১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মারা গিয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে এমন চার হাজার মুক্তিযোদ্ধার কবর শনাক্ত করার জন্য বাংলাদেশ ও ভারত সরকার একসঙ্গে কাজ করছে, যাতে তাদের দেহাবশেষ কবর থেকে উত্তোলন করে দেশে ফিরিয়ে আনা যায়।
“যে দেশের জন্য তারা যুদ্ধ করেছে সেখানে তাদেরকে পুনরায় কবর দেয়ার উদ্দেশ্যে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের কবরগুলো শনাক্ত করার জন্য আমাদের অনুরোধের প্রতি ভারত অত্যন্ত সহানুভূতিশীল। এটা আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে,” বলেছেন নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান, যিনি আগে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন।
এই বছরের শুরুতে ঢাকার ভারতীয় দূতাবাস ঘোষণা করেছে যে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয় মুক্তিযোদ্ধাদের করবগুলো শনাক্ত করা, কবর খুঁড়ে তাদের দেহাবশেষ বের করে আনা এবং পুনরায় কবর দেয়ার জন্য সেগুলো বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর কষ্টকর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। কমিশনের মতে, এই প্রক্রিয়ায় সহায়তা করার জন্য এই চারটি সীমান্তবর্তী রাজ্য তত্ত্বাবধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে।
যে প্রায় চার হাজার মুক্তিযোদ্ধা নয় মাসব্যাপী যুদ্ধে মারা গিয়েছিল বা অভিযানের সময় হারিয়ে গিয়েছিল তাদের মৃতদেহগুলো সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোর বিভিন্ন জায়গায় কবর দেয়া হয়েছিল। জানুয়ারি পর্যন্ত, কর্মকর্তারা বাংলাদেশী যোদ্ধাদের দেহাবশেষ সম্বলিত ২৭টি কবর শনাক্ত করেছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব গোলাম মোস্তফা বলেন, পুনরায় কবর দেয়ার জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে কুমিল্লার একটি জায়গাকে বেছে নেয়ে হয়েছে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের একজন কমাণ্ডার এবং বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রধান অবসরপ্রাপ্ত মেজর রফিকুল ইসলাম ভারত-বাংলাদেশের এই যৌথ অনুসন্ধান প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছেন।
“এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে পরিবারের সদস্যরা তাদের হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জনের প্রতি সম্মান দেখাতে পারছে না। যদি এখানে কবর দেয়া হয়, তাহলে অন্তত তারা কিছুটা সান্ত্বনা পাবে,” খবর দক্ষিণ এশিয়াকে বলেছেন তিনি।
একজন বীরের দেশে প্রত্যাবর্তন
১৯৭১ সালের আরেকজন মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল সাজ্জাদ জহির বলেন, এই প্রক্রিয়ায় সাহায্য করার জন্য, কর্মকর্তারা বাংলাদেশী যোদ্ধাদের নামের একটি তালিকা তৈরি করেছে। তিনি বলেন, “আমার একজন আত্মীয়কে ভারতে কবর দেয়া হয়েছিল।
সাত বছর আগে, জহির সেই সব মুক্তিযোদ্ধাদের একজনের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার তত্ত্বাবধান করেছিলেন।
১৯৭১ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় হামিদুর রহমান যখন মারা গিয়েছিলেন, তখন তার বয়স ছিল ১৭ বছর। তিনি বাংলাদেশের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একজন সদস্য ছিলেন।
২০০৭ সালের ডিসেম্বরে ত্রিপুরা থেকে তার দেহাবশেষ উত্তোলন করা হয়েছিল এবং ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। এবং যখন তার দেহাবশেষ পুনরায় বাংলাদেশের মাটিতে কবর দেয়া হয়েছিল তখন তা পূর্ণাঙ্গ সামরিক মর্যাদায় করা হয়েছিল, তাকে বীরশ্রেষ্ঠ (“সব বীরদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ”) উপাধির সম্মান দেয়া হয়েছিল।