প্রচণ্ড গরমে স্বস্তি পেতে কদর বেড়েছে বরফ কুচি মেশানো শরবতের। লেবু, চিনি, ইসবগুলের ভুসি মেশানো শরবত বিক্রি হচ্ছে দেদার। ঠাণ্ডার পরশ পেয়ে সাময়িক স্বস্তি মিলছে ঠিকই, তবে নিজেদের অজান্তেই নিজের ক্ষতি ডেকে আনছেন পানকারীরা। অজান্তেই শরীরে চলে যাচ্ছে জন্ডিসের জীবাণু।
বিশিষ্ট গ্যাস্ট্রোঅ্যান্টেরোলজিস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যাস্ট্রোঅ্যান্টেরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা: এ বি এম ছফিউল্লাহ জানিয়েছেন, রাস্তার এসব শরবত খুবই অস্বাস্থ্যকর। রাস্তা থেকে ঠাণ্ডা শরবত পানকারীরা ডায়রিয়া, আমাশয় ও জন্ডিসের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন। এসবে বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার হয় না। তিনি বলেন, শুধু শরবত নয়, খোলা জায়গায় ধুলাময়লা মিশ্রিত খাবারে অথবা রেস্টুরেন্টের খাবার থেকে হেপাটাইটিস জীবাণু চলে আসতে পারে।
ডা: এ বি এম ছফিউল্লাহ বলেন, সাধারণত একই গ্লাস দিয়ে অনেকেই পান করে থাকেন। পানকারীদের কেউ হেপাটাইটিস ‘এ’ ও ‘ই’ ভাইরাসে আক্রান্ত থাকলে গ্লাসে ভাইরাস লেগে থাকতে পারে এবং সুস্থ মানুষের দেহে চলে যেতে পারে। অথবা দূষিত পানিতেই হেপাটাইটিসের জীবাণু থাকতে পারে। এভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে হেপাটাইটিস। একইভাবে পানিতে অথবা গ্লাসে ডায়রিয়া, আমাশয়ের জীবাণুও থাকতে পারে।
ডা: ছফিউল্লাহ বলেন, বিশুদ্ধ পানি দিয়ে শরবত বানানো যেতে পারে। এ ছাড়া গরম পানিতে ধুয়ে গ্লাসকে বিশুদ্ধ করে ওই গ্লাস দিয়ে একাধিকের কাছে শরবত সরবরাহ করা যেতে পারে। তিনি বলেন, দূষিত পানি, একই গ্লাস বিশুদ্ধ না করে বারবার ব্যবহার করার ব্যাপারে আমাদের উদ্বেগ আছে।
ডা: ছফিউল্লাহ রেস্টুরেন্টের খাবারের ব্যাপারে বলেন, রেস্টুরেন্টে ঠাণ্ডা কোনো খাবার খাওয়া উচিত নয়। ওদের দেয়া গ্লাস ব্যবহার না করে ভালো কোম্পানির বোতলজাত পানি বোতল দিয়েই পান করা হলে শরীরে জীবাণু প্রবেশের আশঙ্কা কম থাকবে। তবে রেস্টুরেন্টে খাবার না খাওয়াই উত্তম।
রাজধানীর পল্টনে গতকাল রাস্তার মোড়ের একটি দোকান থেকে শরবত পান করছিলেন আজহার আলী মণ্ডল নামে এক যুবক। কেন এ শরবত পান করলেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে আজহার আলী জানান, দেখতেই পাচ্ছেন কি প্রচণ্ড রোদ। গরমে একটু ঠাণ্ডার পরশ পেতে মনটা ছটফট করছিল। বরফ কুচি মেশানো শরবত দেখে আর স্থির থাকতে পারলাম না, খেয়ে ফেললাম। এ শরবতের মাধ্যমে আপনার শরীরে ডায়রিয়া অথবা জন্ডিসের জীবাণু চলে যেতে পারে তা কি জানেন? এ প্রশ্নের উত্তরে স্বল্প শিক্ষিত আজহার আলী চোখ কপালে তুলে বললেন, না তো জানি না! তিনি শরবতের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, এটা তো অপরিষ্কার পানি নয়, গ্লাসটাও তো বেশ পরিষ্কার, জীবাণু যাবে কিভাবে?
আজহার আলীর মতো অনেকেই পানিবাহিত জীবাণু সম্বন্ধে অবহিত নন। তারা অজান্তেই নিজের ক্ষতি করে বেড়াচ্ছেন।
স্বাস্থ্যের জন্য একই ধরনের ক্ষতিকর রাস্তা থেকে ভেষজ শরবত পান করা। সকালে অসংখ্য মানুষ ভেষজ শরবত পান করেন একই গ্লাস দিয়ে।
এ ব্যাপারে ডা: ছফিউল্লাহ বলেন, ভেষজ শরীরের সহনীয় ক্ষমতার বেশি চলে গেলে তা ক্ষতির কারণ হয়ে থাকে। বিশেষ করে যারা অসুস্থ তাদের ক্ষতিটা বেশি হয়। যারা রাস্তায় ভেষজ শরবত বিক্রি করেন তারা একই পাত্র পরিষ্কার না করে বার বার শরবত তৈরি করেন। যে পানি ব্যবহার করা হয় তা মোটেও বিশুদ্ধ নয়। শরীরের উপকারের উদ্দেশে মানুষ এগুলো খেলেও কতটুকু উপকার করে তা প্রশ্নসাপেক্ষ। এ ব্যাপারে কোনো গবেষণা নেই।