যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের অবাধ বাজার সুবিধা (জিএসপি) স্থগিত করে মার্কিন প্রশাসন পোশাকশিল্পের মূল সমস্যা সমাধান না করে শ্রমিকদের ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে।
শুক্রবার ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘রুমি ফোরাম’র এক আলোচনা সভায় এ অভিযোগ করেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদের।
বাংলাদেশের পোশাক খাতে কোনো ধরনের শুল্ক ছাড়ের প্রস্তাব না দিয়ে শ্রমিকদের কর্মপরিবেশের উন্নয়নে মার্কিন কংগ্রেসের ধারাবাহিক তৎপরতারও সমালোচনাও করেন রাষ্ট্রদূত।
তবে রানা প্লাজা ধস ও তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকান্ডের পর বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ এবং তাদের অধিকার রক্ষায় নতুন নতুন ভাবনা তুলে ধরে এ খাতের উন্নয়নে ‘দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা’ নিয়ে এগিয়ে আসায় ক্রেতাদের প্রশংসা করেন তিনি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, শ্রমিক নিরাপত্তা ও অধিকার, দশম জাতীয় সংসদীয় নির্বাচন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও বাংলাদেশ-মার্কিন অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে আকরামুল কাদের বক্তব্য দেন।
কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের সিনিয়র ফেলো মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার ভূতপূর্ব উপ-সহকারীমন্ত্রী আলিসা আয়ার্স আলোচনায় সঞ্চালনা করেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আলোচনা শুরু হয় এবং প্রশ্নোত্তর পর্বের মাধ্যমে শেষ হয়।
আকরামুল কাদের বলেন, ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানির জন্য বাংলাদেশ ৮২০ মিলিয়ন ডলার শুল্ক দিয়েছে। মার্কিন কংগ্রেস বাংলাদেশে শ্রমিকদের মানোন্নয়নের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করলেও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক হ্রাস কিংবা মওকুফের কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এ ধরনের শুল্ক হ্রাস ও মওকুফ বাংলাদেশের শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোসহ সার্বিক মানোন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য জিএসপি সুবিধা বাতিল করে, যা বাংলাদেশের শ্রমিকদের জন্য দুঃখজনক। এমন সিদ্ধান্ত দুর্ঘটনার অন্তর্নিহিত সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে শ্রমিকদের জন্য ঝুঁকি তৈরি করেছে।
তিনি বলেন, রানা প্লাজা ধসের পর উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের ক্রেতাদের নতুন ধারণা ও পরিকল্পনাসমূহ বাংলাদেশে তৈরি পোশাকশিল্পের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি ভূমিকা রাখবে। যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মহলকে এ বিষয়ে ফলপ্রসূ অংশগ্রহণ বজায় রাখার আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূত।
কাদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে শুধু কম দামে পোশাকই পান না, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয়ের সুযোগ করে দেয়।
৫ জানুয়ারির নির্বাচন সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে আকরামুল কাদের বলেন, স্থানীয় নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ ‘বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থার গ্রহণযোগ্যতার’ প্রমাণ দিয়েছে।
‘সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা এবং গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতাকে শক্তিশালী’ করতে দশম সংসদ নির্বাচন হয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।