নতুন সরকারের সকল প্রয়াশের জয় হউক
মাহবুব-উল-আলম খান
দীর্ঘ ৪২ বছর পর গত ১২/১২/২০১৩ রাত ১০.০১ মিনিটে একাত্তুরেরর নরঘাতক আলবদর কসাই জল্লাদ কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়েছে। দীর্ঘ ৪২ বছর পর বাঙালী জাতি স্বস্থির নি:শ্বাস ফেলেছে। সরকারের এই মেয়াদে অন্তত: একজন যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায় বাস্তবায়িত হল। শহীদের আত্মা একটু শান্তির পরশ পেল। কবি খন্দকার আবু তালেব মেহেরুন্নেসা, ডা. আজহারুল হক, শহীদুল্লা কায়সার আরো শত শহীদের পরিবার দীর্ঘ ৪২ বছর পর আনন্দাশ্রু ফেলেছে। স্বজন হারানোর বেদনা, বিশেষ করে একাত্তুরের শহীদদের স্বজনদের বেদনা আরো মর্মান্তিক, হৃদয়বিদারক। সমস্ত বাঙালী জাতি বিধাতার আদালতে দুহাত তুলে মোনাজাত করেছে। সবাই বাকী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকরের অপেক্ষায়। বিএনপি-জামাত ও ১৮ দলের সদস্যদের এই মৃত্যুদন্ড কার্যকরে কোন প্রতিক্রিয়া নেই। তারা যেন মনোকষ্টে আছে। আমি বুঝিনা যে দল নিজেকে মুক্তিযোদ্ধার দল বলে দাবী করে তারা কি করে চুপ করে বসে থাকে। তাদের তো সরকারকে ধন্যবাদ জানানো উচিৎ। তা হলেই বুঝা যায় এরা আসলে কি। খালেদা জিয়া নয় মাস কেন্টনমেন্টে আরাম আয়েশে থেকে ১৯৭১ এর ঘটনা তার উপলব্ধি করার কথা নয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, স্বাধীনতার মূল্যবোধ তার কাছে অর্থহীন। দুগ্ধফেননিভ ফুলের শয্যায় শুয়ে যুদ্ধের মর্ম বুঝা কঠিন। ভাগ্যবতী রমনী খালেদা জিয়া। নয় মাস আরামে ছিলেন এখনও আরামে আছেন। আর দু:খ যাদের জীবন গড়া তারা এখনো জ্বলছে। বিগত এক বছর যাবৎ জামাত শিবির, ছাত্রদল ও তাদের সহযোগীরা সারাদেশে যে তান্ডব শুরু করেছে এতে বিস্ময়ে হতবাক হতে হয়। এরা কি স্বাধীন বাংলাদেশ চায় না পাকিস্তান জিন্দাবাদে বিশ্বাসী। বিশেষ করে জামাত শিবির যে তান্ডব, নাশকতা ও দুর্বৃত্তায়ন শুরু করেছে তাতে ভাবতে কষ্ট লাগে আসলে কি তারা এদেশের নাগরিক? কসাই কাদের মোল্লার ফাঁসিতে পাকিস্তানের সংসদে নিন্দা প্রস্তাব তোলা হয়েছে। এ এক কুটনৈতিক শিষ্টাচার বর্জিত ধৃষ্টতাপূর্ণ অমার্জনীয় অপরাধ। তাহলে বুঝা যায় জামাত কত বড় পাকিস্তানী। আমি পাকিস্তান সরকারকে তাদের দূতাবাসের মাধ্যমে হুশিয়ারী উচ্চারণ করতে চাই হে ইবলিসের বাচ্চারা, রাজাকার, আলবদরের দোসররা তোমরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাতে এসোনা, ভাল হবে না। একাত্তুরে তোমাদের পরাজিত করেছি, প্রয়োজনে এবার পাকিস্তান আক্রমন করে তোমাদের অশুভ তৎপরতাকে বন্ধ করা হবে। বন্ধ করো ষড়যন্ত্র ও নাশকতার কর্মকান্ড। জামাত শিবিরকে তাদের দোসরদের তোমরা রক্ষা করতে পারবেনা। একাত্তুরের পাপের জন্য তাদের শাস্তি পেতে হবে। তোমাদের এতই যদি দরদ তাহলে তোমাদের নাগরিকদের অবিলম্বে পাকিস্তান নিয়ে যাও। তারা প্রাণে রক্ষা পাবে। আর আমাদের সম্পদ যা তোমরা ২৩ বছর বাংলাদেশ হতে লুণ্ঠন করে নিয়ে গেছ তা অবলম্বে ফেরৎ দাও।
তোমাদের নাগরিকদের আমরা আর রাখতে পারবনা। অবিলম্বে এদের ফেরৎ নাও। এই ষড়যন্ত্রীদের, পাপিষ্ঠদের আর সহ্য করা যাবেনা। এরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করেনা। এরা রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করে। বিদ্যুৎকেন্দ্র পোড়ায়, রেললাইন পোড়ায়, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ছারখার করে দেয়। তারা নিত্য নতুন নাশকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে দেশকে অস্থিতিশীল করার কাজে লিপ্ত। এদেশে এদের নাগরিকত্ব থাকতে পারেনা। এরা দেশদ্রোহী, রাষ্ট্রদ্রোহী। বিরোধী দল এদের মদদ দিয়ে যাচ্ছে। এরা হিন্দু, বৌদ্ধ বিভিন্ন ধর্মালম্বীদের উপাসনালয় পুড়িয়ে, বাড়িঘর পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছে। এরা পাকিস্তানের দোসর। এইসব ভয়ানক ইতর জাতীয় বিষাক্ত সাপ, হায়েনাদের দংশনে এদেশ আজ ক্ষত বিক্ষত। এইসব মওদুদীর, ইয়াহিয়ার, টিক্কাখানের সন্তানদের আর ক্ষমা করা যায়না। বাংলাদেশ আজ স্বাধীন সার্বভৌম বিশ্বে মাথা উচু করা বাংলাদেশ। এদেশের উন্নতিতে এইসব ইতর প্রাণীরা খুশী নয়। দেশকে এরা ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছে।
সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে এখনই। সময় দ্রুত বয়ে যাচ্ছে। এখনি এদের রোধ করতে না পারলে, রোধ করা না হলে দিনে দিনে কঠিন অবস্থায় পড়তে হবে। ১৯৭১ সনে পাকিস্তান আমেরিকার সহায়তা নিয়ে ও বাঙালীদের হাতে পরাজয় বরণ করতে বাধ্য হয়েছে। আমাদের যুদ্ধ ছিল ন্যায়ের পক্ষে। তাই জয় ছিল অবসাম্ভাবী। ৪২ বছর পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে পাকিস্তান আমেরিকাসহ দুনিয়ার কতিপয় দেশ শত চেষ্টা করেছে। জামাতের লবিষ্ঠগণ আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু এদেশের সরকার ছিল দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সরকার পাপীর সাজা দিয়েছে। আমেরিকা তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী, জাতিসংঘ প্রধান পর্যন্ত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কসাই কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদন্ড না দিতে টেলিফোন করেছে। এদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে এদের হস্তক্ষেপ করতে রুচিতে বাঁধলনা। ধিক তাদের সভ্যতার। অথচ নিজের দেশে তাদের অপরাধীকে মৃত্যুদন্ড দিতে বিবেকে বাঁধেনা। তাদের এই অসভ্যতাকে ধিক্কার জানাই । একটি স্বাধীন দেশের বিচার ব্যবস্থার উপর হস্তক্ষেপ অনধিকার চর্চা। তোমরা এহেন কর্মকান্ড হতে বিরত থাকো। নিজের চরকায় তেল দাও, আমাদের উপর খবরদারী করনা। জামাতী লবিষ্ঠদের কাছে তাদের কি সম্পর্ক বোধগম্য হচ্ছেনা। জাতির জনক তনয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মার প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ। তার ইস্পাত কঠিন দৃঢ় মনোবলে সত্যের ও ন্যায়ের জয় হয়েছে। ১৯৭৫ সনের ১৫ আগষ্টের কালোরাতে তাঁর পিতামাতা, ভাই, তাদের স্ত্রী নিকট আত্মীয়দের নির্মম নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে। তারা দু’বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় বাঁচতে পেরেছিলেন। এক সাগর ব্যাথা বুকে নিয়ে আজও তিনি বেঁচে আছেন। দেশের হাল ধরেছেন। এই গভীর শোকে তো তাঁর পাগল হয়ে যাওয়ার কথা। বিএনপি জামাত ১৮ দলের কতিপয় চরিত্র মাঝেমধ্যে অসভ্যের মতো কথা বলেন। অনেক সুশীল সুজনেরা, পেয়ারে পাকিস্তানের পিপাসার্ত পিয়াজ করিমেরা, আসিফেরা, ফেরদৌসেরা, কর্কশ মাযহারেরা, আমেনারা, দিলারারা, কতিপয় উল্লাহরা, কালো নাটকের ইবলিসেরা বিভিন্ন অশোভন উদ্ভট বক্তব্য উদগিরণ করে মাঠ গরম করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের ধ্যান জ্ঞান কেন শেখ হাসিনা এখনও বেঁচে আছেন? ২১ আগষ্ট ২০০৪ এর আগে পরে বারবার চেষ্টা করেও তাকে কেন মারা যাচ্ছে না। এজন্য এইসব নানাবিধ চরিত্র গুলির ঘুম হারাম হয়ে গেছে। এত শোকেও তিনি এখনও মাথা ঠিক রেখেই এগিয়ে চলেছেন। তাকে যেতে হবে আরো বহু দূরে। বিগত ৫ বছরে দেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছেন। সাফল্য অনেক। এই সাফল্যকে ধরে রাখতে হবে। গণতন্ত্র ও সংবিধানকে রক্ষা করতে হবে। লক্ষ শহীদের আত্মাকে শান্তি দিতে হবে। যে সকল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় হয়েছে, বিচার চলছে এইসব কাজ সম্পন্ন করতে হবে অচিরেই। ৭১ এর গণহত্যার, যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পন্ন না হলে ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করবেনা। এদেশের সুধীজনদের বিষয়গুলি অনুধাবন করার জন্য সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি। এই শোকার্ত এতিমের কোন স্পষ্ঠ কথাবার্তায় কষ্ট পেয়ে থাকলে ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখবেন। সব হারিয়ে এদেশের ১৬ কোটি মানুষের কল্যাণই তাঁর একমাত্র প্রচেষ্টা। তাকে সাহস দিন, শক্তি দিন ও প্রেরণা দিন।
গত ৫ জানুয়ারী সংবিধানের বিধান অনুসারে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আওয়ামীলীগ তথা মহাজোট বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। একটি জনকল্যাণকামী সরকার প্রতিষ্ঠিত হোক উহাই এখন এদেশের জনগণের প্রত্যাশা। বিরোধী দল সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার ট্রেন মিস করেছে। তাদেরকে গণতন্ত্র ও সংবিধান মেনেই এগুতে হবে আগামী এক সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য। জামাত রূপী পাকিস্তানী প্রেতাত্মাদের সঙ্গ তাদের ছাড়তে হবে। এদেশে রাজনীতি করতে হলে বাঙালী হয়েই করতে হবে। পাকিস্তান প্রেমে গদগদ হলে পাকিস্তান চলে যান। পাকিস্তানের সংসদ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আপনারা যদি সেই মতের হন তাহলে তাদের সাথে মিশে যান। পাকিস্তানী নাগরিক হয়ে এদেশে বসে বসে ষড়যন্ত্র করবেন তা হবে না। নিজের দেশে চলে যান। আমাদের শান্তিতে থাকতে দিন। যাওয়ার আগে আমাদের পাওনাটা ফিরিয়ে দিন। খাবেন আমারটা আর গান গাইবেন পাকিস্তানের তা হবেনা। পাকিস্তানের সংসদে যে প্রস্তাব উঠেছে তাতে আপনারা কে ও কি তা দেশবাসীর বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না। ১৯৭১ সন হতেই এ ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। ইতিহাসের বেঈমান ও মীরজাফর মোশতাক ও জিয়া যে প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছে তা তারা বাস্তবায়িত করতে পারেনি। জাতির পিতাকে হত্যা করেও এদেশের স্বাধীনতাকে নস্যাত করতে পারেনি। দীর্ঘ ২১ বছর সংগ্রাম করে জাতির পিতার কন্যা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারাকে ফিরিয়ে এনেছেন। সমগ্র বাঙালী জাতির কাজ হল সেই চেতনাকে ধারণ করা, লালন করা ও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠিত হোক একটি সমৃদ্ধশালী উন্নত দেশ হিসেবে উহাই চাওয়া। বাঙালী জাতি ফিরে পাক মুক্তির আস্মাদন। শিক্ষা-দীক্ষা জ্ঞান গরিমায় পৃথিবীর বুকে একটি আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে মাথা উচু করে দাঁড়াক এই বাংলাদেশ। বাংলাদেশ হবে পৃথিবরি বুকে একটি আদর্শ রাষ্ট্র। এখানে থাকবেনা কোন হানাহানি, এখানে থাকবেনা কোন অরাজকতা, হিংসা ও বিদ্বেষ। মানুষে মানুষে গড়ে উঠবে ভ্রাতৃত্বের সেতুবন্ধন। হে ইবলিসের প্রেতাত্মারা, জামাত শিবিরের ধ্বংসকারীরা হুশিয়ার সাবধান। এই বাংলায় হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ, খৃষ্টান, আদিবাসী আমরা সবাই ভাই ভাই। আমরা এদেশে সবাই একপ্রাণ। আমরা সবাই গাই জয় বাংলার জয়গান। আমরা সকলে মিলে এই পৃথিবীতে রচনা করতে চাই সুখের অমরাবতী। নতুন সরকারের সকল প্রয়াসের জয় হউক। সকল দুঃখী মানুষের মুখে ফুটে উঠুক অনাবিল হাসি।
(লেখক সাবেক সচিব)