দুই-এক দিনের মধ্যে সাঈদীর রায়, উদ্বিগ্ন জামায়াত

দুই-এক দিনের মধ্যে সাঈদীর রায়, উদ্বিগ্ন জামায়াত

jamat log0মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত  জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিল ভিবাগের রায় নিয়ে উদ্বিগ্ন দলটির নেতাকর্মীরা।  রায়ে ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদন্ড বহাল থাকার আশঙ্কা করছেন জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতারা।  শুধু দলটির নেতারাই নয়, দেশের সকল স্তরের মানুষও সাঈদীর রায় নিয়ে ভাবছেন।

বুধবার দলের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমদ গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠিয়েছিলেন তাতে উদ্বিগ্নতার বিষয়টি ফুটে উঠেছে। 

শুক্রবার বিকেলে মিরসরাইয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের বক্তব্যে এই চিন্তা আরো বেড়েছে। তিনি একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বলেছেন, “মিরসরাইসহ দেশকে কলঙ্কমুক্ত করতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ চলছে। আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় হবে।”

জামায়াতে ইসলামীর ওই বিবৃতিতে মকবুল আহমদ গভীর আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, “মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে ‘সরকারের ষড়যন্ত্র ও নীলনকশা’ বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে।”

বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে দাবি করা হয়, “রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল স্বপ্রণোদিত হয়ে পিরোজপুর ও বরিশালে মামলার নথিপত্র খোঁজাখুঁজির জন্য যান। তার এই দৌড়ঝাঁপ থেকে প্রতীয়মান হয়, সরকার প্রকৃত সত্য ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।”

ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় এক নেতা বলেন, “আমরা এ বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত। স্পষ্ট করে কিছুই বলতে পারছি না কী হবে। সরকার শিগগিরই রায় দেবে কি দেবে না তা বুঝে উঠতে পারছি না “
 
তিনি বলেন  “যদি আপিলে ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকলে রায়-পরবর্তী সময়ে দলীয়ভাবেই কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখানো হবে। ইতিমধ্যে এর প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।  এ বিষয়ে সারা দেশে নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।”

সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকেও রায়ের প্রতিক্রিয়া দেখানোর প্রচারণা শুরু করেছে দলটির নেতাকর্মীরা। ফেসবুকের বিভিন্ন পেইজে দেখা গেছে, “বগুড়া, জয়পুরহাট, দিনাজপুরসহ আরো বেশ কয়েকটি জেলা শহরের নাম নিয়ে পোস্টার ছাপানো হয়েছে। সেখানে লেখা রয়েছে-“যশোর জামায়াত-শিবির প্রস্তুত, আপনি আপনার এলাকাতে প্রস্তুত তো?  সিলেট জামায়াত শিবির প্রস্তুত, আপনি আপনার এলাকাতে প্রস্তুত তো? ঝাড়ু এবং লাঠি হাতে সারা দেশে আমাদের মা বোনরা প্রস্তুত এই জালিম সরকারকে বিদায় করতে।”

সূত্র জানায়, সাঈদীর আপিল রায়ের পর জামায়াত নানা ধরনের কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি রাখছে। একইসঙ্গে দলটি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের পক্ষ থেকেও সরকারবিরোধী আন্দোলনে নামার জন্য পরামর্শ দিচ্ছে। জামায়াতের পরিকল্পনা ঠিকমতো এগোলে আবারও উত্তপ্ত হতে পারে সারা দেশ। দীর্ঘদিন নীরব থাকার পর বুধবারই বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে শক্তির জানান দেয় দলটি। এদিন বিক্ষোভের সময় ঢাকা ও ঢাকার বাইরে একাধিক স্থানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষও হয়।

গত কয়েক মাস ধরে সারা দেশে দল গোছানোর জোর তৎপরতা চালানো হচ্ছে। এরই মধ্যে কয়েক দফা সাংগঠনিক ও দাওয়াতি পক্ষ পালন করেছে দলটি। গোপনে চলছে সাংগঠনিক সব কার্যক্রম। গ্রেফতার আতঙ্ক উপেক্ষা করে এসব কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছেন আত্মগোপনে থাকা নেতারা।

জামায়াতে ইসলামীর একটি সূত্র জানিয়েছে, “সরকারের সঙ্গে এখন আর সমঝোতার সুযোগ নেই। সমঝোতার সুযোগ আবদুল কাদের মোল্লার রায় কার্যকরের আগে ছিল। এখন আর সেটা নেই। এখন যা হবে তা রাজপথেই হবে।”

ওই সূত্র আরো বলেন, “বিভিন্ন গণমাধ্যমে সমঝোতার সংবাদ দেখা যাচ্ছে।  আবার রাজ্জাক সাহেব নাকি এই সমন্বয়ের কাজ করছেন। এই সংবাদের ভিত্তি কতটুকু জানি না। তবে দলের সিদ্ধান্ত হচ্ছে-জোটে থেকে কঠোর আন্দোলন করা হবে। শুধু রাজপথের আন্দোলন হলেই চলবে না। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের একটি সমর্থনও লাগবে। এজন্য দলের বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ চলছে সরকারের এই অন্যায় আচরণ ও জুলুম নির্যাতনকে আন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরতে।”

সম্ভাব্য কর্মসূচি প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মহানগর জামায়াতের এক নেতা বলেন, “হরতাল-বিক্ষোভ স্বাভাবিক ব্যাপার। এর চেয়েও কঠোর কর্মসূচি ঘোষিত হতে পারে। ”

রাজনীতি শীর্ষ খবর