সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীন দেশের গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং জেলা সড়কে ক্রমান্বয়ে টোল আদায় করা হবে। এছাড়া সংস্থাটির এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, টানেল বা সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে নির্মিত সড়কেও টোল আদায় করা হবে। পাশাপাশি সওজের আওতাধীন ৬০টি সেতুর টোল সুনির্দিষ্ট কাঠামোয় আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
গত ২৪ মার্চ মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘টোল নীতিমালা-২০১৪’ অনুমোদন হয়, যা আগামী ১ জুলাই কার্যকর হবে। ১৫ এপ্রিল এ-সংক্রান্ত গেজেটও প্রকাশিত হয়েছে। যদিও যোগাযোগমন্ত্রী একাধিকবার বলেছেন এখনই সড়ক টোল নেয়ার ইচ্ছে নেই সরকারের।
সড়ক বিভাগের সচিব এমএএন সিদ্দিক সাংবাদিকদের বলেছেন, বর্তমানে সওজের অধীন তিনটি সড়কে টোল আরোপ করা হয়। এগুলোকে টোল সড়ক বলে। ভবিষ্যতে আরো টোল সড়ক নির্মাণ হলে বা পিপিপিতে সড়ক নির্মাণ হলে শুধু সেগুলো থেকেই টোল আদায় করা হবে। তবে ১ জুলাই থেকে শুধু সেতু ও ফেরিগুলোয় টোল নীতিমালা প্রযোজ্য হবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, কনটেইনারবাহী ট্রেইলার, ট্রাক, বাস থেকে শুরু করে রিকশা, ভ্যান, বাইসাইকেল, ঠেলাগাড়ি সবধরনের যানবাহন ১৩টি ক্যাটাগরিতে টোলের আওতায় আসবে। এছাড়া সব সেতু ও ফেরিতে একক কাঠামোর আওতায় টোল আদায় করা হবে। তিন বছর পর পর টোলের পরিমাণ সংশোধন করা হবে। সড়ক ও সেতু থেকে আদায় করা টোল সড়ক উন্নয়ন তহবিলে যাবে; যা দিয়ে সড়ক কাঠামোর উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে সর্বোচ্চ হারে টোল আরোপ করা হবে। এক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটারে ভিত্তি টোল হবে ২ টাকা। জাতীয় মহাসড়কে কিলোমটারপ্রতি ভিত্তি টোল হবে দেড় টাকা, আঞ্চলিক মহাসড়কে ১ টাকা ও জেলা সড়কে ৫০ পয়সা। সড়কের ধরন ও দৈর্ঘ্য এবং যানবাহনের ধরনের ভিত্তিতে টোল প্রযোজ্য হবে। একইভাবে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অবস্থিত সেতুতে সর্বোচ্চ হারে টোল দিতে হবে। এতে ভিত্তি টোল হবে ৪০০ টাকা। জাতীয় মহাসড়কে অবস্থিত সেতুতে ভিত্তি টোল হবে ৩০০ টাকা, আঞ্চলিক মহাসড়কে ২০০ ও জেলা সড়কে ১০০ টাকা। এক্ষেত্রেও সেতুর ধরন ও দৈর্ঘ্য এবং যানবাহনের ধরনের ভিত্তিতে টোল আরোপ হবে।
সড়ক বিভাগের তথ্যমতে, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক দেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হিসেবে বিবেচিত হবে। জাতীয় মহাসড়কের মধ্যে রয়েছে-ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-রাজশাহী ইত্যাদি মহাসড়ক। আঞ্চলিক মহাসড়ক হলো-সিলেট-তামাবিল, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার, ঢাকা-কালীগঞ্জ-ঘোড়াশাল সড়ক। আর জেলা সড়ক বলতে জেলা সদর ও উপজেলার মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী সড়ককে বোঝানো হবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বা সেতুর ক্ষেত্রে ট্রেইলারের টোলের হার হবে ২৫০ শতাংশ, ভারী ট্রাক ২০০, মাঝারি ট্রাক ১০০, বড় বাস ৯০, ছোট ট্রাক ৭৫, কৃষিকাজে ব্যবহৃত যান (ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার) ৬০, মিনি বাস ৫০, মাইক্রোবাস-পিকআপ ৪০, ব্যক্তিগত গাড়ি ২৫, অটোরিকশা বা টেম্পো ১০, মোটরসাইকেল ৫ ও রিকশা-ভ্যান ২ দশমিক ৫ শতাংশ।
এক হাজার মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যরে সেতুতে ১২৫ শতাংশ, ৭৫১-১০০০ মিটারের মধ্যে ১০০, ৫০১-৭৫০ মিটারের মধ্যে ৭৫ ও ২০১-৫০০ মিটারের মধ্যে ৫০ শতাংশ হারে টোল প্রযোজ্য হবে। ২০০ মিটার বা তার কম দৈর্ঘ্যরে সেতুতে টোল দিতে হবে না। তবে ফেরির স্থলে নির্মিত সেতুর দৈর্ঘ্য ২০০ মিটারের কম হলেও কমপক্ষে এক বছর টোল আদায় করা হবে।