বর্তমান সরকার দেশের মানুষের জন্য নয়, পার্শ্ববর্তী দেশের জন্য কাজ করছে। তাই এরা যা চায় তাই দিতে বাধ্য থাকে। কিন্তু জনগণের অধিকার আদায়ে ব্যর্থ। তাই এই গণবিরোধী সরকারকে তীব্র গণআন্দোলনের মাধ্যমে বিদায় করতে হবে।
বুধবার দুপুরে লালমনিরহাটে তিস্তা ব্যারেজের হ্যালিপ্যাড ময়দানে অনুষ্ঠিত জনসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
বক্তারা বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসা এই সরকার জনগণের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে ভাবে না। তারা ভারতের কাছ থেকে একটি অধিকারও আদায় করতে পারেনি।
লংমার্চের কারণে তিস্তায় ৩০০০ কিউসেক পানি এসেছে দাবি করে বক্তারা বলেন, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এলে জনগণের সম্পূর্ণ ন্যায্য হিস্যা আদায় করেই ছাড়বেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা আলমগীর বলেন, দেশ,জাতি ও গণতন্ত্রকে বাচাতে হলে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। আমরা ঐক্যবদ্ধ হলে বিশ্বের কোন শক্তির ক্ষমতা নেই আমাদেরকে পরাজিত করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজেক সারাদেশ থেকে বানের পানির মতো মানুষ এসেছে তিস্তা ব্যারেজে। সবাই এখানে এসেছে একটাই দাবি নিয়ে। তাহলো আমাদেও অধিকার ফিরিয়ে দাও। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা চাই। তিনি বলেন, ভারতের পানি আগ্রাসনের ফলে কোটি কোটি মানুষের জীবন জিবিকা হুমকীর সম্মুখীন। তাই এই দেশকে বাচাতে হলে, কৃষি ও কৃষককে বাচাঁতে হলে, জীববৈচিত্র রক্ষা করতে হলে তিস্তাসহ অভিন্ন সকল নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে হবে।
সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এই সরকার তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে পারবেনা। কোন চুক্তিরই বাস্তবায়ন করতে পারবেনা। কারণ তারা জনগনের সরকার নয়। জনগন তাদেও নির্বাচিত করেনি। তারা জোরকওে অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছে।
ফখরুল বলেন, তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। জনগনের উপর নির্যাতন চালিয়েছে।এই নীলফামারীতে আওয়ামীলীগ পাখির মতো গুলি করে মানুষ হত্যা করেছে। তাদের একটাই দোষ ছিল তারা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার চেয়েছিল। জনগনের উপর নির্যাতন চালিয়ে বেশিদিন কেউ ক্ষমতায় থাকতে পারবেনা। তাই অতিদ্রুত নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে জনগনের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।
লংমার্চ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা লংমার্চ শুরু করার পরই তিস্তায় ৩৬০০ কিউসেক পানি ছেড়েছে ভারত। আমাদের কর্মসূচির উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। কিন্তু এতটুকুতেই হবেনা। কারণ এই মৌসুমে আমাদেও অন্তত ১০হাজার কিউসেক পানি প্রয়োজন। এরপরও যদি আমরা ন্যায্য হিস্যা না পাই তাহলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
সমাবেশে জাগপা সভাপতি সফিউল আলম প্রধান বলেন, লংমার্চের কারণে নাকি ৩০০০ কিউসেক পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা হিন্দুস্তানের এই ছলচাতুরিতে বিশ্বাস করি না। আমরা তিস্তার ন্যায্য হিস্যা চাই। চুক্তির বাস্তবায়ন দেখতে চাই। দলিল দেখতে চাই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে হিন্দুস্তানের গোলামী করার জন্য নয়। বীরের বেশে মাথা উঁচু করে বিশ্বের বুকে বেঁচে থাকতে স্বাধীন হয়েছে।
সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুজিবুর রহমান বলেন, ভারত বিভিন্ন এলাকায় বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশকে মরুভূমিতে পরিণত করেছে। ফারাক্কা, টিপাইমুখসহ বিভিন্ন স্থানে বাঁধ নির্মাণ করে প্রমত্তা পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, সুরমা কুশিয়ারা ও তিস্তা নদীকে হত্যা করেছে। ফলে কোটি কোটি মানুষ আজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু বর্তমান সরকার এসব বিষয়ে কোনো মাথা ব্যাথা নেই। এই সরকার শুধু দিতে জানে নিতে জানে না। তাই জনগণের আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের অধিকার আমরা আদায় করেই ছাড়বো।
জনগণের অধিকার আদায়ে বিএনপির এই কর্মসূচিতে জামায়াতে ইসলামীর পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা থাকবে বলেও জানান তিনি। এর আগে বেলা ১২টার দিকে কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে লংমার্চ সমাবেশের শরু হয়।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলুর সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন, সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য লে.জে. (অব.) মাহাবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সিরকার, নজরুল ইসলাম খান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, ড. ওছমান ফারুক, শামছুজ্জামান দুদু, এ্যাড.আহমেদ আযম খান, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড.আসাদুজ্জামান রিপন, যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদিকা শিরিন সুলতানা, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুস সালাম প্রমুখ।
এছাড়াও ১৯ দলীর জোট নেতাদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, ইসলামী ঐক্যজোটের ভাইস চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত আমিনী, জাতীয় পার্টিও প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিংকন প্রমুখ।
সমাবেশের শুরুতেই বক্তব্য রাখেন তিস্তা পারের কৃষক আসিম উদ্দিন।
উল্লেখ্য,, তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে ২২এপ্রিল মঙ্গলবার সকালে রংপুরের তিস্তা ব্যারেজ অভিমুখে লংমার্চ শুরু করে বিএনপি। মঙ্গলবার সকালে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা আলমীগের নেতৃত্বে ঢাকার উত্তরা থেকে লংমার্চের যাত্রা শুরু কওে একই দিন সকাল ১০টায় গাজীপুরের কালিয়াকৈরে, সাড়ে ১১টায় টাঙ্গাইলে এবং সোয়া ১২টায় সিরাজগঞ্জের কড্ডার মোড়ে পথসভা করে দলটি। এরপর বিকালে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ীতে পথ সভাশেষে রাতে রংপুর শহরে অবস্থান নেয়। সকালে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরীর সামনে পথসভা শেষে তিস্তা ব্যারেজ অভিমুখে যাত্রা করে। সবশেষ তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় সমাবেশের মাধ্যমে কর্মসূচি শেষ হয়।