ঢাকা ও বেইজিংয়ের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চলতি বছরে উচ্চ পর্যায়ের কয়েকটি সফর বিনিময় হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি চুন। গতকাল ঢাকায় এক বক্তৃতায় তিনি সফরগুলোর বিষয়ে বলেন, চীনের জাতীয় কংগ্রেসের ভাইস চেয়ারপারসন ও ন্যাশনাল মিলিটারি কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান মে মাসের শুরুতে বাংলাদেশ সফরে আসছেন। বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ সাংহাইয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নিতে যাবেন। মে মাসে এটি হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও সুবিধাজনক সময়ে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। রাষ্ট্রদূত বলেন, চীনের বড় বড় কোম্পানি ও বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। এখানে চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বিশেষায়িত রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা গড়ে তোলার প্রস্তাব সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে। এটি বিনিয়োগের জন্য সহায়ক হবে আশা করে তিনি বলেন, চীন এখন অর্থনীতি পুনর্বিন্যাস করছে। বিদেশে চীনা বিনিয়োগ ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। চীনে শ্রমিকদের বেতন বেড়ে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা এখন আশেপাশের দেশের দিকে ঝুঁকছেন। সুযোগটি বাংলাদেশ কাজে লাগাতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন। গতকাল রাজধানীর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিস) মিলনায়তনে ‘চীনের উন্নয়ন ও চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক’ শীর্ষক বক্তৃতা করেন রাষ্ট্রদূত লি চুন। প্রতিষ্ঠানের বোর্ড অব গভর্নরস-এর চেয়ারম্যান মুন্সী ফয়েজ আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ। কূটনীতিক, শিক্ষাবিদ, গবেষকরা মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন। রাষ্ট্রদূত তার বক্তৃতায় বলেন, দুইটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে চীন। প্রকল্প দুটি হচ্ছে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ ও মহাকাশে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু’ উৎক্ষেপণ প্রকল্প। এ দু’টি প্রকল্প নির্মাণে চীনের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা রয়েছে। বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডোর প্রসঙ্গে লি চুন বলেন, চার দেশই ওই প্রকল্প থেকে লাভবান হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে গৃহীত ওই প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার বাংলাদেশ। এটি কেবল পরিবহন নয়। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, অবাধ চলাচলের ক্ষেত্রেও ব্যবহƒত হওয়া দরকার। চীন এই অঞ্চলের অগ্রগতির স্বার্থে শান্তিপূর্ণভাবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সকল প্রতিবেশীর সঙ্গে কাজ করে যাবে। পারস্পরিক বিশ্বাস ও আস্থার উপর ভিত্তি করে চীন এগিয়ে যেতে চায়। যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ নিরাপত্তা সংলাপ প্রসঙ্গে চীনা রাষ্ট্রদূতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, আমরা এটাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি। যে কোন বড় দেশ ভেতরে ও বাইরে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাবেÑ এটাই প্রত্যাশিত।