রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর পোশাকখাতের উন্নয়নে গৃহীত ৩১ শতাংশ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) পরিচালিত গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে টিআইবি এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। রানা প্লাজা ধসের বর্ষপূর্তিকে সামনে রেখে এ গবেষণা পরিচালনা করে সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর গত এক বছরে এই খাতের সার্বিক উন্নয়নে ছোট-বড় মিলিয়ে ৫৪টি বিষয়ে শতাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছিল। এসব উদ্যোগের ৯১ শতাংশ ক্ষেত্রে অগ্রগতি সম্পন্ন অথবা চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ৩১ ভাগ ক্ষেত্রে গৃহীত উদ্যোগ বাস্তবায়ন হয়েছে এবং ৬০ ভাগ ক্ষেত্রে কমবেশি অগ্রগতি হয়েছে। আর বাদবাকী ৯ ভাগ উদ্যোগের ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
‘তেরি পোশাকখাতে সুশাসন: প্রতিশ্রুতি ও অগ্রগতি’ শীর্ষক এই গবেষণা কর্মের ফলোআপ প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন টিআইবির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ড. শরীফ আহমদ চৌধুরী ও সহকারী প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাজমুল হুদা মিনা। গার্মেন্টস খাতের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের আলাদা মন্ত্রণালয় না হওয়া পর্যন্ত ‘তৈরি পোশাকখাত সুশাসন কর্তৃপক্ষ’ গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয় প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন, বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় এই অগ্রগতি ইতিবাচক। তবে তিনি বলেন, এর মধ্যেও অনেক উদ্বেগের জায়গা রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও নিহতদের সব পরিবার ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করতেই হবে। তবে তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর একজন প্রভাবশালী রাষ্ট্রদূত বলেছিলেন তার দেশের জনগণ এদেশের শ্রমিকদের রক্তমাখা পোশাক কিনবে না। কিন্তু সেই অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসেছি।
সংস্থাটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে অগ্রগতি হলেও মৌলিক জায়গায় অগ্রগতি আটকে আছে। ওই সব জায়গায় ইতিবাচক অগ্রগতি না হলে দীর্ঘমেয়াদী সুফল আসবে না।’
প্রতিবেদনে গার্মেন্টস খাতে এখনো বেশকিছু ত্রুটি তুলে ধরা হয়। ট্রেড ইউনিয়নের উদ্যোক্তাদের সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে চাকরিচ্যুত করা, ইউডি (ইউটিলিটি ডিক্লারেশন) প্রদানের কর্তৃত্ব বিজিএমইএর কাছে থাকা, মজুরি বাড়ানোর ক্ষেত্রে মালিকপক্ষের স্বার্থকে গুরুত্ব দেয়ায় টিআইবির পক্ষ থেকে হতাশা প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শ্রম আইনের সংশোধন, গার্মেন্টস খাতের শ্রমিকদের ন্যুনতম মজুরি বৃদ্ধি, জাতীয় ত্রিপক্ষীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন, কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় নীতি প্রণয়ন, কলকারখানা পরিদপ্তরকে অধিদপ্তরে রূপান্তর, ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন অনলাইনে গ্রহণের মত উদ্যোগের বাস্তবায়ন হয়েছে। অন্যদিকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কার্যক্রম বিকেন্দ্রীকরণ, শ্রম নীতিমালা, পরিদর্শন নীতিমালা, নিরাপত্তা ঝুঁকি ও ট্রেড ইউনিয়নের কার্যক্রম বিষয়ক হটলাইন স্থাপনের মত উদ্যোগ অগ্রগতি হয়েছে।
তবে শ্রমিকদের অপর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ, বিজিএমইএ’র সরকারি কর্তৃত্ব চর্চা, রানা প্লাজা ধসের দায়ীদের বিরুদ্ধে তদন্ত, পরিচয়পত্রে যোগাযোগের ঠিকানা ও মোবাইল ফোন নম্বর না থাকার মত বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।