চট্টগ্রামে ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলায় দিদার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। বলী খেলা শুক্রবার বিকাল ৪টা ২৩ মিনিটে শুরু হয়ে শেষ হয় সাড়ে ৫টায়। চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ বেলুন ও কবুতর উড়িয়ে খেলার উদ্বোধন করেন।
মেলা দেখতে লালদীঘি মাঠের চারপাশে সমবেত হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। খেলা পরিচালনা কমিটির সভাপতি জরুল লাল হাজারী জানান, খেলায় অংশ নিতে দেশ সেরা আলম বলীসহ ৬৫ জন নাম নিবন্ধন করেছেন। এবার এ বলী খেলার ১০৫তম আয়োজন। এ বলী খেলাকে কেন্দ্র করেই জমে ওঠে প্রাণের বৈশাখী উৎসব।
প্রচন্ড গরমের তীব্রতা উপেক্ষা করে বৃহস্পতিবার থেকেই নগরীর লালদীঘির পাড়কে কেন্দ্র করে দুই কিলোমিটারব্যাপী এলাকায় জমে উঠেছে তিনদিনের বৈশাখী মেলা।
ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলাকে ঘিরে লালদীঘির মাঠে সকাল থেকেই জনসমাগম শুরু হয়েছে। প্রতি বছর বলী খেলাস্থলে তিল ধারনের ঠাঁই থাকে না। দিনদিন এ বলী খেলার প্রচার-পরিচিতি দুটোই বেড়েছে। দেশের আরও কিছু স্থানে বলী খেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসলেও কালের পরিক্রমায় সে সব আয়োজন প্রায়ই বন্ধ হয়ে গেছে। কোনো কোনো এলাকায় আয়োজিত হলেও তা ক্ষুদ্র পরিসরে। কিন্তু জব্বার মিয়ার বলী খেলা ও বৈশাখী মেলা এখনও ধরে আছে তার কীর্তিময় ইতিহাস। প্রথম দিকে এখানে শুধু বলী খেলাই অনুষ্ঠিত হতো। পরে যোগ হয় বৈশাখী মেলা।
মেলায় চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স আপ পুরস্কার ছাড়াও খেলায় অংশগ্রহণকারী প্রায় ৫০ জনকে দেয়া হবে বিশেষ পুরস্কার।
আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর বাংলা বছরের ১২ বৈশাখে ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এটি ঐতিহ্যবাহী হওয়ার পেছনে রয়েছে বর্ণাঢ্য ইতিহাস। ১৩১৫ বঙ্গাব্দের (১৯০৯ খ্রিস্টাব্দ) ১২ বৈশাখ বলী খেলার আয়োজন করেন বঙিরহাটের তৎকালীন প্রভাবশালী সমাজসেবক ও ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আবদুল জব্বার সওদাগর। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে তরুণ সমাজকে অনুপ্রেরণা যোগানোই ছিল তার মূল লক্ষ্য। তারপর থেকে হাঁটি হাঁটি পা পা করে জব্বার মিয়ার বলী খেলা ও বৈশাখী মেলা উপমহাদেশের বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম অনুসঙ্গে পরিণত হয়েছে।
আর বেশাখী মেলা উপলক্ষে হাজারও পণ্যের পসরা সাজানোর ব্যাপ্তি ছাড়িয়েছে চারপাশের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা। নগরীর নিউমার্কেট মোড় থেকেই ফুটপাতে বসেছে আগত দোকানিরা।
এদিকে আন্দরকিল্লা মোড় পর্যন্ত বসে গেছে মেলার আয়োজন। এখন হঠাৎ কেউ লালদীঘির মোড়ে আসলে চিনতেই কষ্ট হবে। পুরো লালদীঘি মোড়ে বাহারি পণ্যের দোকান ও লোকজন ছাড়া আর কিছুই দেখার জো নেই। তিনদিনের এ মেলাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছেন ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প পণ্য সামগ্রী নিয়ে।