১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির জন্ম। এই ১৭ বছরে গর্ব করার মতো অনেক গুণী প্রকাশক এই সমিতির নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পে জনাব মহিউদ্দিন আহমেদ, জনাব মফিদুল হকগণ অতি নমস্য এবং প্রাতঃস্মরণীয়দের তালিকায় নিজেদের অধিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। দীর্ঘদিনযাবৎ তাঁরা সমিতির সভাপতির আসনে থেকে সমিতিকে যথাযথ নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁদের কাছ থেকে সমিতির সদস্যগণ অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিগনিদের্শনা ও পরামর্শ পেয়েছেন। বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি এসব গুণী প্রকাশকদেরই উত্তরাধিকার।
বাংলাদেশের হানাহানির রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে আমরা চেষ্ঠা করেছি ব্যতিক্রম থাকতে এবং আমরা সফলও হয়েছি। নবীন প্রকাশকদের শক্তি, সাহস, উদ্যম এবং প্রবীণ প্রকাশকদের পরামর্শ, অনুপ্রেরণা ও আশীর্বাদ নিয়ে সমিতির বর্তমান কমিটি দলমত নির্বিশেষে সবার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। অতি তরুণ এবং সমিতির সদ্য সদস্য হওয়া প্রকাশকদের কাছ থেকে আমরা যে রকম সহযোগিতা পেয়েছি তা ভাষায় প্রকাশের নয়—আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞচিত্তে শুভ ইচ্ছা জানিয়ে রাখছি। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি সর্বজনাব আলমগীর রহমান, মোস্তফা জব্বার, মনিরুল হক, মঈনুল আহসান সাবের, মাজহারুল ইসলাম, মিলনকান্তি নাথ, মেজবাহউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ জাকির হোসাইন, ইসমাইল হোসেন বকুল, এ. কে. নাছির আহমেদ সেলিম, হামিদুল ইসলাম, মজিবর রহমান খোকা, কাজী নজরুল ইসলাম বাহার, ফরিদ আহমেদ, আহমেদ মাহফুজুল হক, মোহাম্মদ লিয়াকত উল্লাহ, ইফতেখার রসুল জর্জ, প্রকৌশলী মোঃ মেহেদী হাসান, মোঃ গফুর হোসেন, মোঃ হেলাল উদ্দিন, মিজানুর রহমান সরদার, কামরুল হাসান শায়ক, প্রমুখ প্রবীণ-গুণী স্বনামখ্যাত প্রকাশকদের। তাঁরা নিজেদের ব্যস্ততা ও অতি মূলবান সময় অগ্রাহ্য করে সমিতির প্রয়োজনে যে কোনো সময় এগিয়ে এসেছেন। নবীন-প্রবীণ সব প্রকাশকদের সহযোগিতায় প্রকাশক সমিতি বিগত দু’বছরে যে পরিমাণ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নিজেদের সাফল্য প্রমাণ করেছে, তা যে কোনো সংগঠনের জন্যই ঈর্ষণীয়।
বাংলাদেশের হানাহানির রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে আমরা চেষ্ঠা করেছি ব্যতিক্রম থাকতে এবং আমরা সফলও হয়েছি। নবীন প্রকাশকদের শক্তি, সাহস, উদ্যম এবং প্রবীণ প্রকাশকদের পরামর্শ, অনুপ্রেরণা ও আশীর্বাদ নিয়ে সমিতির বর্তমান কমিটি দলমত নির্বিশেষে সবার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছে
………………………………..
বিগত এক বছরে সমিতি যেসব কাজে সাফল্য অর্জন করেছে তার একটি সংক্ষিপ্ত খতিয়ান তুলে ধরা হলো
১. নিজস্ব কার্যালয় প্রতিষ্ঠা: এর আগে সমিতির নিজস্ব কোনো কার্যালয় ছিল না। আমরা সমিতির কার্যাক্রম, অনুষ্ঠানাদি বিভিন্ন জায়গায় হল রুম ভাড়া নিয়ে বা নানা সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে সম্পন্ন করতাম। বিভিন্ন মিডিয়া এবং সাংবাদিক বন্ধুরা আমাদের এতো মূল্যায়ন করেন যা অন্য ট্রেডের লোকজনের ভাগ্যে জোটে না। অথচ আমরা সাংবাদিক বন্ধুদের নিজেদের কার্যালয়ে এনে দু-কাপ চাও কখনো খাওয়াতে পারিনি। এটি সমিতির সদস্যদের জন্য লজ্জার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সমিতির এ লজ্জা ঘুচে গেছে। এখন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সাংবাদিক বন্ধুরা অবাধে সমিতির কার্যালয়ে যাতায়াত করেন। নিজস্ব কার্যালয়ের অভাবে সমিতির উন্নয়ন কর্মকাণ্ডেও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য লাভ করা ছিল কষ্টকর। কার্যালয়ের ফলে সমিতির কার্যক্রমে কাঙ্ক্ষিত গতি এসেছে। সমিতির যে কোনো সদস্য এ কার্যালয়কে তার নিজস্ব ব্যবসায়িক কাজেও ব্যবহার করতে পারেন।
২. ইতোপূর্বে সমিতির সদস্যদের যৌথ কোনো গ্রন্থতালিকা ছিল না। বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি এই প্রথম তার সমস্ত প্রকাশকদের গ্রন্থ তালিকা ‘বাংলাদেশের সৃজনশীর বই ২০১৩’ নামে একই মলাটে প্রকাশ করেছে। এই বই সমিতির সদস্য, লেখক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক এবং স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।
৩. সমিতির সদস্যদের পরিচয় সংবলিত একটি প্রকাশক নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এই নির্দেশিকার মাধ্যমে লেখক, পাঠক, প্রকাশক এবং সাংবাদিক বন্ধুদের যোগাযোগে সুবিধা হয়েছে।
৪. অমর একুশে বইমেলা ২০১৩-তে মেলা প্রাঙ্গণে অগ্নিকাণ্ডের ফলে বেশ কিছু প্রকাশক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করেছি ক্ষতিগ্রস্ত প্রকাশকদের ক্ষতিপূরণ দিতে। সমিতির সভাপতি হিসেবে আমি আমার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে সদস্যদের সামান্য কিছু আর্থিক সহযোগিতা করেছি এবং বাংলাদেশ সরকারও ক্ষতিগ্রস্ত প্রকাশকগণকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেছে।
৫. প্রকাশনা কেবল মাত্র ব্যবসা নয় এটি একটি সেবাও। জাতিগঠনে প্রকাশকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। কিন্তু সরকারি বেসরকারি নানা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকাশকগণ নায্য সুযোগসুবিধা বঞ্চিত ছিলেন। প্রকাশনা খাতে কোনো ব্যাংকই ঋণ প্রদান করত না। ফলে প্রকাশকগণ ঋণ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত ছিলেন। আমাদের ঐকান্তিক চেষ্টার ফলে এখন প্রকাশকগণ স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা পাচ্ছেন।
৬. বর্তমান সরকার প্রকাশনা শিল্প ও প্রকাশকদের কল্যাণার্থে বেশ কিছু ঐতিহাসিক সুযোগ সুবিধা প্রদান করছেন। এর মধ্যে প্রকাশক পল্লী অন্যতম। ঢাকার অদূরেই প্রকাশকদের জন্য জমি বরাদ্দের কাজ চলছে। ইতোমধ্যেই প্রকাশকগণ প্রকাশক পল্লীর নিবন্ধনভূক্ত হয়েছেন। আশা করি খুব শীঘ্রই প্রকাশকগণ তাদের কাঙ্ক্ষিত জমি বুঝে পাবেন।
৭. আমাদের অব্যাহত চাপের ফলে বাংলা একাডেমী কর্তৃপক্ষ প্রথম বারের মতো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বৃহৎ পরিসরে অমর একুশে বইমেলা আয়োজন করেছেন। বৃহৎ পরিসরে মেলা হওয়ার ফলে মেলা লোকসমাগম এবং বেচাবিক্রি অনেক বেড়েছে। অধিকাংশ প্রকাশক তাদের কাঙ্ক্ষিত স্টল ইউনিট বরাদ্দ পেয়েছেন।
৮. শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সৃজনশীল বই ক্রয়ের বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। এছাড়াও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক বিভাগে লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়েছে।
বর্তমান সরকার প্রকাশনা শিল্প ও প্রকাশকদের কল্যাণার্থে বেশ কিছু ঐতিহাসিক সুযোগ সুবিধা প্রদান করছেন। এর মধ্যে প্রকাশক পল্লী অন্যতম। ঢাকার অদূরেই প্রকাশকদের জন্য জমি বরাদ্দের কাজ চলছে। ইতোমধ্যেই প্রকাশকগণ প্রকাশক পল্লীর নিবন্ধনভূক্ত হয়েছেন। আশা করি খুব শীঘ্রই প্রকাশকগণ তাদের কাঙ্ক্ষিত জমি বুঝে পাবেন
………………………….
২৫ এপ্রিল সমিতির পরিচালক পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনে দুটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। ভোটারগণ তাদের নিজস্ব চিন্তাচেতনা বিবেকবুদ্ধির আলোকেই ভোট প্রদান করবেন। তারা নানা প্রলোভনের উর্দ্ধে উঠে অভিজ্ঞ, দক্ষ ও যোগ্য প্রার্থীদেরই ভোট দিবেন বলে আমার বিশ্বাস।
আমাদের এখনও বেশ কিছু কাজ অসমাপ্ত রয়ে গেছে। সমিতির কল্যাণার্থে অতি সত্ত্বর যেসব কর্মসূচি গ্রহণ করা আবশ্যক তার একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রদান করছি
• প্রকাশক, বইয়ের মান যাচাই বাছাই ও বিপনণের জন্য উপদেষ্টা পরিষদ গঠন
• প্রকাশকদের জন্য ঢাকায় একটি বহুতল মার্কেট নির্মাণ
• ক্রমান্বয়ে প্রতিটি জেলায় বইয়ের মার্কেট তৈরি
• ঢাকায় একটি বড় অফিস এবং ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন
• প্রত্যেক উপজেলায় ক্রমান্বয়ে পাবলিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা
• প্রত্যেক ইউনিয়নে পাঠাগার প্রতিষ্ঠা
• প্রত্যেক হাসপাতালে পাঠাগার প্রতিষ্ঠা
• সরকারের প্রত্যেক বিভাগ/জেলা অফিসে পাঠাগার প্রতিষ্ঠা
• প্রত্যেক সিটি কর্পোরেশন/ওয়ার্ড/থানা/গ্রাম কার্যালয়ে পাঠাগার স্থাপন
• ১০০০ বেসরকারি পাঠাগার প্রতিষ্ঠা
• গ্রন্থ উন্নয়নে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ
• প্রকাশকদের জন্য আবাসন প্রকল্প গ্রহণ
• একুশে বইমেলার পরিসর আরো বাড়ানো
• কলকাতায় বাংলাদেশের বইয়ের আউটলেট তৈরি
• কলকাতা বইমেলা বড় আকারে করা
• শিক্ষামন্ত্রণালয়ের বই ক্রয় অব্যাহত রাখা ও বই ক্রয় বৃদ্ধি করা
• আন্তর্জাতিক প্রকাশক সংস্থার (IPA : International Publisher Association) সদস্য হওয়া
• কল্যাণ ফান্ড
যেসব ব্যক্তি/প্যানেল এসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পারবেন সমিতির সদস্যগণ তাদেরই ভোট প্রদান করবেন বলে আমার বিশ্বাস।
মাত্র এক বছরে এসব কাজ করার পরও আমরা মনে করি এখনও যথেষ্ট কাজ বাকি রয়ে গেছে। বাংলাদেশের প্রকাশনা নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি, স্বপ্ন সফল করেছি কিন্তু তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে আমরা ঝিমিয়ে পড়িনি। স্বপ্ন আছে, স্বপ্ন থাকবে স্বপ্নরা ফুরায় না কখনো।