পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি ইরানি প্রেসিডেন্টে মাহমুদ আহমেদিনেজাদকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তার দেশে হামলা করলে পাকিস্তান কখনোই সহায়তা করবে না।
সম্প্রতি পরমাণূ কর্মসূচি বন্ধে চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে ইরানের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপের প্রতিক্রিয়ায় হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেওয়ার ইরানি হুমকির জেরে তেহরান-ওয়াশিংটন উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে।
এর প্রেক্ষিতে ইরান-আফগান-পাক আঞ্চলিক সম্মেলনের এক ফাঁকে বৈঠকে গত শুক্রবার ইসলামাবাদে ইরানকে এভাবে আশ্বস্ত করেছেন পাক প্রেসিডেন্ট।
পাকিস্তানি সংবাদ মাধ্যমগুলো জারদারিকে উদ্ধৃত করে বলেছে, পাকিস্তান এবং ইরানের একে অপরকে প্রয়োজন। কোনো আন্তর্জাতিক চাপ এই সম্পর্কে চীড় ধরাতে পারবে না।
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে বলেন, পাকিস্তান কার সঙ্গে ব্যবসা করবে বা করবে না তা যুক্তরাষ্ট্র বলে দিতে পারে না। ওয়াশিংটনের চাপে ইরান-পাকিস্তান গ্যাস পাইপ লাইন সংযোগ পরিকল্পনা বাদ দেওয়া হবে না।
অবশ্য জারদারির এই মন্তব্যের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে সম্মেলন শেষে আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইকে নিয়ে জারদারি এবং আহমেদিনেজাদের যৌথ বিবৃতিতে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ‘হস্তক্ষেপ না করা’ এবং ‘নাক না গলানো’র আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে তিন পক্ষই ত্রিপক্ষীয় বাণিজ্য জোরদার করার পাশাপাশি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা শক্তিশালী করা, সন্ত্রাস এবং মাদক চোরাচালনা প্রতিরোধে একে অপরের বিরুদ্ধে নিজেদের সীমান্ত ব্যবহার সংরক্ষণের অঙ্গীকার করেছে।
আল কায়েদা নেতা বিন লাদেন হত্যা, পাক সেনা বাহিনীর সঙ্গে সন্ত্রাসীদের সম্পর্ক, মার্কিন হামলায় ২৪ পাকিস্তানি সেনা নিহত হওয়ার ঘটনায় ওয়াশিংটনের সঙ্গে ইসলামাবাদের সম্পর্কের সুতোয় টান এবং পরমাণু ইস্যু নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের বিরাজমান চরম উত্তেজনার মুহূর্তে গত শুক্রবারের ত্রিপক্ষীয় আঞ্চলীক সম্মেলনকে বেশ তাৎপর্য্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
শুক্রবার সম্মেলন পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে প্রেসিডেন্ট আহমেদিনেজাদ এতদঞ্চলে বিদেশি হস্তক্ষেপকে কঠোর ভাষায় প্রত্যাখ্যান করেন। কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, ‘বিদেশি শক্তি আমাদের জাতির ওপর কর্তৃত্ব করতে বদ্ধ পরিকর। সব সমস্যা আসে বাইরে থেকে। নিজেদের লক্ষ্য এবং উচ্চাভিলাষকে তাড়িয়ে নিতে তারা কখনোই চাইবে না আমাদের জাতিগুলো উন্নতি করুক।’
পশ্চিমাদের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘তিন জাতির মধ্যে সহযোগিতার বন্ধন দৃঢ় করার জন্য সম্পর্ক আরো শক্তিশালী করতেই আমরা আজ এখানে। আমরা শিগগির সমস্যা সমাধানের পথে যাব। আর এখানে কাউকে হস্তক্ষেপ করতেও দেওয়া হবে না।’
পরমাণু ইস্যুতে আহমেদিনেজাদ বলেন, ‘পরমাণু শক্তিধর দেশগুলো কেউ কারো ওপর প্রবল নয়। পরমাণু বোমা কারো শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারণ করে না।’
পরমাণু বোমা বা অস্ত্রই যে কারো সম্পর্ক নির্ধারণ করে না তার উপযুক্ত উদাহরণ হিসেবে ইরান ও পাকিস্তানের সম্পর্ককে উল্লেখ করেন ইরানি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমেদিনেজাদ।
এদিকে আফগানিস্তানের ব্যাপারে পাকিস্তান সেনাবাহিনী দ্বিমুখী খেলা খেলছে এমন অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জারদারি। তবে ১৯৮০’র দশকে আফগানিস্তানের সোভিয়েত বিরোধী যুদ্ধের অবশেষ পাকিস্তানে রয়েছে বলে স্বীকার করেছেন জারদারি।
অপরদিকে তালেবান যোদ্ধাদের আলোচনার টেবিলে বসাতে পাকিস্তান সাহায্য করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই।