আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, অনেক উত্থান-পতনের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ এগিয়েছে। আমাদের আয় অনেক বেড়েছে। জাতীয় বাজেট দুই লাখ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। কিন্তু উন্নয়ন ব্যয় সে হারে বাড়েনি। ১৫ বছর আগে যে উন্নয়ন বাজেট ছিলো এখন তা বড়জোর দ্বিগুণ হয়েছে। বাকী টাকা চলে যাচ্ছে রাজস্ব খাতে। তিনি বলেন, আমাদের দেশ যে দরিদ্র তা স্বীকার করে নেয়া ভালো। আর যদি আমরা তা স্বীকার না করি তাহলে উন্নত বিশ্ব বলবে ওদের আর অর্থের প্রয়োজন নেই। পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের অর্জন অনেক। কিন্তু এর বেশিরভাগ হয়েছে দাতাদের ঋণ এবং অনুদানে। এমনকি দাতাদের অর্থ দিয়ে আমরা বিভিন্ন সড়কে গাছও লাগিয়েছি। তিনি উন্নয়ন বাড়ানোর জন্য সম্পদ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেন।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, যারা বন বিভাগের জমি দখল করেছে তারা শুধু একাই এ কাজটি করেনি। এর সাথে বন বিভাগের কেউ না কেউ জড়িত থাকতে পারে। সরকারের জমি নিয়ে যাওয়া যায়- এমন চিন্তা ভাবনা কোথা থেকে আসলো? আমাদের আত্মসমালোচনার প্রয়োজন রয়েছে। রেঞ্জাররা যখন দেখবে মন্ত্রণালয়ে এবং অধিদপ্তরে পরিবর্তন হয়েছে, তখন তারা আমাদের কথা শুনবে। নিজে না শোধরানো পর্যন্ত অপরকে শোধরাতে না বলা ভালো। বিদ্যুতের সিস্টেম লসের কথা উল্লেখ করে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, আমরা শুধু সিস্টেম লস আর চুরির কথা বলি। কিন্তু বেসরকারি এবং সরকারি খাতে যে পরিমাণ বিল বকেয়া আছে তা পরিশোধ করা হলে সিস্টেম লস ৩০ শতাংশ থেকে অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে হয়। তবে সিস্টম লস একেবারে পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বুড়িগঙ্গা দূষণের কথা উল্লেখ করে পরিবেশ ও বন মন্ত্রী বলেন, দূষণ বন্ধের জন্য প্রকৃত কারণ বের না করে শুধু নদী থেকে পলিথিন উত্তোলনের জন্য দুইশ’ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। অথচ নদীর পাড়ে অবস্থিত সকল কল-কারখানার বর্জ্য নদীতে গিয়ে পড়ছে। এটি বন্ধ না করলে বুড়িগঙ্গাকে বাঁচানো যাবে না। এক্ষেত্রে তিনি ট্যানারি শিল্প থেকে নিসৃত বর্জ্যের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমাদের অনেক সমস্যা আছে। এসব সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। সীমাহীন সম্ভাবনার এ দেশকে এগিয়ে নিতে আমাদের আত্মত্যাগও করতে হবে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ অসম্ভব সম্ভাবনার দেশ। একথা সত্য যে, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার জন্য আমরা আমাদের সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারিনি। শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করার মাধ্যমেই দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর না হলে একটি থমথমে ভাবের মধ্যে বিনিয়োগকারী এবং দাতারা বসে থাকে। এটি দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে।
বন বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দাবীর প্রেক্ষিতে মন্ত্রী বলেন, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় থেকে যে রাজস্ব আদায় হয় তা দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো যায়। কিন্তু সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব বলেন, বন প্রহরীরা অনেক দুর্গম এলাকায় কাজ করেন। তাদের জীবনের ঝুঁকি বেশি। এজন্য তাদের ঝুঁকিভাতা দেয়া যেতে পারে। এছাড়া তিনি দখল হয়ে যাওয়া বন বিভাগের জমি উদ্ধারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানান।
প্রধান বন সংরক্ষক ইউনুছ আলী বলেন, সরকারের বিভিন্ন বিভাগের সমন্বয়হীনতার কারণে বন বিভাগের অনেক জমি দখল হয়ে যাচ্ছে। দখল হয়ে যাওয়া এসব জমি উদ্ধারের ব্যবস্থা করেত হবে।
বন কর্ম নির্বাহী সমিতির সভাপতি ফরেস্ট রেঞ্জার মো: মোক্তারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বন প্রহরী কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবদুল হাই, বন কর্ম নির্বাহী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান।