পশ্চিমের স্কুলগামী শিশুরা মেধায় এবং শিক্ষাগত দক্ষতায় এশীয় শিশুদের চেয়ে প্রায় তিন বছর পিছিয়ে রয়েছে। এশিয়ার শিক্ষা ব্যবস্থার একা একটা বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।
গত শুক্রবার অস্ট্রেলিয়া ভিত্তিক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান দ্য গ্রাটান ইনস্টিটিউটের এক প্রতিবেদনে এমন পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির এক জরিপে দেখা গেছে, সাড়া বিশ্বে শিক্ষাদান ও অর্জনের ক্ষেত্রে চোখে পড়ার মতো কৃতিত্ব দেখিয়েছে পূর্ব এশিয়া। এর মধ্যে শীর্ষ চারে রয়েছে- হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, শাংহাই এবং সিংগাপুর।
গ্রাটানের স্কুল এডুকেশন প্রোগ্রামের পরিচালক বেন জেনসেন বলেছেন, ‘শাংহাইয়ে গড় ১৫ বছর বয়সী গণিতের শিক্ষার্থীরা একই বয়সী অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের শিশুদের চেয়ে মেধায় দুই থেকে তিন ধাপ এগিয়ে আছে।’
তিনি বলেন, ‘এর পরিণতিটা খুব গভীর। এখন অর্থনৈতিক শক্তি পশ্চিম থেকে পূর্বে স্থানান্তরিত হচ্ছে তেমনি শিক্ষায় দক্ষতার কৃতিত্বও তাদের হাতে চলে যাচ্ছে।’
তিনি জানান, পড়তে পারার ক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়ার শিশুরা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের শিশুদের চেয়ে এক বছর এবং অস্ট্রেলীয় শিশুদের চেয়ে সাত মাস এগিয়ে রয়েছে।
প্রোগ্রাম ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন অ্যাসেসমেন্টের (পিআইএসএ বা পিসা) উপাত্ত থেকে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
পিসা অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং উন্নয়ন বিষয়ক প্যারিস ভিত্তিক একটি সংগঠন। শিক্ষার আন্তর্জাতিক মান নির্ধারণে একটি নির্ভরযোগ্য সূচক ধরা হয় একে।
জেনসেন জানান, অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে অনেকে স্কুলের জন্য বেশি বেশি তহবিল বরাদ্দ দিয়ে গেছে। কিন্তু এই পদেক্ষপ প্রায়ই হতাশাজনক ফলাফল দিয়েছে। আর ভাল ফলাফলের জন্য বেশি বেশি অর্থ খরচই সব সময় মুখ্য ভূমিকা রাখেনি।
উদাহরণ হিসেবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অস্ট্রেলিয়ার স্কুলগুলোতে প্রচুর অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে কিন্তু তাতে তাদের শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বরং কমেছে। অথচ দক্ষিণ কোরিয়া ওইসিডি’র তুলনায় গড়ে অনেক কম অর্থ ব্যয় করা সত্ত্বেও একই সময়ে শিক্ষার্থীদের জন্য মাথাপিছু ব্যয় বৃদ্ধি বন্ধ করে দিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ‘তাদের এই সাফল্যের জন্য সংস্কৃতি, কনফুসিয়াসের দর্শন, মুখস্থ বিদ্যা বা তথাকথিত ‘বাঘিনী মাতা’র কোনো প্রভাব নেই। এর জন্য মূলত চীনা নৃগোষ্ঠীর বাবা-মায়ের অবদান রয়েছে যারা সন্তানদের সাফল্যের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন।’
আরো বলা হয়েছে, হংকং এবং সিংগাপুরের শিশুরা গত কয়েক দশকে পড়তে পারার দক্ষতায় ব্যাপক উন্নতি করেছে। আর এই দক্ষতা কিন্তু শুধু মুখস্থ বিদ্যার ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়নি বরং এই জ্ঞান তারা সমস্যা সমাধানেও দক্ষতার সাথে কাজে লাগাতে পারে।
আর এশীয় শিশুদের এই দক্ষতা বৃদ্ধির রহস্য রয়েছে বাস্তবভিত্তিক জ্ঞানদান প্রক্রিয়ার মধ্যে। কঠোর পরিশ্রম, শিক্ষায় প্রায়োগিকতার দিকে গুরুত্বারোপ, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, পর্যবেক্ষণ, মূল্যায়ন এবং পেশাগত উন্নয়ন- এসব বিষয় এই সফলতার পেছনের প্রধান কারণ, এখানে স্কুলে ব্যয় বৃদ্ধির কোনো ভূমিকা নেই।