনে করেন উদ্যোক্তারা। অপরদিকে শুধু নেতিবাচক প্রচারণাই নয়, গত বছরের অধিকাংশ সময় ধরে চলা রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও উদ্যোক্তারা নানাভাবে পোশাক রপ্তানি করে গেছেন।

পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-এর সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদি ইত্তেফাককে বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে উদ্যোক্তারা দিন-রাত পরিশ্রম করে গেছেন। সময়মতো রপ্তানির জন্য অনেক অর্ডার আকাশপথে পাঠানো হয়েছে। এতে বাড়তি খরচ হলেও ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করা গেছে। এর পেছনে মালিক, শ্রমিক সবার অবদান রয়েছে। তিনি আরো বলেন, গার্মেন্টস খাত একটি আন্তর্জাতিক ব্যবসা। এখানে নেতিবাচক প্রচারণা থাকবে। এটি মোকাবিলা করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

তবে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের অবকাঠামোসহ শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের ব্যাপারে এখনো সোচ্চার ভোক্তারা। ইতিমধ্যে পোশাক শিল্প মালিক, ক্রেতা এবং সরকার- সব পক্ষ মিলে এ খাতের মানোন্নয়নে কতগুেলো পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করছে। আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা যেমন বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এবং এডিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পোশাক শিল্পখাত এখন ‘ক্রসরোড’ অতিক্রম করছে। 

 

অন্যান্য অর্থ বাণিজ্য আন্তর্জাতিক জেলা সংবাদ শীর্ষ খবর