ভারতের সাবেক প্রধান বিচারপতি আলতামাশ কবীর বলেছেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হলে বিচার বিভাগ আর রইল কোথায়? যারা আইন হাতে তুলে নেয় তাদের অবশ্যই বিচার হওয়া উচিত।
বৃহস্পতিবার কারওয়ান বাজারের ডেইলি স্টার সেন্টারের ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট আয়োজিত ‘সবার জন্য সুবিচার’’ শীর্ষক আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
আলতামাশ কবীর বলেন, বিচারপতিদের রাজনৈতিক চাপ সহ্য করার ক্ষমতা নিয়ে বিচারকাজ করতে হবে। রাজনৈতিক চাপ থাকবেই। রাজনৈতিক চাপ মোকাবেলা করেই সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ভারতের সুপ্রিমকোর্টে রাজনৈতিক প্রভাব তেমন নেই বলেও জানান তিনি।
ভারতের সাবেক প্রধান বিচারপতি বলেন, মানুষ যদি বিচারের কাছে আসতে না পারে, তবে বিচারকে যেতে হবে মানুষের কাছে। সে জন্য মানুষের জ্ঞান ও সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল এতে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ড. সুলতান হাফিজ রহমান। আলোচনা করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আইনুন নিশাত।
প্রধান আলোচক ভারতের সাবেক প্রধান বিচারপতি বলেন, বলিষ্ঠ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মূল ভিত্তি হলো সবার জন্য সুবিচার নিশ্চিত করা। বিচারব্যবস্থার প্রসার ছাড়া সুবিচার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
আলতামাশ কবীর বলেন, ভারতে প্রান্তিক পর্যায়ে বিচারব্যবস্থা ছড়িয়ে দিতে ‘প্রাথমিক আইনি সহায়তা কেন্দ্র’ এবং গ্রাম্য আদালত গড়ে তোলা হয়েছে। এ দেশের আদালতের মামলাজট কমাতে এটা উদাহরণ হতে পারে। ভারতের ঝাড়খণ্ডের একটি লোক আদালতে একদিনে ২৯ লাখ মামলা মীমাংসার উদাহরণ তুলে ধরেন তিনি।
তিনি বলেন, ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ সংবিধান এবং ১৯৪৯ সালের ভারতীয় সংবিধানে নাগরিকের মৌলিক অধিকারগুলো প্রায় একই রকম। সংবিধান কর্তৃক স্বাধীনতার মৌলিক অধিকার রক্ষার দায়িত্ব সর্বোচ্চ আদালতের। একজন বিচারপতিকে তার ক্ষমতার সবটুকু ব্যবহার করতে হবে। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে নাগরিকের স্বাধীনতা, সমতা ও সার্বভৌমত্ব থাকতে হবে।
ভারতের সাবেক এই প্রধান বিচারপতি বলেন, শুধু বড় মাপের মানুষদের জন্য নয়, বিচার সবার জন্য সমান হওয়া উচিত। তবে সবার জন্য সুবিচার নির্ভর করে সরকারের পরিকল্পনা বিভাগ, সরকারের সদিচ্ছা, গণমাধ্যম এবং তথ্য-প্রযুক্তির ওপর।
প্রশ্নোত্তর পর্বে এক প্রশ্নের উত্তওে ভারতের বিচারপতি বলেন, বিভিন্ন দেশে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। আন্তর্জাতিক আইন ও অভ্যন্তরীণ আইন যদি দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে, তবে অভ্যন্তরীণ আইন প্রাধান্য পাবে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে সব জেলা আদালতে স্থানীয় ভাষায় মামলা পরিচালিত হয়। হাইকোর্টে মাঝে মাঝে বিচারপ্রার্থীর ভাষায় মামলা পরিচালিত হয়ে থাকে। শুধু সুপ্রিমকোর্টে ইংরেজি ও হিন্দি ভাষায় মামলা পরিচালিত হয়।
তিনি বাংলাদেশের ট্রাফিক জ্যামের বিষয়টি তুলে ধরে রসিকতা করেন। তিনি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আসার পথে ঢাকার যানজটের অভিজ্ঞতা পান।
এসময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু, সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট আজমালুল হক কিউসি, সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, জানিপপে’র চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ প্রমুখ।
আলোচনা অনুষ্ঠানের আগে বেলা পৌনে তিনটার দিকে তিনি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেনসহ আপিল বিভাগের বিচারপতি ও আইনজীবী সমিতির নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।