রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে ফিরে আসা রেশমা তার প্রেমিকের সঙ্গে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। উত্তরবঙ্গে নিজ গ্রামে গিয়ে ছোট আনুষ্ঠানিকতার মধ্যদিয়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রেমিককে বিয়ে করেন রানা প্লাজার আলোচিত এই রেশমা।
একবছর আগে সাভারের রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় আটকে পড়ার প্রায় ১৭ দিন পর ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল পোশাকশ্রমিক রেশমা আক্তারকে।
টানা ১৭ দিন অন্ধকারের ভেতর খাবার ও পানি ছাড়াই বেঁচে থাকার পর সুস্থভাবে ধ্বংসস্তূপ থেকে রেশমার বেরিয়ে আসার ঘটনা পৃথিবীর বুকে জন্ম দিয়েছিল আরেকটি অলৌকিক ঘটনার।
পোশাক শিল্পের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি। রাজধানীর অদূরে সাভারে তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রফতানিকারক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কারখানা নিয়ে বহুতল ভবন রানা প্লাজা সেদিন ধসে পড়েছিল।
ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে সেদিন অসংখ্য পোশাকশ্রমিকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। ধ্বংসস্তূপ থেকে বেরিয়ে আসছিল শুধুই লাশের মিছিল। ভবনটির নিচে চাপা পড়া শ্রমিকদের বেঁচে থাকার আশা ছেড়ে দিয়ে স্বজনরা শুধু প্রিয়জনের মৃতদেহটি পাওয়ার আশাতেই বুক বেঁধেছিলেন। সেসময় ভেঙে পড়া ভবনটির নিচ থেকে জীবিত ও সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয় রেশমাকে।
এ ঘটনা দেশের মানুষকেই তাক লাগিয়ে দিয়েছিল তা নয় চমকে উঠেছিল গোটা বিশ্ব। অথচ যে দুর্ঘটনায় ১ হাজার ১৩৮ জন নিহত এবং দুই হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন, সেই দুর্ঘটনার ১৭ দিন পর পর্যন্ত খাবার ও পানি ছাড়া অন্ধকারের মধ্যে থেকে বেঁচে ফেরাটা সম্ভব নয়। কিন্তু সেদিন রেশমা উদ্ধার হওয়ার পর পেয়েছিলেন ‘অলৌকিক কন্যা’র আখ্যা।
সেই ‘অলৌকিক’ ঘটনার পর পাল্টে গেছে রেশমার জীবন। এক দরিদ্র পোশাক শ্রমিকের জীবন থেকে রেশমা উঠে এসেছেন স্বচ্ছল মধ্যবিত্তদের কাতারে।
ধ্বংসস্তূপ থেকে বেঁচে ফেরা বাকি হাজারো শ্রমিকের মতোই সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার স্মৃতি আজো রেশমাকেও কাঁপিয়ে তোলে। আর কখনো পোশাক কারখানায় ফিরে যাবেন না রেশমা।
রেশমা অনেকটাই ধার্মিক জীবনযাপন করছেন। প্রাত্যাহিক জীবনে নামাজ পড়ার সময় পোশাক খাতে কর্মরত মানুষ এবং নিহত সহকর্মীদের জন্য নিয়মিত দোয়া করেন রেশমা। আর কাউকে যেন এভাবে মৃত্যুবরণ করতে না হয়।-সূত্র: এএফপি